জামায়াত-শিবিরকে 'জঙ্গী সংগঠন' ঘোষণা করে নিষিদ্ধ দাবি
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সাম্প্রদায়িক দল জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গী সংগঠন ঘোষণা করে নিসিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট আইনবিদগণ। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে জামায়াত-শিবিরের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যখনই আপীল বিভাগে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিতের লিভ-টু-আপীল খারিজ করে দিয়েছে তখনই ধর্মভিত্তিক দলগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি মার্চ মাস থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের গতিবিধির ওপর তীৰ্ন নজর রাখছে। এ দু'টি ঘটনায় জামায়াত-শিবির দিশেহারা হয়ে পড়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের নৃশংস তা-বই তাদের কর্মকা- স্মরণ করিয়ে দেয়। যেমনিভাবে জামায়াত '৭১ সালে দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল এখন তাদের অঙ্গসংগঠন শিবির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরম্ন করে শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধাবী ছাত্রদের খুন করছে। হাত-পায়ের রগ কেটে চিরতরে পঙ্গু করে দিচ্ছে।সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ.ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিভিন্ন সময় ছাত্রশিবিরের কর্মকা- জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তারা হত্যা ও নির্মমভাবে অন্যদের আহত করাসহ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত মর্মে সংবাদপত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে জানা যায়। এই রূপ পরিস্থিতিতে ধমর্ীয় জঙ্গী চেতনা এবং আইন হাতে তুলে নিয়ে হত্যা ও সনত্ম্ত্রাসী তৎপরতায় তাদের সম্পৃক্ততা এখন সকলের কাছেই পরিষ্কার, যা কখনও আইনের শাসনের সহায়তা নয় এবং গণতন্ত্রের মূল নীতিমালার পরিপন্থী। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এই ধমর্ীয় নাম ব্যবহার করে অন্যায় ও অবৈধ কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় জাাময়াত শিবিরকে জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত করা দরকার। একই সঙ্গে তাদের কর্মকা- নিষিদ্ধ ঘোষণা করাও এখন সময়ের দাবি। উলেস্নখ্য, পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকার পর ধর্মভিত্তিক কোন সংগঠন থাকতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিচারপতি এবিএম খায়রম্নল হক ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায় স্থগিতের জন্য বিএনপি মহাসচিব ও জামায়াতপন্থী তিন আইনজীবী লিভ-টু আপীল করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এর ফলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রয়েছে। যদিও আপীল বিভাগ এখনও তাদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করেনি। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ হওয়ায় আদালতের রায় বহাল থাকবে, দেশে কোন ধর্মভিত্তিক সংগঠন থাকতে পারে না। অনুচ্ছেদ ৩৮-এ বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেৰে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লৰ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ কিংবা অনুরূপ উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লৰ্যানুসারী ধমর্ীয় নাম যুক্ত বা ধর্মভিত্তিক অন্য কোন সমিতি বা সংঘ গঠন করার বা তার সদস্য হবার বা অন্য কোন প্রকারে তার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করার কোন অধিকার কোন ব্যক্তির থাকবে না। অর্থাৎ সরকারকে ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন নেই, আপনা আপনিই ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
একদিকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা, অন্য দিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত-শিবির চোখে সর্ষের ফুল দেখছে। আইনবিদগণ জানান, এ কারণেই তারা পরিকল্পিতভাবে শিৰা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ স্বাধীনতাপন্থী ছাত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিৰা ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। কাজেই সময় থাকতে তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সমিতির নেতৃবৃন্দ জামায়াত শিবিরকে জঙ্গী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারেরও দাবি জানিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএফএম মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে জরম্নরী সভায় বক্তব্য রাখেন, ব্যারিস্টার আমিরম্নল-উল-ইসলাম, মো ঃ মনসুরম্নল হক চৌধুরী, শ.ম রেজাউল করিম, অপূর্ব ভট্টাচার্য, রফিকুল হক মিয়া রিপন, প্রমুখ।
এদিকে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, এই মুহূর্তে চিনত্মাভাবনা করেই মতামত দিতে হবে। সুপ্রীমকোট আইনজীবী সমিতি কি বলছে আর না বলছে সেটা বিষয় নয়। সব সময় ছাত্র মারা যাচ্ছে। কেউ না কেউ বলছে, এই ঘটনার জন্য অন্যরা দায়ী। ছাত্রলীগে কেউ মারা গেলে বলছে, ছাত্রশিবির-ছাত্রদল দায়ী, ছাত্রদলের কেউ মারা গেলে বলছে ছাত্রলীগ দায়ী। এগুলো অনেক বছর ধরে চলে আসছে। হত্যার জন্য কেউ না কেউ দায়ী। কোন দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে ভেবেচিনত্মে করতে হবে।
জামায়াত-শিবিরের সামনে ভীষণ বিপদ। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে লৰ্যে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইবু্যনাল বসানো হবে। চলতি মাসেই সেখানে আদালত স্থাপনের উপযোগী করে তোলা হবে, যাতে মার্চে বিচারের কার্যক্রম শুরম্ন করা যায়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। '৭১-এর ঘাতক দালাল নিমর্ূল কমিটি, প্রজন্ম-৭১, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আলহাজ মেজবাহুর রহমান চৌধুরীর ইসলামী ঐক্যজোট যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে তথ্য জানাবে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ইসলামী ঐক্যজোট (মেজবাহুর), জাতীয় গণতদনত্ম কমিশন, প্রাথমিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যে ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি করেছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই জামায়াতের নেতা। বাদ বাঁকিরা বিএনপির। অবশ্য এই তালিকার অনেকেই মারা গেছেন। যুদ্ধারাধীদের তালিকায় যাদের নাম আছে, তারা হলো, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযম, বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামী, মওলানা একেএম ইউসুফ, দেলয়ার হোসাইন সাইদী, মোঃ কামারম্নজ্জামান, মাওলানা আব্দুর রহিম, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোলস্না, মোঃ হামিদুল হক, খাজা খয়েরম্নদ্দিন, মাহমুদ আলী, মোঃ আব্দুল আলীম, এএসএম সোলায়মান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ফজলুল কাদের চৌধুরী, জুলমত আলী খান, কাজী কাদের, খান আব্দুস সবুর খান, মওলানা ফরিদ আহমেদ, শাহ মোঃ আজিজুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মান্নান, ডা. আবু মোতালেব মালেক, মোঃ ইউনুস, এবিএম খালেক মজুমদার, এএনএম ইউসুফ, নুরম্নল আমিন, একিউএম শফিউল ইসলাম, আব্দুল মতিন, এ্যাডভোকেট মোঃ আইনুদ্দিন, মাওলানা নুরম্নজ্জামান, মাওলানা মোঃ ইসহাক, গোলাম সারোয়ার, মোঃ আকতার উদ্দিন আহমেদ, মাওলানা আবদুস সোবহান, ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুস বাছেদ, আব্দুল মতিন ভুইয়া, মোঃ আব্দুল কাশেম, ওবায়দুলস্নাহ মজুমদার, মীর কাশেম আলী, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোঃ আব্দুল হান্নান, ব্যারিস্টার কোরবান আলী, আশরাফ হোসাইন, এ্যাডভোকেট আনসার আলী, মোঃ কায়সার, আবদুল মজিদ তালুকদার, নওয়াজেস আহমেদ, একেএম মোশাররফ হোসেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি হতে জামায়াতও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। লন্ডনে জামায়াত প্রায় ১০০ আইনজীবী রেখেছে। তাদের ফান্ডও প্রস্তুত। সময় হলেই ঐ সমসত্ম আইনজীবীকে দেশে আনা হবে। পাশাপাশি সুপ্রীমকোর্টের এক ডজন আইনজীবীর একটি প্যানেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এত কিছুর পরও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকার এ ব্যাপারে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
No comments