বইমেলা প্রতিদিন
প্রযুক্তির ভাল-মন্দ দু'দিকই আছে। এর
কল্যাণের দিকটি হলো (ডিস চ্যানেল) এর বদৌলতে দু'ধরনের খবরই এখন মুহূর্তের
মধ্যে পৌঁছে যায় মানুষের ঘরে। এতে ঘরে বসেই বিশ্বকে জানতে পারছে মানুষ।
কোন বিষয়ে সিদ্ধানত্ম নিতেও সহজ হচ্ছে তাঁর। এর অনেক মন্দ দিকও আছে, সে
দিকে নাই-বা গেলাম। কল্যাণের দিকটির কারণেই বুধবার অমর একুশের বইমেলায়
আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। ঘটনাটা একটু খুলেই বলি, এদিন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক হাসপাতালে মারা
যায়। ছাত্রলীগের অনত্মর্কলহের কারণেই আগের দিন (মঙ্গলবার) গুরম্নতর আহত
অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। বুধবার তাঁর মৃতু্য হয়। এ মৃতু্যকে
ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ
করে। মিডিয়ার কল্যাণে দুপুরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ থমথমে অবস্থার খবর
জেনে যায় ঢাকাবাসী। ফলে এর প্রভাব পড়ে বইমেলার ওপর। অতি সাবধানী মানুষগুলো
এদিন আর মেলায় আসেনি। তবে মেলা যে একেবারে সুনসান নীরব গেছে তাও নয়,
পাঠকের চেয়ে এদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। এরা স্টল ঘুরে দেখেছেন
বেশি, বই কিনেছেন কম। মেলার অনিয়মগুলো এদিনও লৰ্য করা গেছে। এক প্রকাশকের
বই অন্য প্রকাশকের স্টলে বিক্রি হচ্ছে। এখনও ২০টির মতো স্টল বসতেই পারেনি।
কোন কোন স্টলে কাজ চলছে, আবার কিছু স্টল একেবারেই ফাঁকা পড়ে আছে। এদিন নতুন
বই এসেছে ১০৩টি, তবে নজরম্নল মঞ্চে হয়নি কোন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের
অনুষ্ঠান। মেলাময় এদিন কিছুটা ফাঁকাভাবই বিরাজ করেছে।
এদিন মেলায় কথা হয় মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার মেলায় তাঁর বই এসেছে ১৪টি। এর মধ্যে আলোচিত বইটির নাম হলো পাকিসত্মানী জেনারেলদের মন বাঙালী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ। বইটি প্রসঙ্গে বলেন, এতে ২২/২৩ পাকিসত্মানী জেনারেলের আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে লেখা। বইটি আমি খুব খেটে করেছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি আমাদের দেশের রাজাকার ও তাঁদের মন-মানসিকতার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমার এখন ইচ্ছা বাংলাদেশের জেনারেলদের নিয়ে একটি বই লেখার। এটি লেখা হলে এ সম্পর্কিত আমার সিরিজ লেখা শেষ হবে।
মেলায় অনিয়ম
মেলার অনিয়মগুলোই যেন নিয়ম হয়ে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমী শুধু বড় বড় কথাই বলছে, কিন্তু অনিয়ম দূর করতে উদ্যোগী হচ্ছে না। মনে হয় কোথায় যেন তাদের হাত-পা বাঁধা। বাংলা একাডেমীর নীতিমালা অনুযায়ী মেলার প্রথম দিন থেকেই সব স্টলকেই পরিপাটিভাবে বই নিয়ে বসতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে স্টলের বরাদ্দ বাতিল করে দেবে একাডেমী। কিন্তু একাডেমী তা করছে না। যে স্টলগুলোতে এখনও টুকটাক কাজ চলছে, সেগুলো হলো প্রিতম-১০৯, লেখালেখি-১০৬, সূচয়নী-১৬৫, এএইচ ডেভেলপমেন্ট-২৪৭, উন্নয়ন অন্বেষণ-৩১৪, প্রতিশ্রম্নতি-১৯৯ ও নিউশিখা উলেস্নখযোগ্য। আর যেগুলো এখনও খালি আছে সেগুলো হলো ১৯২, ২০১, ২০৯, ২১১, ২১২, ২১৩, ২২২, ২২৬, ২২৭, ২৩৭ ও ২৩৮ নম্বরের স্টল। আবার জিনিয়াস পাবলিকেশনের এক কর্মী জানান, ৭৬ নম্বর স্টলটি তারা আজকে বরাদ্দ পেয়েছেন। এটা নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাডেমীর মহাপরিচালককে পাওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র অভিযোগ করে জানিয়েছেন, যে স্টলগুলোতে কাজ হচ্ছে এবং যেগুলো বন্ধ, সেসব স্টল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। এ রকম গোটা পঞ্চাশেক স্টল তাঁরা নিয়েছে। যেগুলো বিক্রি করতে পারেনি, সেগুলোর এ অবস্থা। এ কারণে একাডেমীও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। সড়কদ্বীপের বেশকিছু স্টলে নিজ প্রকাশনার বই ছাড়াও অন্য প্রকাশনার বইও বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, যে স্টলে এ কাজগুলো হচ্ছে সেগুলোও ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের।
নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৩টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপন্যাস ২৮টি, কবিতা ১৩টি, প্রবন্ধ ১০টি, ছড়ার বই ৫টি উলেস্নখযোগ্য। প্রকাশনার দিক দিয়ে আগামী ও বিদ্যা প্রকাশ থেকে এসেছে ৬টি করে বই। এদিনকার উলেস্নখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে জনকণ্ঠের সাংবাদিক মনিজা রহমানের অপ্সরার ওড়না, এটি তাঁর দ্বিতীয় বই, এনেছে জাগৃতি প্রকাশনী। প্রজ্ঞালোক এনেছে শানত্মনু চৌধুরীর কথা প্রসঙ্গে। গ্রন্থকানন এনেছে নূরম্নল ইসলাম মামুনের অলকানন্দা, আকরাম হোসেনের মুক্তির ঘাটে প্রেমসমাধি, আহসান হাবিবের কৃষ্ণ মেকু অন্যান্য ঢেকুর ও শাহজাহান আবদালির ইয়াহু ডট টু টেলাপাথি। মাওলা ব্রাদার্স এনেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কালেক্টেড ওয়ার্কস ভলিউয়াম-১ ও রচনাসমগ্র-১ এবং মুনতাসীর মামুনের বই ঢাকার স্মৃতি-৯ ও ১০। বিভাস এনেছে পদ্মনাভ অধিকারীর মহর্ষি লালন সাঁই। অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদের বাংলাদেশের রাজনীতি : যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও জঙ্গীবাদ-এর তৃতীয় ও চতুর্থ খ-। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর প্রবন্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালী জাতীয়তাবাদ এনেছে মিজান। উলেস্নখযোগ্যের মধ্যে আর অনন্যা এনেছে শাহরিয়ার কবিরের যুদ্ধাপরাধীদের পৰ-বিপৰ বইটি।
মেলার মূলমঞ্চে
বাংলা একাডেমী আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে আলোচনা অনুষ্ঠানে 'ভাষা আন্দোলনের তাত্তি্বক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭-১৯৫২' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম মুসত্মাফা। আলোচনায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক এ.টি.এম. নূরম্নর রহমান খান ও অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক গোলাম মুসত্মাফা বলেন, ভারতের জাতীয় নেতৃত্ব যখন ভাষা ও জাতিগত পার্থক্যকে মেনে নিয়ে 'বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য' গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন তখন পাকিসত্মানের শাসক ও নীতিনির্ধারকগণ এক ভাষানীতির পথ ধরে উর্দুকেই পাকিসত্মানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আরোপ করতে চাইলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালী মুসলমানের আত্মপরিচয়-সন্ধানের ইতিহাসটি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বাঙালী মুসলমানের এই আত্মপরিচয়-সন্ধানে দ্বিধা ছিল, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ দ্বিধাকে পাকিসত্মানী শাসকগোষ্ঠী তাদের পরিকল্পনার অনুকূলে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। চেয়েছিল বাঙালী জাতিসত্তা বিকাশের পথ রম্নদ্ধ করে তাদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ করতে। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম বাংলাদেশের জনগণ বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে তাদের গনত্মব্যপথ নির্ধারণ করে।
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলন দু'টি ভিন্ন কথা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে রাষ্ট্রের শক্তি থাকে আর সেজন্যই পরবতর্ীতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ পরিষদ গঠনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আবার যদি আমাদের ভাষার জন্য সংগ্রাম করতে হয় সেটা বিচিত্র কিছু নয় এবং সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।
অধ্যাপক এ.টি.এম. নূরম্নর রহমান খান বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনা মধ্যযুগেই শুরম্ন হয়েছিল। ধর্মান্ধতা মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে এ বোধ সাহিত্যে অধিকতর স্থান পায়। এরপর ক্রমান্বয়ে ভাষার প্রতি ধমর্ীয় গোঁড়ামির চেয়েও রাজনৈতিক অবজ্ঞা জোরাল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, বাংলা শুধু বাংলাদেশের ভাষা নয়; বাংলা ভাষাকে অনেকেই মুসলমানের ভাষা মনে করেন না। এটা তাদের কূপম-ুকতা। ভাষার বিষয়ে ধর্মের দিকটা না টানাই ভাল।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যনত্ম বিসত্মৃত হলেও এর পটভূমিকা অনেক পুরনো। ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে শুধু ভাষা নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও এর সাথে সমানভাবে আলোচনার দাবিদার। এ আন্দোলন নিম্নবর্গের মুক্তির আন্দোলন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা সংখ্যালঘুদের পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এটা শুধু ভাষাগত নয়, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পারিপাশ্বর্িকতার কারণে বাংলা ভাষা আজ পর্যদুসত্ম। বাঙালী জাতিসত্তার অসত্মিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে পারিপাশ্বর্িক প্রভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার, কল্যাণী ঘোষ, মাহমুদুজ্জামান বাবু, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নাদিয়া ফেরদৌস নিম্মী, জুলি শরমিলি এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ক্রানত্মি'। যন্ত্রাণুসঙ্গে ছিলেন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল, নাজমুল আলম খান, মোঃ নূরম্নজ্জামান বাদশা, গাজী আবদুল হাকিম ও ইফতেখার হোসেন সোহেল।
এদিন মেলায় কথা হয় মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার মেলায় তাঁর বই এসেছে ১৪টি। এর মধ্যে আলোচিত বইটির নাম হলো পাকিসত্মানী জেনারেলদের মন বাঙালী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ। বইটি প্রসঙ্গে বলেন, এতে ২২/২৩ পাকিসত্মানী জেনারেলের আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে লেখা। বইটি আমি খুব খেটে করেছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি আমাদের দেশের রাজাকার ও তাঁদের মন-মানসিকতার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমার এখন ইচ্ছা বাংলাদেশের জেনারেলদের নিয়ে একটি বই লেখার। এটি লেখা হলে এ সম্পর্কিত আমার সিরিজ লেখা শেষ হবে।
মেলায় অনিয়ম
মেলার অনিয়মগুলোই যেন নিয়ম হয়ে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমী শুধু বড় বড় কথাই বলছে, কিন্তু অনিয়ম দূর করতে উদ্যোগী হচ্ছে না। মনে হয় কোথায় যেন তাদের হাত-পা বাঁধা। বাংলা একাডেমীর নীতিমালা অনুযায়ী মেলার প্রথম দিন থেকেই সব স্টলকেই পরিপাটিভাবে বই নিয়ে বসতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে স্টলের বরাদ্দ বাতিল করে দেবে একাডেমী। কিন্তু একাডেমী তা করছে না। যে স্টলগুলোতে এখনও টুকটাক কাজ চলছে, সেগুলো হলো প্রিতম-১০৯, লেখালেখি-১০৬, সূচয়নী-১৬৫, এএইচ ডেভেলপমেন্ট-২৪৭, উন্নয়ন অন্বেষণ-৩১৪, প্রতিশ্রম্নতি-১৯৯ ও নিউশিখা উলেস্নখযোগ্য। আর যেগুলো এখনও খালি আছে সেগুলো হলো ১৯২, ২০১, ২০৯, ২১১, ২১২, ২১৩, ২২২, ২২৬, ২২৭, ২৩৭ ও ২৩৮ নম্বরের স্টল। আবার জিনিয়াস পাবলিকেশনের এক কর্মী জানান, ৭৬ নম্বর স্টলটি তারা আজকে বরাদ্দ পেয়েছেন। এটা নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাডেমীর মহাপরিচালককে পাওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র অভিযোগ করে জানিয়েছেন, যে স্টলগুলোতে কাজ হচ্ছে এবং যেগুলো বন্ধ, সেসব স্টল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। এ রকম গোটা পঞ্চাশেক স্টল তাঁরা নিয়েছে। যেগুলো বিক্রি করতে পারেনি, সেগুলোর এ অবস্থা। এ কারণে একাডেমীও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। সড়কদ্বীপের বেশকিছু স্টলে নিজ প্রকাশনার বই ছাড়াও অন্য প্রকাশনার বইও বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, যে স্টলে এ কাজগুলো হচ্ছে সেগুলোও ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের।
নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৩টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপন্যাস ২৮টি, কবিতা ১৩টি, প্রবন্ধ ১০টি, ছড়ার বই ৫টি উলেস্নখযোগ্য। প্রকাশনার দিক দিয়ে আগামী ও বিদ্যা প্রকাশ থেকে এসেছে ৬টি করে বই। এদিনকার উলেস্নখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে জনকণ্ঠের সাংবাদিক মনিজা রহমানের অপ্সরার ওড়না, এটি তাঁর দ্বিতীয় বই, এনেছে জাগৃতি প্রকাশনী। প্রজ্ঞালোক এনেছে শানত্মনু চৌধুরীর কথা প্রসঙ্গে। গ্রন্থকানন এনেছে নূরম্নল ইসলাম মামুনের অলকানন্দা, আকরাম হোসেনের মুক্তির ঘাটে প্রেমসমাধি, আহসান হাবিবের কৃষ্ণ মেকু অন্যান্য ঢেকুর ও শাহজাহান আবদালির ইয়াহু ডট টু টেলাপাথি। মাওলা ব্রাদার্স এনেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কালেক্টেড ওয়ার্কস ভলিউয়াম-১ ও রচনাসমগ্র-১ এবং মুনতাসীর মামুনের বই ঢাকার স্মৃতি-৯ ও ১০। বিভাস এনেছে পদ্মনাভ অধিকারীর মহর্ষি লালন সাঁই। অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদের বাংলাদেশের রাজনীতি : যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও জঙ্গীবাদ-এর তৃতীয় ও চতুর্থ খ-। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর প্রবন্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালী জাতীয়তাবাদ এনেছে মিজান। উলেস্নখযোগ্যের মধ্যে আর অনন্যা এনেছে শাহরিয়ার কবিরের যুদ্ধাপরাধীদের পৰ-বিপৰ বইটি।
