রাস টেনে ধরা হচ্ছে না ছাত্রলীগের- সাহারা খাতুনের মতে যা ঘটছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা
ছাত্রলীগের রাস টেনে ধরতে কোন ধরনের পদৰেপ নেয়া হচ্ছে না। ছাত্রলীগের বাণিজ্য ঠেকাতে অনলাইনে ভর্তির ব্যবস্থা চালু করলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা এখন পর্যনত্ম নেয়া হয়নি সংগঠনটির নেতাদের বিরম্নদ্ধে।
এমনকি ছাত্রলীগ হাইকমান্ড থেকেও সংগঠনের নেতা কর্মীদের বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ৰমতায় আসার পর থেকে সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, লাশ_ একের পর এক অনাকাঙ্ৰিত ঘটনার জন্ম দিয়ে চলেছে ৰমতাসীন এই ছাত্রসংগঠনটি। সহযোগী সংগঠনটির এসব কর্মকা-ে ইমেজ ৰুণ্ন করে মাসুল গুনতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। কিন্তু তার পরও সরকার বা আওয়ামী লীগ কার্যকর কোন ব্যবস্থা তাদের বিরম্নদ্ধে গ্রহণ করছে না। উল্টো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা তো ঘটতেই পারে। এটা কোন ব্যাপার নয়। তবে তিনি আবারও জাতিকে আশ্বসত্ম করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, আমরা কী পদৰেপ নিচ্ছি সেটা দেখুন।ছাত্রলীগের কর্মকা-ে ৰুব্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ছাত্রলীগের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাঁর ৰোভের বহিপর্্রকাশ ঘটিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বকর নিহত হওয়ার পর ৰুব্ধ প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতাদের দেখা পর্যনত্ম করতে দেননি। কিন্তু তারপরও ছাত্রলীগের বোধোদয় হচ্ছে না। সংশিস্নষ্টরা বলছেন, সভানেত্রীর ৰোভ বা অভিমান ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের কাছে এখন পর্যনত্ম কোন অর্থবহ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়নি। পদ, অর্থ ও ৰমতার লোভে অন্ধপ্রায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব শুরম্ন থেকেই সবকিছু থোড়াই কেয়ার করছেন। বরং এটি তাদের জন্য সুবিধাজনক। পদ পদবি তো টিকে আছে! এটাই দরকার। তা যেভাবেই হোক। সংশিস্নষ্টরা বলছেন, অভিমান বা হুঁশিয়ারি নয়, ছাত্রলীগের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এখন জরম্নরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় এ সুযোগ নিয়ে সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান গুটিকয়েক নেতা যেভাবে ছাত্রলীগকে কুৰিগত করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করে চলেছে, তাতে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ছাত্রলীগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের ৰুব্ধ এক কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, ৰোভ বা অভিমান সেই বুঝবে যার ভালবাসা আছে। আমাদের নেতারা নয়। তাঁদের দরকার ৰমতা আর পদ। যতদিন থাকা যায়।
সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে ছাত্রলীগ একপ্রকার কুৰিগত হয়ে আছে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আর সাবেক কয়েক নেতার হাতে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের গঠনতান্ত্রিক নেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকে এ সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সাবেক দুই নেতার আশীর্বাদে বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি। এ সিন্ডিকেট ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন তদ্বির করে এক বছরেই কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ছাত্রলীগের ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডার থেকে শুরম্ন করে প্রায় সব কাজেরই সুবিধাভোগী শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটটি। যার ফলে এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরম্নদ্ধে সংগঠনের পৰ থেকে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা কলেজের ভর্তি বাণিজ্যের একটি বড় ভাগ পেয়ে থাকেন কেন্দ্রীয় সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক সভাপতির সমান ভাগ না পেলেও কিছুটা তিনিও পান। শুধু ঢাকা কলেজ নয়, নগরীর ইডেন কলেজ, সরকারী তিতুমীর কলেজ, কবি নজরম্নল কলেজ, সোহরাওয়াদর্ী কলেজ, মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বদরম্নন্নেসা কলেজ থেকে ভর্তি ও সিট বাণিজ্যের ভাগ পেয়ে থাকেন কেন্দ্রীয় দুই নেতা অথবা তাদের ঘনিষ্ঠজনরা। শুধু তাই নয় নগরীর বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও 'তোহফা' পান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এদিক থেকে প্রথমজন একটু এগিয়ে।
আর মূলত এ কারণেই ভর্তিবাণিজ্যের হোতাদের বিরম্নদ্ধে নিশ্চুপ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শুধু যে চুপ তাই নয়, পত্র পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা অনেক ৰেত্রে ভর্তিবাণিজ্যের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে গেছেন। শুধু ভর্তিবাণিজ্যই নয়, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি- সব কিছুর জন্য দরকার আধিপত্য। আর এ আধিপত্য বিসত্মার করতেই মরিয়া ছাত্রলীগ নেতারা। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়েও এ আধিপত্য বিসত্মারের যুদ্ধেই প্রাণ দিতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবুবকরকে।
ৰমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই ছাত্রলীগের অনত্মর্কোন্দল, দলীয় সংঘর্ষ, প্রতিপৰ ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে রক্তৰয়ী সংঘর্ষে বন্ধ হতে থাকে একের পর এক উচ্চ শিৰা প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি প্রায় প্রতিনিয়তই শিরোনাম হতে থাকে পত্রিকার পাতায়। যখন ছাত্রলীগের লাগামহীন এসব কর্মকা- দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলছিল তখনই ৰুব্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের গঠনতান্ত্রিক পদ থেকে সরে দাঁড়ান এপ্রিলে। যদিও বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার জন্য তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। পরে নির্বাচন কমিশন বলেছিল এ ধরনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ওই সময় ছাত্রলীগের বিৰুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশ পদত্যাগের সিদ্ধানত্ম নিয়েছিল। তারা বলেছিল_ শেখ হাসিনা না থাকলে তারাও ছাত্রলীগে থাকবে না। তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম কেন্দ্রীয় কমিটির ওই বৈঠকের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিলেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক।
তখন অনেকে আশা করেছিল, এবার ছাত্রলীগ হানাহানি টেন্ডারবাজির পথ ছাড়বে। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও তাদের সেই পুরনো চেহারা ফিরে আসে। আবারও প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি। কিন্তু সে হুঁশিয়ারি পর্যনত্মই। ছাত্রলীগ চলেছে তার পথেই।
টেন্ডারবাজি কিছুটা কমলেও শুরম্ন হয়েছে ভর্তিবাণিজ্য আর আধিপত্য বিসত্মারের প্রাণঘাতী লড়াই। সরকার ৰমতায় আসার পর মাত্র এক বছরে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিসত্মারের লড়াইয়ে জীবন দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্র রাজীব, রাজশাহী পলিটেকনিকের ছাত্র, ছাত্রমৈত্রী নেতা সানি আর সর্বশেষ রাজনীতি না করেও বুধবার প্রাণ দিতে হয়েছে দরিদ্র কৃষক পরিবারের সনত্মান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবুবকর সিদ্দিককে। দিনের পর দিন বন্ধ থেকেছে একাধিক উচ্চশিৰা প্রতিষ্ঠান।
সংশিস্নষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগের বিরম্নদ্ধে এবারও ছাত্রলীগের বিরম্নদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ৰুব্ধ হয়েছেন। বকরের মৃতু্যর পর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ৰুব্ধ নেত্রীর দেখা পাননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শুধু ৰুব্ধ হলেই হবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় আবারও কয়েকদিন পর আগের পথেই হাঁটবে ছাত্রলীগ। এ প্রসঙ্গে নামপ্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এবারও যদি নেত্রী ছাত্রলীগের বিরম্নদ্ধে ৰোভ আর অভিমান নিয়ে বসে থাকেন তাহলে সংগঠনের ৰতি হবে। কারণ আমাদের দুই নেতার কাছে পদের লোভ সবচেয়ে বড়। নেত্রী গঠনতান্ত্রিক নেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও তাদের বোধোদয় হয়নি আর এখন কি হবে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সাহারা খাতুন ছাত্রলীগের সহিংসতার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীকে পদৰেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতি কিছুটা শানত্ম হয়েছিল। কিন্তু আবারও বেপরোয়া হয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। স্বারষ্ট্রমন্ত্রীও একাধিককবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু তেমন কোন কাজ হয়নি। ঝরে গেছে একটি মেধাবী জীবন। বন্ধ হয়ে আছে অনেক শিৰা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি কার্যক্রম। এখন পর্যনত্ম কোন ব্যবস্থা না নিলেও এবার আবারও আশ্বসত্ম করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সমন্বিত বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের ভর্তিবাণিজ্য ও ঢাবির সংঘর্ষ সংক্রানত্ম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা তো ঘটতেই পারে। এটা কোন ব্যাপার নয়। ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি বা যে কোন কারণেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক না কেন আমরা কী পদৰেপ নিচ্ছি সেটা দেখুন। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। স্বারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, অপরাধীদের বিরম্নদ্ধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার তাই নেয়া হবে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন জনকণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়টিকে ছাত্রলীগ খুবই গুরম্নত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ইতোমধ্যে যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের চিহ্নিত করে সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীদের বিরম্নদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments