আবু তোরাবের জীর্ণ ভবন ও দেশের শিক্ষাচিত্র by মিল্টন বিশ্বাস
মিরসরাইয়ের সেই আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের জীর্ণ ভবনের দৃশ্যটি আমাদের নজরে এল সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর জীবন হারানোর পর। এখনো সেই এলাকার মানুষের শোকের মাতম শেষ হয়নি; কিন্তু বেঁচে থাকা মানুষের বাস্তব প্রয়োজনের চাহিদা অসীম। তাই বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তার অবকাঠামোগত দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা দিতে শুরু করেছে।
শোকের আবহ কাটেনি বলেই একটি এনজিওর সহায়তায় শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব বিষয়ে সেশন পরিচালনা করেছেন জনৈক ডাক্তার। শিক্ষকরা গল্প ও গানের আশ্রয় নিচ্ছেন মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্য। শোকের চাপ ও একসঙ্গে এতগুলো মৃতদেহ শিক্ষার্থীদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। তারা সহজে সহপাঠীদের ভুলতে পারবে না। এ জন্য ঘাতক চালক গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ফাঁসির দাবি উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ অনেকেই স্কুল এলাকায় পদধূলি দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অনুদান প্রদান করেছেন। তবে মিরসরাইয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা মুখ্য বিষয় হলেও শতবর্ষ পুরনো আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের জীর্ণ ভবন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের চিন্তাকে উসকে দিয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অবস্থার কতটা উন্নতি হচ্ছে, কোন দিকে ছুটছে শিক্ষার গতিপথ, তা নির্ধারণের কোনো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি আমাদের দেশে নেই। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রটি অনেক বিশাল। প্রায় ৮০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি মাত্র সাড়ে ৩৭ হাজার। শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে সরকারি হলো এক লাখ ৮২ হাজার। প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করে এক কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রায় ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়ে সরকারি বিদ্যালয়ে। বাকিরা পড়ে বেসরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায়। প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার প্রবণতা তো রয়েছেই; তবু শিক্ষার্থীর সংখ্যা আছে স্কুলের খাতায়। গত বছর কালের কণ্ঠের একটি সম্পাদকীয় মন্তব্যের সঙ্গে একসুরে বলা যায়, জাতির মেরুদণ্ড তো দাঁড়িয়ে আছে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।
দেশে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে দুই হাজার ৮৪৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৮৫টি এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তিন হাজার ৫৫৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে যথাক্রমে প্রায় ৬০ লাখ, ৩০ লাখ ও ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। উল্লেখ্য, দেশে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন প্রতিবেদনের সূত্র থেকে জানা যায়, মেট্রোপলিটন এলাকার স্কুলগুলোর চিত্র তেমন আশানুরূপ নয়। ঢাকা শহরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় শিক্ষাচিত্র সন্তোষজনক হলেও সূত্রাপুর, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অবস্থা শোচনীয়। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে, এখানে যারা পড়তে আসে, তাদের আর্থসামাজিক অবস্থাও অপেক্ষাকৃত ভালো; সেই তুলনায় মেট্রোপলিটন এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা কেন আশানুরূপ নয়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার।
সিলেট অঞ্চলের শিক্ষাচিত্র ভয়াবহ রকমের খারাপ। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থার কথা তো সবাই জানেন। দেখা গেছে, যে এলাকার মানুষ বেশি গরিব, সেই এলাকার প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষার হাল ততই করুণ। তবে শিক্ষার অবস্থা খারাপের জন্য কেবল দারিদ্র্যই দায়ী নয়, আরো অনেক কারণ তার পেছনে রয়েছে। এক কোটিরও বেশি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই রয়েছে খারাপের কবলে। আশার কথা এই যে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের শিক্ষাচিত্র কিছুটা উন্নত। বরিশাল ও চট্টগ্রামের অবস্থা তার পরে। আগেই বলা হয়েছে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিলেট বিভাগের। জেলাওয়ারি হিসাব করলে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান সবচেয়ে ওপরে আর সুনামগঞ্জের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। সার্বিক বিবেচনায় ১০টি ভালো জেলা হলো নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ঢাকা, বাগেরহাট, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, ফেনী, মানিকগঞ্জ ও রাজশাহী। আর খারাপের ক্রমানুসারে সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সিলেট, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, গাইবান্ধা, শেরপুর ও নেত্রকোনা।
