শরণখোলার মেয়েটির অবস্থা ভালো নয়
বাগেরহাটের শরণখোলায় নিগৃহীত, পরে গর্ভপাতের শিকার মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে গতকাল। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন মেয়েটির কয়েকটি ডাক্তারি পরীক্ষার পর এই উদ্বেগজনক তথ্য জানান চিকিৎসকরা।
শনিবার রাতে নির্যাতিতার জরায়ুতে প্রথম দফা অস্ত্রোপচার হয়। রবিবার ভোরে জ্ঞান ফেরে তার। এরপর ক্ষীণ কণ্ঠে মেয়েটি কিছু কিছু কথা বলছে। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তার একই স্থানে আরেক দফা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে অর্থাভাবে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েটির চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ওষুধ-পথ্য কেনার পরিস্থিতি নেই তার স্বজনদের। আর ঘটনার ৯ দিন পরও ধর্ষক দেলোয়ার হোসেন তালুকদারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি শরণখোলা থানা পুলিশ। গতকালও এ নির্যাতনের বিচারের দাবিতে বাগেরহাটের বিভিন্ন নারী ও সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন করেছে।
গতকাল রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় পাশবিক নির্যাতনের শিকার মেয়েটির মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, শনিবার রাতে থেকে ডাক্তাররা যত্নের সঙ্গে মেয়েটির চিকিৎসা করছেন। একটি অপারেশন হয়েছে। আরেকটি হওয়ার কথা। শনিবার সারা রাতই মেয়ে তাঁর সংজ্ঞাহীন ছিল। এখন আস্তে আস্তে কথা বলতে পারছে। ঢাকায় এসে ভীষণ অর্থ সংকটে পড়েছেন বলে জানান তিনি। মেয়ের পাশে বসে কাঁদছিলেন মা।
কিশোরীর মামাতো ভাই এস এম শাহ আলম বলেন, 'মেয়েটির চিকিৎসা খরচ জোগাতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।' আসামিরা অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। ফলে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। রোটারি ক্লাব ঢাকা কিছু আর্থিক অনুদান দিয়েছে।
এদিকে কিশোরীর ধর্ষণ ও গর্ভপাত মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার ৯ দিন পরও অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন তালুকদারকে ধরা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, তাদের অভিযান চলছে। আর ঘটনার মোড় ঘোরাতে মাঠে নেমেছে দেলোয়ারের সহযোগীরা। তারা কিছুসংখ্যক সাংবাদিককে ঘটনার ভিন্ন বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদন করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আসামি ধরতে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টাই চলছে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে।'
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শরণখোলা থানার এসআই জগন্নাথ চন্দ্র জানান, দেলোয়ারকে ধরতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চলছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল এ কর্তাদের কথার সঙ্গে একমত নন মেয়েটির নিকটাত্মীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদেরই একজন জানান, ধর্ষককে বাঁচাতে তার সহযোগীরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আর পুলিশ দেলোয়ারকে খুঁজলেও তাদের কিছু বলছে না। তারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে মামলা মিটে গেলে কিশোরীর পরিবারকে দেখে নেবে বলে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাতেও ভয় পাচ্ছে।
গত শুক্রবার বিকেলে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান মেয়েটিকে দেখতে যান। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তত্ত্বাবধানে মেয়েটিকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও বর্তমানে গাইনি বিভাগে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডা. ইফাত আরার তত্ত্বাবধানে এখন তার চিকিৎসা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মৃত রাশেদ তালুকদারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন তালুকদার (৫০) ওই কিশোরী স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অভিযুক্ত গত ১২ ডিসেম্বর হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে জোর করে মেয়েটির গর্ভপাত ঘটায়। এর পর থেকে দেড় মাস ধরে কিশোরীর রক্তক্ষরণ হওয়ার এক পর্যায়ে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিচারের দাবিতে মানববন্ধন : গতকাল সকালে বাগেরহাট জেলা মহিলা পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা ধর্ষক দেলোয়ার হোসেন তালুকদারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে কালের কণ্ঠে ধারাবাহিকভাবে এসব খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নির্যাতিত মেয়েটির চিকিৎসার ব্যাপারে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নড়েচড়ে বসেছেন।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষকদের বিচার দাবি : জেলায় জেলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করাসহ নানা দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত কমিটির সাধারণ সভায় এসব দাবি জানানো হয়। চলতি মাসেই চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জে ধর্ষণ এবং গাজীপুরে তিন নারীকে গণপিটুনি ও গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিটি এসব দাবি জানায়।
