ধানের দাম কম, এক কোটি বোরো চাষি বিপদে by ইফতেখার মাহমুদ
হাওরে বোরো কাটা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সর্বত্র এখন সোনালি ধানের ম-ম গন্ধ। বোরো মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির আশীর্বাদ আর ধান কাটার সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসমুক্ত প্রকৃতির কৃপায় বোরোতে এবার বাম্পার ফলন হবে, এমনটা আশা সরকার-কৃষক সবার।
কিন্তু মাঠের খুশি ধান-চালের বাজারে এসে উবে যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতেই পড়তি দামের তেতো অভিজ্ঞতা পেতে শুরু করেছেন কৃষক। বিশেষত, এক কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক আছেন বেশি বিপদে। নিজের সামান্য জমির সঙ্গে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষ করেন তাঁরা। সার-বীজ-পানি সবকিছু কিনে জমিতে বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা। পরিবারের প্রায় সব সদস্যের শ্রম যোগ করে ফলিয়েছেন সোনার ফসল। কিন্তু নতুন ধান কেটে বাজারে নিয়ে দেখেন, উৎপাদন খরচ উঠছে না।
চলতি অর্থবছরের অন্য ফসলেও কৃষক ন্যায্য মূল্য পাননি। প্রথমে আমন, তারপর আলু, পেঁয়াজ, সবজি—সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের হিসাবে, হাওর অঞ্চলে প্রায় ২০ শতাংশ ও সারা দেশে প্রায় ৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। ময়মনসিংহ, শেরপুর, সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় প্রতি মণ ধানের দাম এখন ৪০০ টাকার মতো। বোরো যত বেশি কাটা শুরু হবে, ধানের দাম তত কমতে থাকে। লাভের আশায় ধান বুনে চোখের সামনে এই দর দেখে হতাশ হয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন কৃষক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, এ বছর ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। সরকারি গুদামে চালের মজুদ আছে প্রায় ১০ লাখ টন। মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের হাতে রয়ে গেছে আরও প্রায় ৪০ লাখ টন চাল। বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হলে ধান-চালের দাম আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট কৃষি শ্রমিকদের মজুরি গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সার, ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে জমি ইজারার বাড়তি মূল্য। সরকারি সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় বোরোতে উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর ধান-চালের দাম এখন গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৫৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮০ টাকা। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি মণ বোরো ধান ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যতিক্রম শুধু চালের দাম। গত এক বছরে সব ধরনের চালের দাম প্রায় ১১ শতাংশ কমেছে। প্রতি কেজি মোটা চাল ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
২০০৮ সালের সর্বশেষ কৃষিশুমারি অনুযায়ী, দেশের এক কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। সাধারণত বছরের শুরুতে তাঁরা উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক বিক্রি করে কৃষি উপকরণের দাম শোধ করে থাকেন। মানে, যখন দাম কম থাকে তখন তাঁদের ধান বিক্রি করে দিতে হয়। পরে বছরের শেষ দিকে গোলার ফসল শেষ হলে তাঁরা আবার বাজার থেকে চাল কিনে খান। তখন চালের দাম সবচেয়ে বেশি থাকে। ধানের দাম কমে আসায় ওই এক কোটি ক্ষুদ্র কৃষক ও তাঁদের পরিবারের পাঁচ কোটি সদস্য বিপদে পড়বেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ধানের ন্যায্য মূল্যের সঙ্গে এক কোটি প্রান্তিক কৃষকের খাদ্যনিরাপত্তা যুক্ত। তাঁরা লোকসানে ধান বিক্রি করেন। আবার বেশি দামে চাল কিনে খেলে তাঁদের খাদ্য বাজেটের বড় অংশ শুধু চাল কেনা বাবদ চলে যায়। ফলে অন্য পুষ্টিকর খাদ্যের পেছনে তাঁদের ব্যয়ের সামর্থ্য কমে আসে। এতে তাঁদের পুষ্টিহীনতা আরও বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে প্রান্তিক চাষিদের রক্ষা করতে হলে সরকারের উচিত অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন ধান-চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া। চাহিদার তুলনায় চালের পরিমাণ বেশি থাকলে স্বল্প মেয়াদে রপ্তানির অনুমোদনও দেওয়া যেতে পারে। এতে বিদেশি মুদ্রা আসার পাশাপাশি চালের দাম কিছুটা বেড়ে কৃষক লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী মাসের শুরুতে ধান-চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্তের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কত টাকা কেজি দরে কী পরিমাণে ধান-চাল কেনা হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কৃষি মজুরি ও জমির ইজারা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) চলতি বোরো মৌসুমের উৎপাদন খরচের একটি হিসাব তৈরি করেছে। ওই হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছর বোরোতে এক কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৭ টাকা ১৩ পয়সা আর চালের খরচ পড়েছে ২৫ টাকা ৩২ পয়সা। গত বছর প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ১৫ টাকা ৪৭ পয়সা করে খরচ পড়েছিল। গত বছর কৃষি শ্রমিকের এক দিনের গড় মজুরি ছিল ২০০ টাকা। এ বছর তা ৫০ টাকা বেড়ে ২৫০ হয়েছে। জমির ইজারা বাবদ খরচও প্রতি একরে ৫০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০০০। প্রতি একর জমির জন্য সেচ বাবদ খরচও ৫৫০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫০০ টাকা। সার বাবদ খরচ অবশ্য ৫৩৫০ থেকে কমে হয়েছে ৫১২৫ টাকা।
