টিআইবি’র পার্লামেন্ট ওয়াচ: আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া; বিশিষ্টজনের অভিমত
কোরাম সংকটে ভুগছে দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনের
কার্যক্রম। যদিও চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনের গড় বৈঠককাল এবং প্রতি
কার্যদিবসে সদস্যদের গড় উপস্থিতির হার অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদের একই
অধিবেশনের তুলনায় বেড়েছে। গেলো ৫ বছরে কোরাম সংকটে অপচয় হয়েছে ১২৫ কোটি
টাকারও বেশি। শুধু গেলো বছরেই অপচয় হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
গত বৃহস্পতিবার 'পার্লামেন্ট ওয়াচ'- শীর্ষক প্রতিবেদন এসব তথ্য জানায়
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের ৫টি অধিবেশন পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে, আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণের বিদ্যমান পদ্ধতিগুলোর সীমিত প্রয়োগ, সংসদীয় উন্মুক্ততা চর্চার ঘাটতি, সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় প্রধান বিরোধীদলের ব্যর্থতা এবং আইন প্রণয়নে সময় ব্যয় পূর্বের তুলনায় কমে যাওয়াসহ নানা কারণে সংসদ প্রত্যাশিত কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি বলেও জানায় টিআইবি।
ডক্টর হাছান মাহমুদ
'এ প্রতিবেদন নির্বাচন কেন্দ্রিক নয়'
এদিকে, জাতীয় সংসদ ও আগামী নির্বাচনকে
প্রশ্নবিদ্ধ করতেই টিআইবি এমন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ। শুক্রবার
দুপুরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তার এ অভিযোগ নাকচ করে
দিয়েছেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদনের
বিভিন্ন দিকের ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ও জাতীয়
নির্বাচনকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করার টিআইবি’র প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য। তবে
এ প্রতিবেদন নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো বিষয় নয়। আর সংসদকে কার্যকর করতে এর
ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি যেসব বিষয়ে অগ্রগতি সম্ভব সে বিষয়গুলো চিহ্নিত
করে তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে যে কেউ সমালোচনা করতে পারেন, সেটা তাদের নিজস্ব
ব্যাপার।
ডক্টর বদিউল আলম মজুমদার
'টিআইবি’র প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই'
আর টিআইবি’র প্রতিবেদন
নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
সম্পাদক ডক্টর বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, টিআইবি যথাযথভাবে তথ্য সংগ্রহ
করেই এমন প্রতিবেদন করে থাকে। তাই এ নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সংসদের কোন কার্যকরিতা নেই। আর বিরোধী দল হিসেবে
যারা আছে, তাদের ভূমিকা ও অবস্থান স্পষ্ট নয়। যে বিরোধীদল সরকারের
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, তারা সরকারে অংশ নিয়ে নিজেদের পরিচয় হারিয়েছে।
তাই টিআইবি’র প্রতিবেদন নিয়ে কারো দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই।
জাতীয় সংসদ
পার্লামেন্টওয়াচ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দশম
সংসদের এ ৫টি অধিবেশনের মোট কার্যকালের ১৩ শতাংশ কোরাম সংকটের কারণে ব্যয়
হয়। কোরাম সংকট হয়েছে ৩৮ ঘন্টা তিন মিনিট। তবে পাঁচটি অধিবেশনের কোনটিতেই
বিরোধী সদস্যরা ওয়াকআউট ও সংসদ বর্জন করেননি। আইন প্রণয়নে অধিবেশনের মোট
সময়ের মাত্র ৯শতাংশ ব্যয় হয়েছে। প্রতিটি বিল পাস হতে গড়ে সময় ব্যয় হয়েছে
মাত্র ৩৫ মিনিট। এর বিপরীতে ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসের গড় সময় লাগে ২
ঘন্টা ২৩ মিনিট।
No comments