আমরা জানি, ৬ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের ২৫ শতাংশ এখনো স্কুলে যায় না। এদের স্কুলে না পাঠিয়ে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার সুযোগ কোথায়? এদের স্কুলে পাঠানো এবং স্কুলে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ঝরে পড়ার চিত্র খুবই ভয়াবহ। বিশ্বব্যাংকের গত বছরের প্রতিবেদন থেকেই জানা যায়, যারা স্কুলে যায় তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে না।
সম্প্রতি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি সংবাদ দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় ইউনিয়নের চরে অবস্থিত কানাইদিয়া গ্রামের ৩০০ শিশু নির্মাণাধীন একটি স্কুলের অপেক্ষায় আছে (কালের কণ্ঠ, ২৩ জুলাই)। চর থেকে যমুনা নদী পার হয়ে আরিচায় স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় না চরবাসী গরিব কৃষকের সন্তানদের। এ জন্য সেখানে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। চরের মানুষের ১০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা, কাশবন বিক্রি করা টাকা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আসবাব ও শিক্ষক নিয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি। প্রতিদিন স্কুলঘরটির নির্মাণ দেখতে আসে শিশুরা। তারা স্বপ্ন দেখে সেখানে লেখাপড়া করার। অন্য একটি চিত্র পাওয়া যায় নরসিংদী শহরের হেমেন্দ্র সাহার মোড়ের বৌয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০১ জন শিক্ষার্থীর দুর্ভোগের সংবাদে। সেখানে সাত মাস ধরে বিদ্যুৎ নেই। টিউবওয়েল নেই কয়েক বছর ধরে। শ্রেণীকক্ষের সংকটের জন্য বারান্দায় ক্লাস নিতে হয়। প্রচণ্ড গরম, খাবার পানির অভাব আর অপরিষ্কার শৌচাগার শিক্ষার্থীদের অসুস্থ করে তুলছে। আর বর্ষায় শিশুদের বইখাতা ভিজে যায় স্কুল ভবনের মধ্যেই। সরকারি অনুদানের অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেল (কালের কণ্ঠ, ২৩ জুুলাই)।
বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের টাকা ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে ওপরের আলোচনা ও দৃষ্টান্তগুলো কথা বলছে। মিরসরাইয়ের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের জীর্ণ ভবন আমরা দেখতে চাই না। দেশের কোনো এলাকায় জীর্ণ ভবনের বিদ্যালয় থাকবে না_এই নিশ্চয়তা বর্তমান সরকারের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
email-dr.miltonbis@yahoo.com
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অবস্থার কতটা উন্নতি হচ্ছে, কোন দিকে ছুটছে শিক্ষার গতিপথ, তা নির্ধারণের কোনো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি আমাদের দেশে নেই। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রটি অনেক বিশাল। প্রায় ৮০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সরকারি মাত্র সাড়ে ৩৭ হাজার। শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে সরকারি হলো এক লাখ ৮২ হাজার। প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করে এক কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রায় ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়ে সরকারি বিদ্যালয়ে। বাকিরা পড়ে বেসরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায়। প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার প্রবণতা তো রয়েছেই; তবু শিক্ষার্থীর সংখ্যা আছে স্কুলের খাতায়। গত বছর কালের কণ্ঠের একটি সম্পাদকীয় মন্তব্যের সঙ্গে একসুরে বলা যায়, জাতির মেরুদণ্ড তো দাঁড়িয়ে আছে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই।