মেলার মূলমঞ্চে
বাংলা একাডেমী আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে আলোচনা অনুষ্ঠানে 'ভাষা আন্দোলনের তাত্তি্বক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭-১৯৫২' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম মুসত্মাফা। আলোচনায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক এ.টি.এম. নূরম্নর রহমান খান ও অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক গোলাম মুসত্মাফা বলেন, ভারতের জাতীয় নেতৃত্ব যখন ভাষা ও জাতিগত পার্থক্যকে মেনে নিয়ে 'বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য' গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন তখন পাকিসত্মানের শাসক ও নীতিনির্ধারকগণ এক ভাষানীতির পথ ধরে উর্দুকেই পাকিসত্মানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আরোপ করতে চাইলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালী মুসলমানের আত্মপরিচয়-সন্ধানের ইতিহাসটি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বাঙালী মুসলমানের এই আত্মপরিচয়-সন্ধানে দ্বিধা ছিল, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ দ্বিধাকে পাকিসত্মানী শাসকগোষ্ঠী তাদের পরিকল্পনার অনুকূলে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। চেয়েছিল বাঙালী জাতিসত্তা বিকাশের পথ রম্নদ্ধ করে তাদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ করতে। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম বাংলাদেশের জনগণ বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে তাদের গনত্মব্যপথ নির্ধারণ করে।
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলন দু'টি ভিন্ন কথা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে রাষ্ট্রের শক্তি থাকে আর সেজন্যই পরবতর্ীতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ পরিষদ গঠনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আবার যদি আমাদের ভাষার জন্য সংগ্রাম করতে হয় সেটা বিচিত্র কিছু নয় এবং সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।
অধ্যাপক এ.টি.এম. নূরম্নর রহমান খান বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনা মধ্যযুগেই শুরম্ন হয়েছিল। ধর্মান্ধতা মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে এ বোধ সাহিত্যে অধিকতর স্থান পায়। এরপর ক্রমান্বয়ে ভাষার প্রতি ধমর্ীয় গোঁড়ামির চেয়েও রাজনৈতিক অবজ্ঞা জোরাল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, বাংলা শুধু বাংলাদেশের ভাষা নয়; বাংলা ভাষাকে অনেকেই মুসলমানের ভাষা মনে করেন না। এটা তাদের কূপম-ুকতা। ভাষার বিষয়ে ধর্মের দিকটা না টানাই ভাল।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যনত্ম বিসত্মৃত হলেও এর পটভূমিকা অনেক পুরনো। ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে শুধু ভাষা নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও এর সাথে সমানভাবে আলোচনার দাবিদার। এ আন্দোলন নিম্নবর্গের মুক্তির আন্দোলন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা সংখ্যালঘুদের পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এটা শুধু ভাষাগত নয়, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পারিপাশ্বর্িকতার কারণে বাংলা ভাষা আজ পর্যদুসত্ম। বাঙালী জাতিসত্তার অসত্মিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে পারিপাশ্বর্িক প্রভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার, কল্যাণী ঘোষ, মাহমুদুজ্জামান বাবু, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নাদিয়া ফেরদৌস নিম্মী, জুলি শরমিলি এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ক্রানত্মি'। যন্ত্রাণুসঙ্গে ছিলেন শিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল, নাজমুল আলম খান, মোঃ নূরম্নজ্জামান বাদশা, গাজী আবদুল হাকিম ও ইফতেখার হোসেন সোহেল।
No comments