চলতি অর্থবছরের অন্য ফসলেও কৃষক ন্যায্য মূল্য পাননি। প্রথমে আমন, তারপর আলু, পেঁয়াজ, সবজি—সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ সেবা বিভাগের হিসাবে, হাওর অঞ্চলে প্রায় ২০ শতাংশ ও সারা দেশে প্রায় ৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। ময়মনসিংহ, শেরপুর, সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় প্রতি মণ ধানের দাম এখন ৪০০ টাকার মতো। বোরো যত বেশি কাটা শুরু হবে, ধানের দাম তত কমতে থাকে। লাভের আশায় ধান বুনে চোখের সামনে এই দর দেখে হতাশ হয়ে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন কৃষক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, এ বছর ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। সরকারি গুদামে চালের মজুদ আছে প্রায় ১০ লাখ টন। মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের হাতে রয়ে গেছে আরও প্রায় ৪০ লাখ টন চাল। বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হলে ধান-চালের দাম আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট কৃষি শ্রমিকদের মজুরি গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সার, ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে জমি ইজারার বাড়তি মূল্য। সরকারি সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় বোরোতে উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর ধান-চালের দাম এখন গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৫৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮০ টাকা। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি মণ বোরো ধান ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যতিক্রম শুধু চালের দাম। গত এক বছরে সব ধরনের চালের দাম প্রায় ১১ শতাংশ কমেছে। প্রতি কেজি মোটা চাল ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
২০০৮ সালের সর্বশেষ কৃষিশুমারি অনুযায়ী, দেশের এক কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। সাধারণত বছরের শুরুতে তাঁরা উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক বিক্রি করে কৃষি উপকরণের দাম শোধ করে থাকেন। মানে, যখন দাম কম থাকে তখন তাঁদের ধান বিক্রি করে দিতে হয়। পরে বছরের শেষ দিকে গোলার ফসল শেষ হলে তাঁরা আবার বাজার থেকে চাল কিনে খান। তখন চালের দাম সবচেয়ে বেশি থাকে। ধানের দাম কমে আসায় ওই এক কোটি ক্ষুদ্র কৃষক ও তাঁদের পরিবারের পাঁচ কোটি সদস্য বিপদে পড়বেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ধানের ন্যায্য মূল্যের সঙ্গে এক কোটি প্রান্তিক কৃষকের খাদ্যনিরাপত্তা যুক্ত। তাঁরা লোকসানে ধান বিক্রি করেন। আবার বেশি দামে চাল কিনে খেলে তাঁদের খাদ্য বাজেটের বড় অংশ শুধু চাল কেনা বাবদ চলে যায়। ফলে অন্য পুষ্টিকর খাদ্যের পেছনে তাঁদের ব্যয়ের সামর্থ্য কমে আসে। এতে তাঁদের পুষ্টিহীনতা আরও বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে প্রান্তিক চাষিদের রক্ষা করতে হলে সরকারের উচিত অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন ধান-চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া। চাহিদার তুলনায় চালের পরিমাণ বেশি থাকলে স্বল্প মেয়াদে রপ্তানির অনুমোদনও দেওয়া যেতে পারে। এতে বিদেশি মুদ্রা আসার পাশাপাশি চালের দাম কিছুটা বেড়ে কৃষক লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী মাসের শুরুতে ধান-চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্তের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কত টাকা কেজি দরে কী পরিমাণে ধান-চাল কেনা হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কৃষি মজুরি ও জমির ইজারা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) চলতি বোরো মৌসুমের উৎপাদন খরচের একটি হিসাব তৈরি করেছে। ওই হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছর বোরোতে এক কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৭ টাকা ১৩ পয়সা আর চালের খরচ পড়েছে ২৫ টাকা ৩২ পয়সা। গত বছর প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ১৫ টাকা ৪৭ পয়সা করে খরচ পড়েছিল। গত বছর কৃষি শ্রমিকের এক দিনের গড় মজুরি ছিল ২০০ টাকা। এ বছর তা ৫০ টাকা বেড়ে ২৫০ হয়েছে। জমির ইজারা বাবদ খরচও প্রতি একরে ৫০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬০০০। প্রতি একর জমির জন্য সেচ বাবদ খরচও ৫৫০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫০০ টাকা। সার বাবদ খরচ অবশ্য ৫৩৫০ থেকে কমে হয়েছে ৫১২৫ টাকা।
No comments