সমীক্ষার পূর্বাপর by সাজ্জাদ শরিফ
আজ মহাজোট সরকারের চার বছর পূর্ণ হলো। এ দিনটিকে সামনে রেখে আগের তিন বছরের ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো দেশজুড়ে আবারও একটি জনমত জরিপ করিয়েছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে দেশের বিশিষ্ট পেশাদার জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড।
প্রথম আলো অতীতে নানা সময়ে এ ধরনের জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে থেকে প্রতিবছর নিয়মিত এ-জাতীয় জরিপ পরিচালনা করে আসছে। মহাজোট সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির সময় থেকে এ জরিপ বিশেষ করে পরিচালিত হচ্ছে প্রায় অভিন্ন প্রশ্নমালার ভিত্তিতে। এর উদ্দেশ্য, সরকার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে জনমতের বছরভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র এবং উত্থান-পতনের রূপরেখা তুলে ধরা। ৬ জানুয়ারি ২০০৯-এ এই সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির পর থেকে এই নিয়ে পর পর চারটি বার্ষিক জনমত জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এ সমীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে গত চার বছরের জরিপে পাওয়া তথ্যের তুলনামূলক পর্যালোচনার ভিত্তিতে।
২০০৯ ও ২০১০ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল তিন হাজার। জরিপের প্রান্তিক বিচ্যুতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য ২০১১ সাল থেকে এ সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত করা হয়। এই জরিপের প্রান্তিক বিচ্যুতি কমবেশি ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে এক হাজার ১০০ জনের ওপর চালানো সমীক্ষাকেই সাধারণত প্রতিনিধিত্বশীল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর অপিনিয়ন অ্যান্ড মার্কেট রিসার্চের (ইসোমার) দিকনির্দেশনা বজায় রেখে এ জরিপে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য গবেষণাপদ্ধতি ও নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ, ইসোমারের সদস্য হিসেবে এই দিকনির্দেশনা মেনে চলতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
পাঁচ হাজার উত্তরদাতার মতামতের ভিত্তিতে তৈরি এ জরিপের ফলাফলে সারা দেশের মানুষের মত আদৌ কতটুকু প্রতিফলিত হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে মঞ্জুরুল হক জানান, এ ধরনের জনমত জরিপে বিচ্যুতির হার কমবেশি তিন হলেই সাধারণত তা যথাযথ বলে ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে এক হাজার ১০০ জন উত্তরদাতা নেওয়াই যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে জনসংখ্যা ৩০ কোটির বেশি হলেও সেখানে জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ তাই সাধারণত এই পরিমাণ উত্তরদাতার ওপরই চালানো হয়ে থাকে। সেখানে আমরা নিয়েছি ৫০০০ জন।
বর্তমান জরিপের সময়কাল ছিল নভেম্বর, ২০১২। বাংলাদেশের জনবিন্যাস অনুযায়ী উত্তরদাতাদের অনুপাত প্রতিনিধিত্বশীল রাখা হয়। তাঁদের এলাকা, বয়স এবং নরনারী ও গ্রাম-শহরভেদ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়। জরিপ চালানো হয় বহুস্তরবিশিষ্ট, স্তরীভূত, প্রণালিবদ্ধ ও দৈবচয়ন নমুনায়নের ভিত্তিতে। দেশের সাতটি বিভাগের ৩০টি জেলার বিভিন্ন শহরের ৭৮টি ওয়ার্ড ও ২০০টি গ্রামের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এতে অংশ নেন। তাঁদের এক হাজার ২৫০ জন নগর ও তিন হাজার ৭৫০ জন গ্রামবাসী। নারী ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে দুই হাজার ৫৪৪ ও দুই হাজার ৪৫৬।
পদ্ধতিগত দৈবচয়নের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি ও তাঁর অবস্থান নির্বাচন করা হয়। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় রেখে সাতটি বিভাগের প্রতিটিতে জনসংখ্যার অনুপাতে বেছে নেওয়া হয় তিন থেকে ছয়টি করে জেলা, যা এই জরিপের প্রাথমিক নমুনায়ন একক (প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট বা পিএসইউ)। এরপর প্রয়োজনীয় সংখ্যায় দ্বিতীয় পর্যায়ের নমুনায়ন একক (সেকেন্ডারি স্যাম্পলিং ইউনিট বা এসএসইউ) এবং সূচনাস্থল (স্টার্টিং পয়েন্ট বা এসপি) নির্বাচন করা হয় ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরে দৈবচয়ন অনুসারে। শহরাঞ্চলের এসএসইউ ছিল ওয়ার্ড, পল্লি অঞ্চলে গ্রাম। প্রতিটি সূচনাস্থল থেকে চারটি বাদ দিয়ে পঞ্চম বাড়িতে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। শুরুর বাড়িটি বাদ দিয়ে অন্য বাড়িগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘ডান পাশের নিয়ম’ (রাইট হ্যান্ড রুল) অনুসরণ করা হয়েছে। কোনো সূচনাস্থলে পাঁচটির বেশি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি।
নির্বাচিত বাড়ির প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের বয়সানুক্রমে তালিকা বানানো হয় এবং প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন করে উত্তরদাতা বেছে নেওয়া হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে উত্তরদাতা নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও ওপরে বর্ণিত কিশ পদ্ধতি। জরিপ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মোট এসএসইউ ছিল ২৭৮টি।