দেশে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে দুই হাজার ৮৪৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৮৫টি এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তিন হাজার ৫৫৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে যথাক্রমে প্রায় ৬০ লাখ, ৩০ লাখ ও ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। উল্লেখ্য, দেশে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন প্রতিবেদনের সূত্র থেকে জানা যায়, মেট্রোপলিটন এলাকার স্কুলগুলোর চিত্র তেমন আশানুরূপ নয়। ঢাকা শহরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় শিক্ষাচিত্র সন্তোষজনক হলেও সূত্রাপুর, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার অবস্থা শোচনীয়। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে, এখানে যারা পড়তে আসে, তাদের আর্থসামাজিক অবস্থাও অপেক্ষাকৃত ভালো; সেই তুলনায় মেট্রোপলিটন এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা কেন আশানুরূপ নয়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার।
সিলেট অঞ্চলের শিক্ষাচিত্র ভয়াবহ রকমের খারাপ। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থার কথা তো সবাই জানেন। দেখা গেছে, যে এলাকার মানুষ বেশি গরিব, সেই এলাকার প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষার হাল ততই করুণ। তবে শিক্ষার অবস্থা খারাপের জন্য কেবল দারিদ্র্যই দায়ী নয়, আরো অনেক কারণ তার পেছনে রয়েছে। এক কোটিরও বেশি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই রয়েছে খারাপের কবলে। আশার কথা এই যে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের শিক্ষাচিত্র কিছুটা উন্নত। বরিশাল ও চট্টগ্রামের অবস্থা তার পরে। আগেই বলা হয়েছে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিলেট বিভাগের। জেলাওয়ারি হিসাব করলে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান সবচেয়ে ওপরে আর সুনামগঞ্জের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। সার্বিক বিবেচনায় ১০টি ভালো জেলা হলো নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ঢাকা, বাগেরহাট, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, ফেনী, মানিকগঞ্জ ও রাজশাহী। আর খারাপের ক্রমানুসারে সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সিলেট, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, গাইবান্ধা, শেরপুর ও নেত্রকোনা।
আমরা জানি, ৬ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের ২৫ শতাংশ এখনো স্কুলে যায় না। এদের স্কুলে না পাঠিয়ে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার সুযোগ কোথায়? এদের স্কুলে পাঠানো এবং স্কুলে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে নতুন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ঝরে পড়ার চিত্র খুবই ভয়াবহ। বিশ্বব্যাংকের গত বছরের প্রতিবেদন থেকেই জানা যায়, যারা স্কুলে যায় তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে না।
সম্প্রতি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি সংবাদ দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় ইউনিয়নের চরে অবস্থিত কানাইদিয়া গ্রামের ৩০০ শিশু নির্মাণাধীন একটি স্কুলের অপেক্ষায় আছে (কালের কণ্ঠ, ২৩ জুলাই)। চর থেকে যমুনা নদী পার হয়ে আরিচায় স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় না চরবাসী গরিব কৃষকের সন্তানদের। এ জন্য সেখানে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। চরের মানুষের ১০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা, কাশবন বিক্রি করা টাকা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আসবাব ও শিক্ষক নিয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি। প্রতিদিন স্কুলঘরটির নির্মাণ দেখতে আসে শিশুরা। তারা স্বপ্ন দেখে সেখানে লেখাপড়া করার। অন্য একটি চিত্র পাওয়া যায় নরসিংদী শহরের হেমেন্দ্র সাহার মোড়ের বৌয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০১ জন শিক্ষার্থীর দুর্ভোগের সংবাদে। সেখানে সাত মাস ধরে বিদ্যুৎ নেই। টিউবওয়েল নেই কয়েক বছর ধরে। শ্রেণীকক্ষের সংকটের জন্য বারান্দায় ক্লাস নিতে হয়। প্রচণ্ড গরম, খাবার পানির অভাব আর অপরিষ্কার শৌচাগার শিক্ষার্থীদের অসুস্থ করে তুলছে। আর বর্ষায় শিশুদের বইখাতা ভিজে যায় স্কুল ভবনের মধ্যেই। সরকারি অনুদানের অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেল (কালের কণ্ঠ, ২৩ জুুলাই)।
বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের টাকা ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে ওপরের আলোচনা ও দৃষ্টান্তগুলো কথা বলছে। মিরসরাইয়ের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের জীর্ণ ভবন আমরা দেখতে চাই না। দেশের কোনো এলাকায় জীর্ণ ভবনের বিদ্যালয় থাকবে না_এই নিশ্চয়তা বর্তমান সরকারের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
email-dr.miltonbis@yahoo.com
No comments