কালের যাত্রা by পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্তের কথা অনেক দিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে। চক্রান্তকারীদের বিষয়ে নানা তথ্য নিয়মিতভাবে ছেপে চলেছে কিছু প্রগতিশীল সংবাদপত্র। বিশিষ্টজনরা তাঁদের বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন ভয়াবহ পরিণতির কথা। পাশাপাশি রাষ্ট্র, সরকার এবং সমাজজীবনে সতর্ক পদক্ষেপের ব্যাপারে তাঁরা সুনির্দিষ্ট মতামতও দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব কখনো এসবকে গুরুত্ব দিয়েছেন, কখনো পাত্তাই দেননি। তাঁদের বোধ হয় সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে ভিন্ন হিসাব-নিকাশ আছে। অতি আস্থাবান যাঁরা, তাঁরা একসময় ভেবেছেন, চক্রান্তকারীরা কতটুকুইবা শক্তি রাখে যে বড় দাগের ক্ষতি করবে। অথবা ভাবখানা এমন, দেখিই না কী করে! ব্যাপারটা সেই বহু শ্রুত চোরের গল্পের মতো। ঘরে চোর ঢুকেছে, গেরস্ত টেরও পেয়েছে; কিন্তু গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে চোরকে পাকড়াও করছে না। বরং আলস্যে চোখ বুজে থেকে ভাবছে, চোর বুঝি কিছু করবে না। এভাবে কালক্ষেপণ করতে করতে একসময়...। না, আমরা সেই গল্পের পরিণতি দেখতে চাই না। কিন্তু এটাও তো সত্য যে চোরকে শুরুতেই পাকড়াও করা হয়নি। বাসর রাতে বিড়াল না মারার ফলে চক্রান্ত ডালপালা ছড়িয়েছে। নানা অঘটন ঘটিয়ে জাতিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রের আপসকামী সিদ্ধান্ত চক্রান্তকারীদের প্রকাশ্যে ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজপথে স্লোগান দিয়ে দেশটাকে ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে চালিয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ ক্ষেত্রে তারা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ও পেয়েছে। নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী হেন কাজ নেই তারা করেনি। তাদের হাতে সংখ্যালঘু নির্যাতন তো পাকিস্তান আমলকেও হার মানিয়েছে। আদর্শবান, জনপ্রিয় ও মেধাসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের হত্যা করে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছে। বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিকর্মীরাও তাদের ঘৃণ্য আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি। রেহাই পায়নি সার্কাস দলের অবলা জীব থেকে শুরু করে সিনেমা হলের নিরীহ দর্শক। চক্রান্তকারীদের সংঘবদ্ধ ঔদ্ধত্যে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও ভাবমূর্তি যেভাবে বারবার লাঞ্ছিত হয়েছে তা দেশদ্রোহের শামিল_অন্তত সাধারণ মানুষের বিচারে। বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকারের খোদ প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষা ও বাক্যে যেভাবে প্রতিনিয়ত অসভ্য কটূক্তি করা হচ্ছে, তা দুঃসাহসের শামিল। প্রধানমন্ত্রী, সরকারি প্রশাসন, রাজনৈতিক কর্মীদের সহিষ্ণুতাও এ ক্ষেত্রে প্রশ্নের উদ্রেক করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেও বেশ কয়েকবার চক্রান্তকারীদের আক্রমণে জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছেন। সুতরাং যতই রাজনৈতিক কৌশলের হিসাব থাকুক না কেন, দুর্বৃত্তকে ছোবল মারার সুযোগ দেওয়া হবে আত্মঘাতী।
সম্প্রতি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নামে যে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে, তা দেশের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মহাজোট কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সাহস ও শক্তি এরা পেল কোথা থেকে? এদের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই। নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং সামাজিক প্রভাব নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। অতীত চরিত্র বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই জানা যাবে এই গোষ্ঠীর নেতৃত্ব প্রগতি ও মানবতাবিরোধী।
যে নারীনীতি নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে সেই নারীনীতি সম্পর্কে তাদের কি স্পষ্ট জ্ঞান ও ধারণা আছে? সরকার ও তার রাজনৈতিক দলগুলোও নারীনীতি সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিত জানিয়েছে বলে মনে হয় না। না হলে নারীনীতিবিরোধী তথাকথিত আন্দোলনকারীরা অপব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পায় কিভাবে? মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তারা যেভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মসূচি যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল ভোটের ধাক্কায় জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ে তারা কোণঠাসা হয়ে সাংগঠনিকভাবে এমন এক কোমরভাঙা অবস্থায় পড়েছিল যে রাতারাতি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি তাদের ছিল না। