ইজিবাইক-এত যান এলো কীভাবে?

ইজিবাইক নামের একটি যান চলছে দেশের সর্বত্র। অপেক্ষাকৃত হালকা এ যানটি চলে প্রায় নিঃশব্দে। কাকতালীয়ভাবে এর আমদানিও হয়েছে অনেকটা নিঃশব্দে কিংবা সঙ্গোপনে। প্রায় আড়াই লাখ যান আমদানি ও দেশের নানা সড়কে যাত্রী পরিবহন কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে : 'ইজিবাইক


আমদানি ও দেশে তৈরি নিষিদ্ধ।' বৈঠকে ব্যাটারিচালিত এ যানটির চলাচল সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সমস্যার কথা। প্রতিদিন এর ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে হয় এবং এজন্য দরকার পড়ে ২১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ধরে নেওয়া যায়, কলকারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং গৃহস্থালির কাজে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের বেশ ব্যবধান থাকায় বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। তবে আরেক পক্ষ হয়তো বলবে, ইজিবাইকের আবির্ভাব জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমিয়েছে। মহাসড়কে চলাচলের জন্য এ যানের পরিবর্তে বাস-ট্যাক্সি-অটোরিকশা ব্যবহার করা হলে প্রচুর ডিজেল ও গ্যাসের ব্যবহার হতো। বিশ্বে এখন জ্বালানি তেলের দাম বেশ চড়া এবং আমাদের প্রয়োজনীয় তেলের পুরোটাই আমদানি করতে হয়। কেউ কেউ বিষয়টিকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। তবে মুদ্রার দুই পিঠের সমান গুরুত্ব। কিন্তু ইজিবাইকের পক্ষে ও বিপক্ষে যেসব যুক্তি আসবে তাতে হয়তো দুটি মতকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন বিষয়টি কেন বিবেচনায় আসেনি? এ পণ্য এসেছে বৈধ পথে এবং এর আকার এমন ছোট নয় যে সহজে নজরে পড়বে না। রাজপথে আড়াই লাখ যানবাহন চলছে। অন্তত ৫ লাখ লোক এর চালক হিসেবে জীবিকা বেছে নিয়েছে। আরও কিছু লোকও নানাভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি রয়েছে মালিকদের বিনিয়োগ। সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের সবাই কমবেশি শুধু অসহায়বোধই করবে না, অনেকে চরম ক্ষুব্ধ হবে। তারা বলবে, শুরুতেই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হলে এমন সমস্যা হতো না। আরেক দল বলবে, বাইকটি এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে যে সরকার কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিপুল সংখ্যায় আমদানি হয়ে গেছে। এর মেশিন জটিল কিছু নয়। দেশের প্রকৌশলী ও মেকানিকরাও তা বানিয়ে ফেলতে পারেন। এ কারণে দেশে তৈরির ওপরও জারি হলো নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু যানটি যদি রিকশার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যাতে বাড়বে গতি? তখনও কি নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে?
 

No comments

Powered by Blogger.