টিকিট নিয়ে কেন এত হইচই
দেড়-দুদিন ধরে লাইন, টিকিট নিয়ে এত উন্মাদনা, এত চাহিদা...মনে হচ্ছিল ম্যাচের দিন উপচে পড়বে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাকে মনে হচ্ছিল চাহিদার তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু সবার জন্য বিস্ময় হয়ে এল কালকের পাকিস্তান-বাংলাদেশ প্রস্তুতি ম্যাচ। পাকিস্তানের ইনিংস যখন শেষ হলো, গ্যালারির অর্ধেকই ফাঁকা! বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হওয়ার পর দর্শকসংখ্যা একটু বাড়ল, তবে সেটিও বড়জোর অর্ধেকের সামান্য বেশি। অথচ আগে বলা হয়েছিল সব টিকিট ‘বিক্রি হয়ে গেছে’।
টিকিট বিক্রির প্রতিটি ধাপে যে চরম অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলা চলছিল, কাল যেন তা পূর্ণতা পেল। ‘সোল্ড আউট’ হলেও কাল ম্যাচের দিনও ভেন্যুতে বিক্রি হয়েছে টিকিট। স্থানীয় আয়োজক কমিটির টিকিট কমিটির প্রধান জি এস হাসান তামিম দাবি করেছেন, আগেই নাকি জানানো হয়েছিল ম্যাচের দিন ভেন্যুতে টিকিট পাওয়া যাবে। অথচ অনেক দর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না। টিকিট পাওয়া যেতে পারে স্রেফ এই আশাতেই ভিড় করেছেন কাউন্টারে।
তবে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকিট পাননি। ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়িতে একসময় বন্ধ করে দেওয়া হয় কাউন্টার। যাঁরা এর আগে টিকিটের ভাউচার নিয়েছিলেন, তাঁদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুণ। শত শত লোককে ভাউচার হাতে ঘুরতে দেখা গেছে, কিন্তু টিকিট পাননি। কাউন্টার কেন বন্ধ করে দেওয়া হলো, জিজ্ঞেস করলে কাউন্টারে কায়াজুঙ্গার প্রতিনিধির উত্তর, ‘আমরা নিরাপদ নই!’
বাইরে টিকিটের জন্য এমন হাহাকার, অথচ ভেতরে অর্ধেক গ্যালারি ফাঁকা! সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল ভিআইপি গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড। এই গ্যালারির বেশির ভাগই ছিল সৌজন্য টিকিট। কিন্তু সৌজন্য টিকিট যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা ম্যাচ দেখতে আসার সৌজন্যটুকু দেখাননি। মূল ম্যাচগুলোতেও যে এমন কিছু হবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? জি এস হাসান তামিম অবশ্য কালকের দর্শকসংখ্যা দেখে খুশি, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবে অনেক। বিশ্বকাপের ম্যাচে দর্শক আরও বাড়বে।’
টিকিট নিয়ে অব্যবস্থাপনার সঙ্গে ছিল নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমের কর্মী—ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে সবাইকেই। ‘ট্রান্সটেল’ গেটের জন্য দীর্ঘ সময় লেগেছে মাঠে ঢুকতে। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে লাইনে দাঁড়িয়েও শুরু থেকে ম্যাচ দেখতে পারেননি অনেকে। গেট খোলা হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়, খেলার মাত্র দুই ঘণ্টা আগে গেট খোলা নিয়েও তাই প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তাকর্মীদের অপ্রয়োজনীয় বাড়াবাড়িতে আইসিসির অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদেরও মাঠে ঢোকার মুখে অনেক হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। আইসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে বজ্র আঁটুনি যে ফস্কা গেরো, সেটা প্রমাণ হয়ে যায় অনেকেই টিকিট ছাড়া প্রেসবক্সে ঢুকে পড়ায়!
মাঠে ঢুকতে না পারলেও অবশ্য খেলা দেখার আশায় স্টেডিয়ামে আসা অনেক ‘দর্শক’ কালকের সন্ধ্যাটা উপভোগ করেছেন নিজের মতো করে। স্টেডিয়ামের বাইরে ছিল উৎসবের পরিবেশ। আলোকসজ্জার মধ্যে চলেছে গল্প, আড্ডা। মনে পড়ে গেছে আগের দিনটা ছিল ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’!
No comments