পবিত্র কোরআনের আলো-যারা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদের বন্ধু বানিয়ো না

৫৬. ওয়া মান ইয়াতাওয়াল্লাল্লা-হু ওয়া রাসূলাহূ ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ ফাইন্না হিয্বাল্লাহি হুমুল গালিবূন। ৫৭. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ লা তাত্তাখিযু আল্লাযীনাত্তাখাযূ দীনাকুম হুযুওয়ান ওয়া লায়ি'বাম্ মিনাল্লাযীনা ঊতুল কিতা-বা মিন ক্বাবলিকুম ওয়ালকুফ্ফা-রা আওলিইয়া-আ; ওয়াত্তাক্বুল্লাহা ইন কুনতুম্ মু'মিনীন।


৫৮. ওয়া ইযা না-দাইতুম ইলাস্ সালাতি ইত্তাখাযূহা হুযুওয়ান ওয়া লায়ি'বা, যালিকা বিআন্নাহুম ক্বাওমুন লা-ইয়া'কি্বলূন। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৫৬-৫৮]

অনুবাদ : ৫৬. আর যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ইমানদারদের নিজের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তারা নিশ্চিত হতে পারে, একমাত্র আল্লাহর দলটিই বিজয়ী হবে।
৫৭. হে ইমানদাররা, তোমরা বন্ধু বানিয়ো না সেসব লোকদের, যারা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বিদ্রূপ করবে এবং খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করবে, অথচ এর আগে এদের আল্লাহর তরফ থেকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। আর অবাধ্যদেরও বন্ধু বানিয়ো না। তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো তবে আল্লাহর প্রতিই দায়িত্বনিষ্ঠ থেকো।
৫৮. যখন তোমরা নামাজের জন্য ডাকো, অর্থাৎ আজান দাও, তখন এরা এই ডাককে হাসি-তামাশা বা বিদ্রূপের বস্তুতে পরিণত করে। এরা হচ্ছে এমন সম্প্রদায়, যারা (সত্য-মিথ্যা বা ন্যায়-অন্যায়ের) কিছুই বোঝে না।

ব্যাখ্যা : ৫৬. নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানে মুসলমানদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণীরই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এখানে মুমিন লোকদের প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুমিন লোকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তারা আল্লাহর বন্ধু, আল্লাহর রাসুলের বন্ধু এবং মুমিনদের বন্ধু। এ আয়াতের মধ্য দিয়ে আল্লাহর স্বরূপের একটি বিশেষ দিকও উঠে এসেছে। আল্লাহ বিশ্ব জগতের একক প্রভু, আর তিনি মুমিনদের পরম বন্ধুও। আল্লাহ তায়ালা সত্য ও ন্যায়ের প্রতিভূ, আর যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুগত ও অঙ্গীকারাবদ্ধ, তারাই প্রকৃত মুমিন। মুমিনরা আল্লাহর বন্ধু, তাঁর রাসুলের বন্ধু ও তারা নিজেরা পরস্পরের বন্ধু। এই বন্ধুত্ব মুমিনদের পরম সম্পদ। এই সম্পদের বদৌলতেই তারা একদিন পৃথিবীর বুকে বিজয়ী হবে। আর এই বিজয় হবে সত্য ও ন্যায়ের বিজয়।
৫৭ ও ৫৮ নম্বর আয়াতে দুষ্টপ্রকৃতির ইহুদি, খ্রিস্টান ও কাফিরদের দুষ্টামির কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় কার্যকলাপ নিয়ে বিদ্রূপ করত। মুসলমানদের নামাজ, আজানসহ অন্য ইবাদত নিয়ে তারা হাসি-তামাশা করত। অথচ আহলেকিতাবের কাছেও আল্লাহর কিতাব রয়েছে, তারা নিজেরাও এক আল্লাহরই উপাসনা করে বলে দাবি করে। কিন্তু তারা নিজেদের কিতাব থেকেও সঠিক শিক্ষাটা নেয় না। বর্তমান কিতাব আল কোরআন এবং বর্তমান নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে তাদের কিতাবগুলোকে সত্যায়ন করেন, তা-ও তারা বুঝতে চায় না। তারা নিজেদের আত্মশ্লাঘা ও আত্ম-অহমিকার ওপর নির্ভর করে চলতে চায়। তারা সত্য ও ন্যায়কে বুঝতে চায় না এবং উপলব্ধিও করতে চায় না। তারা শুধু সাম্প্রদায়িকতাটাই বোঝে এবং সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে চায়। মুসলমানদের নামাজ ও আজান তাদের প্রচলিত ইবাদতের চেয়ে ব্যতিক্রম হওয়ায় এগুলো নিয়ে তারা বিদ্রূপ করে। এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ থাকো, আল্লাহর কাছে সব কিছুতে ন্যায়-অন্যায়ের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে, এ কথা মুসলমানদের অবশ্যই বুঝতে হবে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.