বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় দায়মুক্তির এক ধাপ by অধ্যাপক আবদুল মান্নান
রতিক্রিয়া : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিচারের রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
এই রায়ের ব্যাপারে কালের কণ্ঠের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. আনিসুর রহমানবাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হলো। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আজকের ঐতিহাসিক দিনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কথা স্মরণ করছি। একই সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি- যাঁরা ট্রাইব্যুনালে এসে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি মহাজোট সরকারকে। যারা ৪১ বছর পর বিচারের আয়োজন করেছে। বিশেষ করে একজন সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি প্রথম দৈনিক জনকণ্ঠে বাচ্চু রাজাকারের এসব ঘটনা প্রকাশ করেন। যিনি জীবনে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন স্থায়ীভাবে। বাচ্চু রাজাকার একাত্তরে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। একাত্তরে পাকিস্তানিদের সহযোগী হন। তিনি নগরকান্দায় ধর্ষণ, হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি নিজে ধর্ষণ করেছেন। স্বাধীনতার পর তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর অনেক রাজাকার-আলবদরের সঙ্গে বাচ্চু রাজাকারও ছাড়া পান। পরে তিনি ঢাকায় আসেন। এক সময় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নাম ধারণ করেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ইসলাম সম্পর্কে নসিহত শুরু করেন। এতে প্রমাণ হয় যে তিনি ছিলেন ফেরেববাজ। মিডিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন ইসলামের বিশেষজ্ঞ হিসেবে। এই রায়ের আগ পর্যন্ত তাঁর পরিচিতি তা-ই ছিল। আজকের রায়ের পর তাঁর স্বরূপ উদ্ঘাটন হলো। আমরা আশা করব, তাঁর মতো যাঁরা পুনর্বাসিত হয়েছেন, তাঁদেরও যেন বাচ্চু রাজাকারের মতো পরিণতি হয়। বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বেশ কজন ঘাতক গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লার মতো যাঁরা বিচারাধীন আছেন, আশা করব তাঁদের রায়ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। এই সরকারের আমলে তা কার্যকর হবে। এই বিচারপ্রক্রিয়া যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য আগামী দিনেও যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসে তা প্রত্যাশা করি। ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই; দুই লাখ মা-বোন, যাঁরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই। আইনজীবীদের অভিনন্দন জানাই। মিডিয়াকে অভিনন্দন জানাই।
No comments