গোলটেবিল বৈঠকে আকবর আলি খান- শুধু তত্ত্বাবধায়ক চালু হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না
‘শুধু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকেও স্বচ্ছ করতে হবে। কারণ, রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে একজন জেলা প্রশাসকও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাঁর হেফাজতে ব্যালট বাক্স রাখলে পরের দিন শুনব যে ব্যালট বাক্সে পরিবর্তন হয়নি।’
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল শনিবার এ কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান।আকবর আলি খান বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ না করে শুধু নির্দলীয় সরকার ফিরিয়ে আনলে চলবে না। কারণ, প্রশাসনে অবক্ষয় ঘটেছে। জেলা প্রশাসকদের হাতে ব্যালট বাক্স নিরাপদ নয়। স্বচ্ছতার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ভোটকেন্দ্রের তালিকা নির্বাচনের ছয় মাস আগে প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে এবং তা যৌক্তিক বিবেচিত হলে সেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পাওয়ার কারণ হিসেবে আকবর আলি খান বলেন, রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা একটি অফিসে সীমাবদ্ধ। শাসনব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত। রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রচর্চা নেই। যে কারণে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার পথে। এ সমস্যার সমাধান দলগুলোকেই করতে হবে। কারণ, সমস্যা তারা তৈরি করেছে। আর তারা যদি তা না করে, তবে এ বিষয়ে তৃণমূলে জনমত তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ‘সমকালীন বাংলাদেশের রাজনীতি: প্রধান সংকট ও উত্তরণ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসান মোহাম্মদ। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা কখনো জয়লাভ করেনি। এই সমীকরণ থেকেই আওয়ামী লীগ নিজেদের পরাজয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। নির্বাচন কমিশন নয়, সরকারই নির্বাচন পরিচালনার মূল নিয়ন্ত্রক। তাই সংকট নিরসনে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘রাজনৈতিক চিন্তায় আমরা প্রাগৈতিহাসিক। এখানে কতিপয় সিন্ডিকেট দেশ পরিচালনার নামে লুণ্ঠন করে যাচ্ছে। এরা বিচারব্যবস্থা ও নাগরিকের নিরাপত্তায় বিশ্বাস করে না। এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা নয়, রাজনীতিই প্রধান সমস্যা।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হায়দার আলী, সাংবাদিক সাদেক খান, মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রমুখ।
No comments