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মরিয়া হয়ে সরকারবিরোধী তৎপরতা শুরু করে। জোট ও নিজ দলের নেতৃস্থানীয়রা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার হলে তাদের পক্ষে জোর গলায় কথা বলার নৈতিক সাহসও তারা দেখায়নি এই ভয়ে যে, যদি দেশবাসী তাদের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের দল মনে করে। তাহলে তো আসল চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়বে। নির্বাচনোত্তরকালে দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বলতর হওয়ায় তারা অন্য কোনো ইস্যুতেও সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে এই পর্যায়ে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে চারদলীয় জোট আমলের জঙ্গি তৎপরতা, অস্ত্র চালান, বোমা হামলা, রাজনৈতিক হত্যা প্রভৃতি বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে তৎকালীন নেতাদের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য। পাশাপাশি অযৌক্তিক কারণে সংসদ বর্জনের ফলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একপর্যায়ে তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের শিকার হতে থাকে। বিরোধীদলীয় নেত্রীর বসতবাড়ি, সন্তানদের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ ইত্যাদি অরাজনৈতিক ইস্যুতে হরতাল আহ্বান এবং জনগণ কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যাত হলে দেউলিয়াত্ব চরমে পেঁৗছায়। তবে উপনির্বাচন, চট্টগ্রাম নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ভালো ফল পাওয়ায় বিএনপি যেন আবার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। শুরু হয় নবরূপে আস্ফালন। পাশাপাশি ছোট ছোট ইসলামী দলকে মদদ দিয়ে তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামাতে সফল হয় তারা। দলগুলোর কর্মকাণ্ডে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অর্থসাহায্যও আসতে থাকে ব্যাপকভাবে। অতিসম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া হুজি নেতা শেখ ফরিদের দেওয়া তথ্যমতে, অর্থসহায়তা আসছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রায় চার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির কাছ থেকে। শেখ ফরিদ কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা ইত্যাদি নাশকতামূলক অপতৎপরতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে র্যাব উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে গত ২৮ এপ্রিল কালের কণ্ঠে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
চক্রান্তের জাল এখন বহু পথে বিস্তৃত। নারীনীতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত তত বেশি কথা বলছে না, যত বলছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং আমিনী। কয়েক মাস ধরে বিপুল অর্থসাহায্যে দেশব্যাপী মাদ্রাসাছাত্রদের ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছে তারা। এর পেছনে কোনো ধর্মীয় দর্শন কাজ করেছে বলে বিশ্বাস হয় না। সবখানে ধর্মের অপব্যাখ্যা দেওয়ার অভিযোগ আছে এদের বিরুদ্ধে। গত ৪ এপ্রিল ব্যর্থ হরতালের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে জঙ্গি স্টাইলে অভিযান চালিয়ে তারা অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতেও তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান সরকারকে বিপর্যস্ত করাই কেবল তাদের উদ্দেশ্য নয়, তারা এ দেশকে উন্নয়নের পথে চলতে দিতে চায় না। তারা বাঙালি জাতির জীবন-দর্শন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং মানবতার পবিত্র চেতনা নিশ্চিহ্ন করতে চায়। সাম্য, সহমর্মিতা এবং ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে তারা জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে যাঁরা, তাঁদের একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রুখতে হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। মনে রাখতে হবে, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা এবং বঙ্গোপসাগরের কূলে কূলে বেড়ে ওঠা ক্ষুদ্র জনপদের লড়াকু বাঙালি বারবার বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে সব ধরনের দুর্যোগের বিরুদ্ধে। এই স্পিরিটই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিকে যুদ্ধজয়ে প্রেরণা জুগিয়েছে। এও মনে রাখতে হবে, ষড়যন্ত্রের কূটচাল সত্যযুদ্ধে সবসময় পরাজিত হয়েছে। এটাই প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা।
জয় বাংলা।
লেখক : সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব
সম্প্রতি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নামে যে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে, তা দেশের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মহাজোট কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সাহস ও শক্তি এরা পেল কোথা থেকে? এদের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই। নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং সামাজিক প্রভাব নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। অতীত চরিত্র বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই জানা যাবে এই গোষ্ঠীর নেতৃত্ব প্রগতি ও মানবতাবিরোধী।
যে নারীনীতি নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে সেই নারীনীতি সম্পর্কে তাদের কি স্পষ্ট জ্ঞান ও ধারণা আছে? সরকার ও তার রাজনৈতিক দলগুলোও নারীনীতি সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিত জানিয়েছে বলে মনে হয় না। না হলে নারীনীতিবিরোধী তথাকথিত আন্দোলনকারীরা অপব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পায় কিভাবে? মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তারা যেভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মসূচি যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল ভোটের ধাক্কায় জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ে তারা কোণঠাসা হয়ে সাংগঠনিকভাবে এমন এক কোমরভাঙা অবস্থায় পড়েছিল যে রাতারাতি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি তাদের ছিল না। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মরিয়া হয়ে সরকারবিরোধী তৎপরতা শুরু করে। জোট ও নিজ দলের নেতৃস্থানীয়রা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার হলে তাদের পক্ষে জোর গলায় কথা বলার নৈতিক সাহসও তারা দেখায়নি এই ভয়ে যে, যদি দেশবাসী তাদের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের দল মনে করে। তাহলে তো আসল চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়বে। নির্বাচনোত্তরকালে দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বলতর হওয়ায় তারা অন্য কোনো ইস্যুতেও সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে এই পর্যায়ে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে চারদলীয় জোট আমলের জঙ্গি তৎপরতা, অস্ত্র চালান, বোমা হামলা, রাজনৈতিক হত্যা প্রভৃতি বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে তৎকালীন নেতাদের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য। পাশাপাশি অযৌক্তিক কারণে সংসদ বর্জনের ফলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একপর্যায়ে তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের শিকার হতে থাকে। বিরোধীদলীয় নেত্রীর বসতবাড়ি, সন্তানদের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ ইত্যাদি অরাজনৈতিক ইস্যুতে হরতাল আহ্বান এবং জনগণ কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যাত হলে দেউলিয়াত্ব চরমে পেঁৗছায়। তবে উপনির্বাচন, চট্টগ্রাম নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত ভালো ফল পাওয়ায় বিএনপি যেন আবার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। শুরু হয় নবরূপে আস্ফালন। পাশাপাশি ছোট ছোট ইসলামী দলকে মদদ দিয়ে তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামাতে সফল হয় তারা। দলগুলোর কর্মকাণ্ডে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অর্থসাহায্যও আসতে থাকে ব্যাপকভাবে। অতিসম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া হুজি নেতা শেখ ফরিদের দেওয়া তথ্যমতে, অর্থসহায়তা আসছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রায় চার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির কাছ থেকে। শেখ ফরিদ কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা ইত্যাদি নাশকতামূলক অপতৎপরতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে র্যাব উল্লেখ করেছে। এ বিষয়ে গত ২৮ এপ্রিল কালের কণ্ঠে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
চক্রান্তের জাল এখন বহু পথে বিস্তৃত। নারীনীতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত তত বেশি কথা বলছে না, যত বলছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং আমিনী। কয়েক মাস ধরে বিপুল অর্থসাহায্যে দেশব্যাপী মাদ্রাসাছাত্রদের ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছে তারা। এর পেছনে কোনো ধর্মীয় দর্শন কাজ করেছে বলে বিশ্বাস হয় না। সবখানে ধর্মের অপব্যাখ্যা দেওয়ার অভিযোগ আছে এদের বিরুদ্ধে। গত ৪ এপ্রিল ব্যর্থ হরতালের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে জঙ্গি স্টাইলে অভিযান চালিয়ে তারা অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতেও তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান সরকারকে বিপর্যস্ত করাই কেবল তাদের উদ্দেশ্য নয়, তারা এ দেশকে উন্নয়নের পথে চলতে দিতে চায় না। তারা বাঙালি জাতির জীবন-দর্শন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং মানবতার পবিত্র চেতনা নিশ্চিহ্ন করতে চায়। সাম্য, সহমর্মিতা এবং ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে তারা জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে যাঁরা, তাঁদের একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রুখতে হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। মনে রাখতে হবে, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা এবং বঙ্গোপসাগরের কূলে কূলে বেড়ে ওঠা ক্ষুদ্র জনপদের লড়াকু বাঙালি বারবার বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে সব ধরনের দুর্যোগের বিরুদ্ধে। এই স্পিরিটই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিকে যুদ্ধজয়ে প্রেরণা জুগিয়েছে। এও মনে রাখতে হবে, ষড়যন্ত্রের কূটচাল সত্যযুদ্ধে সবসময় পরাজিত হয়েছে। এটাই প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা।
জয় বাংলা।
লেখক : সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব
No comments