একুশের চাওয়া একুশের পাওয়া-বাংলা একাডেমী by সেলিনা হোসেন
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। আন্দোলনের মিছিলে গুলিবর্ষণ এবং জীবনদান ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে একটি বিশাল ঘটনা। বাংলা একাডেমী শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র প্রতিষ্ঠান। সে সময়ে গণমানুষের দাবি ছিল যে ভবন থেকে তৎকালীন সরকার গুলিবর্ষণের নির্দেশ দিয়েছিল, সেই ভবনকে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করার।
১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। এই ফ্রন্ট ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ব বাংলা সরকার কর্তৃক ঘোষিত সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১ দফার উল্লেখ করে রাজনৈতিকভাবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন সে সময়ের রাজনীতিবিদেরা। ২১ দফার প্রথম দফাতে ছিল: ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হইবে।’ ষোলোতম দফায় ছিল, ‘যুক্তফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী বর্ধমান হাউসের বদলে অপেক্ষাকৃত কম-বিলাসের বাড়িতে বাসস্থান নির্দিষ্ট করিবেন এবং বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে।’ ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বর্ধমান হাউসে বাংলা একাডেমীর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার। বর্ধমান হাউসের সামনের প্রাঙ্গণে প্যান্ডেল টানিয়ে বাংলা একাডেমীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, দেশের সকল সাহিত্যিক, কর্মী এবং জনসাধারণের সহযোগিতার ফলে এই একাডেমী দুনিয়ার মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ একাডেমী বলিয়া স্বীকৃতি লাভ করিবে।’ বাংলা একাডেমীর স্পেশাল অফিসার হিসেবে মুহম্মদ বরকতউল্লাহ ডিসেম্বর মাসে যোগদান করেছিলেন। ১৯৫৬ সালের ১ ডিসেম্বর ড. মুহম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমীর প্রথম পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। শুরু হয় বাংলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা কার্যক্রম। ১৯৫৭ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়েছিল দৌলত উজির বাহরাম খান রচিত লাইলী-মজনু গ্রন্থ।
সম্পাদনা করেছিলেন ড. আহমদ শরীফ। মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চার এই সূচনা ছিল বাংলা ভাষার ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন। জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লালন। আর এ জায়গাটিকে বাংলা একাডেমী সূচনালগ্ন থেকেই নির্ধারণ করেছিল।
জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার চর্চাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন বাংলা একাডেমীতে বসে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সম্পাদনা করে। ড. মুহম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান সম্পাদনার কাজ শুরু করেছিলেন ষাটের দশকে।
গবেষণা-প্রকাশনার মননশীল চর্চার পাশাপাশি বাংলা একাডেমী একুশের চেতনাকে প্রবাহিত রেখেছে। বাংলা একাডেমীর আলোচনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ছিল মুক্তবৃদ্ধির চর্চায় স্নাত প্রতিবাদী চেতনার মঞ্চ। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় এই মঞ্চ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল তৎকালীন পরিচালক এবং আলোচক। তাদের পাকিস্তানপন্থী তাঁবেদারি মনোভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল উপস্থিত শ্রোতা।
১৯৭১ সালে বাংলা একাডেমী আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অমর একুশে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরিচালক ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। জাতীয় চেতনার বিকাশে বাংলা একাডেমীর ভূমিকাকে অস্বীকার করতে পারেনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সে জন্যই মুক্তিযুদ্ধের সূচনায়, ২৫ মার্চের রাতেই, কামান দেগে বর্ধমান ভবনের দেয়াল ভেঙেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে জাতির সাংস্কৃতিক চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে বাংলা একাডেমী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তিসহ সব শাখায় জ্ঞানচর্চা হচ্ছে। বাংলা একাডেমী প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। বাংলা একাডেমীর অভিধান প্রকল্প ভাষাচর্চার ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। একসময় ভারতীয় অভিধান বাংলাদেশের বাজার দখল করে রেখেছিল। এখন এই অবস্থা নেই। বাংলা একাডেমী প্রণীত নানা ধরনের অভিধান জাতির মর্যাদা বাড়িয়েছে। বাংলা একাডেমী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটি বড় পরিসর। গত বছরে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। দুই খণ্ডে প্রকাশিত এ বইটি প্রণয়ন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পণ্ডিতজন।
এভাবে গবেষণা-প্রকাশনা কার্যক্রমের পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমীর বইমেলা আয়োজন যেকোনো জাতির সাংস্কৃতিক বোধকে তীক্ষ ও শাণিত করার বিশাল কাজ। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলা একাডেমীর মতো প্রতিষ্ঠান যেকোনো দেশ ও জাতির গৌরব।
সম্পাদনা করেছিলেন ড. আহমদ শরীফ। মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চার এই সূচনা ছিল বাংলা ভাষার ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন। জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লালন। আর এ জায়গাটিকে বাংলা একাডেমী সূচনালগ্ন থেকেই নির্ধারণ করেছিল।
জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার চর্চাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন বাংলা একাডেমীতে বসে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান সম্পাদনা করে। ড. মুহম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান সম্পাদনার কাজ শুরু করেছিলেন ষাটের দশকে।
গবেষণা-প্রকাশনার মননশীল চর্চার পাশাপাশি বাংলা একাডেমী একুশের চেতনাকে প্রবাহিত রেখেছে। বাংলা একাডেমীর আলোচনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ছিল মুক্তবৃদ্ধির চর্চায় স্নাত প্রতিবাদী চেতনার মঞ্চ। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় এই মঞ্চ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল তৎকালীন পরিচালক এবং আলোচক। তাদের পাকিস্তানপন্থী তাঁবেদারি মনোভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল উপস্থিত শ্রোতা।
১৯৭১ সালে বাংলা একাডেমী আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অমর একুশে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরিচালক ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। জাতীয় চেতনার বিকাশে বাংলা একাডেমীর ভূমিকাকে অস্বীকার করতে পারেনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সে জন্যই মুক্তিযুদ্ধের সূচনায়, ২৫ মার্চের রাতেই, কামান দেগে বর্ধমান ভবনের দেয়াল ভেঙেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে জাতির সাংস্কৃতিক চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে বাংলা একাডেমী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তিসহ সব শাখায় জ্ঞানচর্চা হচ্ছে। বাংলা একাডেমী প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। বাংলা একাডেমীর অভিধান প্রকল্প ভাষাচর্চার ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। একসময় ভারতীয় অভিধান বাংলাদেশের বাজার দখল করে রেখেছিল। এখন এই অবস্থা নেই। বাংলা একাডেমী প্রণীত নানা ধরনের অভিধান জাতির মর্যাদা বাড়িয়েছে। বাংলা একাডেমী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একটি বড় পরিসর। গত বছরে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। দুই খণ্ডে প্রকাশিত এ বইটি প্রণয়ন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পণ্ডিতজন।
এভাবে গবেষণা-প্রকাশনা কার্যক্রমের পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমীর বইমেলা আয়োজন যেকোনো জাতির সাংস্কৃতিক বোধকে তীক্ষ ও শাণিত করার বিশাল কাজ। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলা একাডেমীর মতো প্রতিষ্ঠান যেকোনো দেশ ও জাতির গৌরব।
No comments