স্মরণ-পল্লীকবি জসীমউদ্দীন by বিশ্বজিৎ পাল বাবু
আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও... কবিতার এই একটি লাইন পড়তেই মনে পড়ে যাবে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কথা। পল্লীসাহিত্যের স্রষ্টা পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়... কবির নিমন্ত্রণ নামের কবিতায় ফুটে উঠেছিল তাঁর গ্রামের অপরূপ দৃশ্য।
এমনিভাবে গ্রামবাংলা নিয়ে লেখা শত শত কবিতায় তিনি পেয়েছিলেন পল্লীকবির উপাধি। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন পুরস্কারপ্রাপ্তিতেও ছাড়িয়ে গেছেন অনেককে। তিনি ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড ফর প্রাইড পারফরম্যান্স, ১৯৭৬ সালে একুশে পদক, ১৯৭৮ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার পান। এ ছাড়া রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন ১৯৬৯ সালে। কবি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে রাখালী, নকশী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানক্ষেত, সোজন বাদিয়ার ঘাট, হাসু, রঙ্গিলা নায়ের মাঝি, রূপবতী, মাটির কান্না, সাকিনা, সুচয়নী, ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে, মা যে জননী কান্দে, হলুদ বরণী, জলে লেখন, কাফনের মিছিল। তিনি পদ্মাপার, বেদের মেয়ে মধুমালা, পল্লীবধূ, ওগো পুষ্প ধনু, আসমান সিংহ নামে বেশ কয়েকটি নাটক লিখেছেন। তাঁর লেখা আত্মকাহিনীমূলক বইয়ের মধ্যে ছিল যাদের দেখেছি, ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায়, জীবন কথা, স্মৃতিপট। এ ছাড়া ১৯৬৪ সালে 'বোবা কাহিনী' নামে তাঁর একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। তিনি চলে মুসাফির, হলদে পরীর দেশে, যে দেশে মানুষ বড়, জার্মানির শহরে বন্দরে নামে কয়েকটি ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন। তাঁর লেখা হাসির গল্পগুলো হলো_বাঙালির হাসির গল্প, ডালিম কুমার। ১০ হাজারেরও বেশি লোকসংগীতের সংগ্রাহক তিনি। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর মামার বাড়ি। তাঁর পিত্রালয় একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসার উদ্দিন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। মায়ের নাম আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট। ফরিদপুরের ওয়েলফেয়ার স্কুল ও ফরিদপুর জেলা স্কুলে কাটে পল্লীকবির প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন। ১৯২১ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ সালে বিএ এবং ১৯৩১ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। তিনি ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত দীনেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে লোকসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৩৮ সালে। ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তিনি ডিপার্টমেন্ট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিংয়ে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই উপ-পরিচালক হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কবিতার জগতে আসাটা খুব অল্প বয়সেই। কলেজে থাকা অবস্থায়ই তিনি বিখ্যাত কবিতা 'কবর' রচনা করেন। কবি তাঁর কবিতায় গ্রামীণ জীবনের চিত্র যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা মানুষের হৃদয়কে নাড়া দেয়। তাঁর কবিতা বাংলা সাহিত্যকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ কবি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাঁর লাশ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
No comments