দক্ষিণ এশীয় বাস্কেটবল- সেরার মুকুট বাংলাদেশের
মুহুর্মুহু ফ্ল্যাশ জ্বলছে। ছবি তুলতে ব্যস্ত ফটোসাংবাদিকেরা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছবি তুলছে দর্শকেরাও। কেউ মুঠোফোনে, কেউ-বা আইপ্যাডে। গৌরবময় মুহূর্তটাকে ধরে রাখতেই এত ব্যস্ততা।
বাংলাদেশ বাস্কেটবল দলের হাতে গৌরবের এ মুহূর্তটার বোধন হয়েছিল আসলে গত পরশুই, যখন পাকিস্তানকে হারিয়েই দক্ষিণ এশীয় বাস্কেটবলে অঘোষিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। কাল ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। ধানমন্ডি উডেনফ্লোরে সেই ম্যাচটাও জিতল দাপটের সঙ্গে। মালদ্বীপকে হারাল ৬৯-৫৪ পয়েন্টে। টানা চার ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। রানার্সআপ হয়েছে পাকিস্তান, নেপাল তৃতীয়। বাংলাদেশের বাস্কেটবলের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এটি স্মরণীয় অর্জন। এর আগে দক্ষিণ এশীয় বাস্কেটবলে লাল-সবুজের দল কখনোই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।এমনিতেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় খুব কম। কোনো টুর্নামেন্টে আবার অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জনই করতে পারে না। এমনও হয়েছে, এশিয়ার কোনো টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ পেলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতায় দল পাঠাতে পারেনি ফেডারেশন। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশের বাস্কেটবল যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। আসামে ২০০২ সালে বাংলাদেশ প্রথম দক্ষিণ এশীয় বাস্কেটবলে হয়েছিল রানার্সআপ। ঢাকায় ২০১০ এসএ গেমসে জিতেছিল ব্রোঞ্জ। পরের বছর ঢাকায় আয়োজিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক বাস্কেটবলে চ্যাম্পিয়ন। গত বছর এশিয়ান বিচ গেমসে ‘থ্রি অন থ্রি’ বাস্কেটবলে হয়েছিল চতুর্থ। এবার এল এই সাফল্য।
এবারের টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মিথুন বিশ্বাস। তাঁর ক্যারিয়ারে এই প্রথম এমন কৃতিত্ব। কিন্তু তাঁর মুখে গর্বের দীপ্তি ফুটে উঠল না! উল্টো হাতের মুঠোয় ব্যক্তিগত সেরার ট্রফিটি নিয়ে বললেন, ‘আমাদের এমন বড় একটা অর্জন, অথচ কোনো প্রাইজমানিই পাচ্ছি না।’ তবে এসব ভুলে দিনটাকে মনের গহিনে গেঁথে রাখতেই চাইলেন তোজাম্মেল, ‘চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এর চেয়েও বেশি আনন্দ হচ্ছে পাকিস্তানকে হারিয়েছি।’
টুর্নামেন্ট উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন ফিবার (আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল ফেডারেশন) এশিয়া অঞ্চলের সভাপতি শেখ সউদ বিন আলী আল-থানি। দক্ষিণ এশীয় বাস্কেটবল ফেডারেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বিশেষ সভাও করলেন তিনি। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী জুন-জুলাইয়ে দক্ষিণ এশীয় জুনিয়র বাস্কেটবলের আসর বসবে ঢাকায়। বাংলাদেশের এমন আয়োজনের প্রশংসা করে আল-থানি বাংলাদেশের বাস্কেটবলে উন্নয়ন সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন, ‘ফিবা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে কোচ, প্রশিক্ষক দিয়ে বিশেষ সহায়তা করবে।’ কিন্তু এমনও বললেন, এ দেশে বাস্কেটবলের জনপ্রিয়তা ফেরাতে ফেডারেশনকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ কে সরকার জানেন, কাজটা সহজ নয়, ‘অবকাঠামোগত সমস্যাটাই আমাদের বেশি। গ্যালারিতে বসে ভালোভাবে খেলা দেখা যায় না। ক্রিকেটে ভালো পরিবেশ আছে বলেই সবাই খেলা দেখতে যায়। এখানেও ভালো পরিবেশ দরকার। লম্বা ক্যাম্পের জন্য মিরপুর ইনডোর ভাগাভাগি করতে হয় খেলোয়াড়দের। এটাও একটা বিড়ম্বনা।’ তবে এত কিছুর মধ্যেও আশার আলো দেখছেন সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড়, ‘আমরা খুঁজে খুঁজে যেসব খেলোয়াড় এনেছি তাদের উচ্চতা খারাপ নয়। ভালোভাবে যত্ন নিলে এদেরও একটা পর্যায়ে নেওয়া যাবে। আশা করি, একদিন বাস্কেটবল আবার ফিরে পাবে জনপ্রিয়তা।’
No comments