এ সমীক্ষার ছকগুলোয় দেখানো বিভিন্ন সূচকের নম্বরের মোট যোগফল ১০০ হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও তা ৯৯ বা ১০১ হয়ে থাকতে পারে। এমনটি হয়েছে দশমিকের পরের ভগ্নাংশগুলো ৫-এর ওপরে বা নিচে হলে আরও সামান্য ভগ্নাংশ যথাক্রমে যোগ বা বিয়োগ করে সেগুলোকে পূর্ণাঙ্গ সংখ্যায় রূপান্তরিত করার কারণে।
জরিপ গণভোট নয়। গণভোট ছাড়া জনমতের পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ জরিপ দেশের জনবিন্যাসের আনুপাতিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল উত্তরদাতার ওপর করা হয়েছে বলে পূর্ণাঙ্গ জনমতের একটি গড় প্রতিফলন এতে পাওয়া যাবে। জরিপটিকে সে আলোকে দেখাই উত্তম।
২০০৯ ও ২০১০ সালের জরিপে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল তিন হাজার। জরিপের প্রান্তিক বিচ্যুতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য ২০১১ সাল থেকে এ সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত করা হয়। এই জরিপের প্রান্তিক বিচ্যুতি কমবেশি ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে এক হাজার ১০০ জনের ওপর চালানো সমীক্ষাকেই সাধারণত প্রতিনিধিত্বশীল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর অপিনিয়ন অ্যান্ড মার্কেট রিসার্চের (ইসোমার) দিকনির্দেশনা বজায় রেখে এ জরিপে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য গবেষণাপদ্ধতি ও নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। কারণ, ইসোমারের সদস্য হিসেবে এই দিকনির্দেশনা মেনে চলতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
পাঁচ হাজার উত্তরদাতার মতামতের ভিত্তিতে তৈরি এ জরিপের ফলাফলে সারা দেশের মানুষের মত আদৌ কতটুকু প্রতিফলিত হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে মঞ্জুরুল হক জানান, এ ধরনের জনমত জরিপে বিচ্যুতির হার কমবেশি তিন হলেই সাধারণত তা যথাযথ বলে ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে এক হাজার ১০০ জন উত্তরদাতা নেওয়াই যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে জনসংখ্যা ৩০ কোটির বেশি হলেও সেখানে জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ তাই সাধারণত এই পরিমাণ উত্তরদাতার ওপরই চালানো হয়ে থাকে। সেখানে আমরা নিয়েছি ৫০০০ জন।
বর্তমান জরিপের সময়কাল ছিল নভেম্বর, ২০১২। বাংলাদেশের জনবিন্যাস অনুযায়ী উত্তরদাতাদের অনুপাত প্রতিনিধিত্বশীল রাখা হয়। তাঁদের এলাকা, বয়স এবং নরনারী ও গ্রাম-শহরভেদ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়। জরিপ চালানো হয় বহুস্তরবিশিষ্ট, স্তরীভূত, প্রণালিবদ্ধ ও দৈবচয়ন নমুনায়নের ভিত্তিতে। দেশের সাতটি বিভাগের ৩০টি জেলার বিভিন্ন শহরের ৭৮টি ওয়ার্ড ও ২০০টি গ্রামের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এতে অংশ নেন। তাঁদের এক হাজার ২৫০ জন নগর ও তিন হাজার ৭৫০ জন গ্রামবাসী। নারী ও পুরুষের সংখ্যা যথাক্রমে দুই হাজার ৫৪৪ ও দুই হাজার ৪৫৬।
পদ্ধতিগত দৈবচয়নের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি ও তাঁর অবস্থান নির্বাচন করা হয়। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় রেখে সাতটি বিভাগের প্রতিটিতে জনসংখ্যার অনুপাতে বেছে নেওয়া হয় তিন থেকে ছয়টি করে জেলা, যা এই জরিপের প্রাথমিক নমুনায়ন একক (প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট বা পিএসইউ)। এরপর প্রয়োজনীয় সংখ্যায় দ্বিতীয় পর্যায়ের নমুনায়ন একক (সেকেন্ডারি স্যাম্পলিং ইউনিট বা এসএসইউ) এবং সূচনাস্থল (স্টার্টিং পয়েন্ট বা এসপি) নির্বাচন করা হয় ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরে দৈবচয়ন অনুসারে। শহরাঞ্চলের এসএসইউ ছিল ওয়ার্ড, পল্লি অঞ্চলে গ্রাম। প্রতিটি সূচনাস্থল থেকে চারটি বাদ দিয়ে পঞ্চম বাড়িতে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। শুরুর বাড়িটি বাদ দিয়ে অন্য বাড়িগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘ডান পাশের নিয়ম’ (রাইট হ্যান্ড রুল) অনুসরণ করা হয়েছে। কোনো সূচনাস্থলে পাঁচটির বেশি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি।
নির্বাচিত বাড়ির প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের বয়সানুক্রমে তালিকা বানানো হয় এবং প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন করে উত্তরদাতা বেছে নেওয়া হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে উত্তরদাতা নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও ওপরে বর্ণিত কিশ পদ্ধতি। জরিপ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মোট এসএসইউ ছিল ২৭৮টি।
এ সমীক্ষার ছকগুলোয় দেখানো বিভিন্ন সূচকের নম্বরের মোট যোগফল ১০০ হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও তা ৯৯ বা ১০১ হয়ে থাকতে পারে। এমনটি হয়েছে দশমিকের পরের ভগ্নাংশগুলো ৫-এর ওপরে বা নিচে হলে আরও সামান্য ভগ্নাংশ যথাক্রমে যোগ বা বিয়োগ করে সেগুলোকে পূর্ণাঙ্গ সংখ্যায় রূপান্তরিত করার কারণে।
জরিপ গণভোট নয়। গণভোট ছাড়া জনমতের পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ জরিপ দেশের জনবিন্যাসের আনুপাতিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল উত্তরদাতার ওপর করা হয়েছে বলে পূর্ণাঙ্গ জনমতের একটি গড় প্রতিফলন এতে পাওয়া যাবে। জরিপটিকে সে আলোকে দেখাই উত্তম।
No comments