অন্য দাবিগুলো হলো ধর্ষকদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা; ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা; নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ না দিতে বলে ধর্ষককেই নির্দোষের প্রমাণ দিতে বলা; নির্যাতনের শিকার নারী ও তাঁর পরিবারকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তাদান এবং এ বিষয়ে সালিস বন্ধ করা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সমন্বয়ক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, নিজেরা করির নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সদস্য মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।
গতকাল রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় পাশবিক নির্যাতনের শিকার মেয়েটির মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, শনিবার রাতে থেকে ডাক্তাররা যত্নের সঙ্গে মেয়েটির চিকিৎসা করছেন। একটি অপারেশন হয়েছে। আরেকটি হওয়ার কথা। শনিবার সারা রাতই মেয়ে তাঁর সংজ্ঞাহীন ছিল। এখন আস্তে আস্তে কথা বলতে পারছে। ঢাকায় এসে ভীষণ অর্থ সংকটে পড়েছেন বলে জানান তিনি। মেয়ের পাশে বসে কাঁদছিলেন মা।
কিশোরীর মামাতো ভাই এস এম শাহ আলম বলেন, 'মেয়েটির চিকিৎসা খরচ জোগাতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।' আসামিরা অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। ফলে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। রোটারি ক্লাব ঢাকা কিছু আর্থিক অনুদান দিয়েছে।
এদিকে কিশোরীর ধর্ষণ ও গর্ভপাত মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার ৯ দিন পরও অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন তালুকদারকে ধরা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, তাদের অভিযান চলছে। আর ঘটনার মোড় ঘোরাতে মাঠে নেমেছে দেলোয়ারের সহযোগীরা। তারা কিছুসংখ্যক সাংবাদিককে ঘটনার ভিন্ন বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদন করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আসামি ধরতে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টাই চলছে। এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে।'
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শরণখোলা থানার এসআই জগন্নাথ চন্দ্র জানান, দেলোয়ারকে ধরতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চলছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল এ কর্তাদের কথার সঙ্গে একমত নন মেয়েটির নিকটাত্মীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদেরই একজন জানান, ধর্ষককে বাঁচাতে তার সহযোগীরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আর পুলিশ দেলোয়ারকে খুঁজলেও তাদের কিছু বলছে না। তারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে মামলা মিটে গেলে কিশোরীর পরিবারকে দেখে নেবে বলে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাতেও ভয় পাচ্ছে।
গত শুক্রবার বিকেলে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান মেয়েটিকে দেখতে যান। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তত্ত্বাবধানে মেয়েটিকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও বর্তমানে গাইনি বিভাগে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডা. ইফাত আরার তত্ত্বাবধানে এখন তার চিকিৎসা চলছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মৃত রাশেদ তালুকদারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন তালুকদার (৫০) ওই কিশোরী স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে অভিযুক্ত গত ১২ ডিসেম্বর হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে জোর করে মেয়েটির গর্ভপাত ঘটায়। এর পর থেকে দেড় মাস ধরে কিশোরীর রক্তক্ষরণ হওয়ার এক পর্যায়ে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিচারের দাবিতে মানববন্ধন : গতকাল সকালে বাগেরহাট জেলা মহিলা পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা ধর্ষক দেলোয়ার হোসেন তালুকদারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে কালের কণ্ঠে ধারাবাহিকভাবে এসব খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নির্যাতিত মেয়েটির চিকিৎসার ব্যাপারে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নড়েচড়ে বসেছেন।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষকদের বিচার দাবি : জেলায় জেলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করাসহ নানা দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত কমিটির সাধারণ সভায় এসব দাবি জানানো হয়। চলতি মাসেই চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জে ধর্ষণ এবং গাজীপুরে তিন নারীকে গণপিটুনি ও গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিটি এসব দাবি জানায়।
অন্য দাবিগুলো হলো ধর্ষকদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা; ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা; নারীকে ধর্ষণের প্রমাণ না দিতে বলে ধর্ষককেই নির্দোষের প্রমাণ দিতে বলা; নির্যাতনের শিকার নারী ও তাঁর পরিবারকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তাদান এবং এ বিষয়ে সালিস বন্ধ করা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সমন্বয়ক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, নিজেরা করির নির্বাহী পরিচালক খুশী কবির, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সদস্য মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।
No comments