রংপুর মেডিকেলের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক-সাংসদের কীর্তি

রংপুর মেডিকেলে সাংসদের নেতৃত্বে যা হয়েছে, তা অভিনব এবং লজ্জাজনক। কর্মচারী নিয়োগে কোটা-সুবিধা আদায়ে সাত ট্রাক মানুষ এনে, লাঠিসোঁটা নিয়ে হাসপাতাল জিম্মি করার প্রতিবাদ করব, নাকি ‘মাস্তান’ সাংসদকে কর্মচারীদের লাঠিপেটার ঘটনার নিন্দা জানাব? নির্বাচিত সাংসদের এহেন লাঞ্ছনা থেকে বড় হয়ে উঠেছে তাঁর দুর্বৃত্তপনা। এটা গণতন্ত্রের অপমান, তাঁকে নির্বাচনকারী ভোটারদের অপমান।


রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে ১৮১ জনের নিয়োগে পরীক্ষা হয়েছে ২৩ জানুয়ারি। চাকরি নিয়ে বাণিজ্য হয়, কর্মীদের খুশি রাখা হয়। তাই রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ আর মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের দাবি ৭০ জনের কোটা। জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ, দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা জনাব শাহরিয়ারের চাওয়া ৪০ জনের কোটা। লক্ষ্য পূরণে কলেজে ধর্মঘট করেছে ছাত্রলীগ। সাংসদ বহিরাগত বিধায় ট্রাকে করে লোকবল নিয়ে এসেছেন কোটা আদায়ে। হাসপাতাল জিম্মি করার এই সংবাদ সংগ্রহে আসা সাত সাংবাদিককেও তাঁরা প্রহার করেছেন; বন্ধ করে দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। সাংসদের ভাষায়, তিনি ‘লোকবল নিয়ে স্মারকলিপি জমা’ দিতে এসেছেন।
কর্মচারীরাও বসে থাকেননি। তাঁরাও পাল্টা লোকবল জড়ো করে বহিরাগতদের তাড়িয়ে দেন এবং পলায়নরত সাংসদকে ধরে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন। আগেভাগে প্রস্তুত পুলিশ এই নাটকে দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থেকে ‘কর্তব্য’ পালন করেছে।
প্রথমত, সাংসদই হোন বা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নেতাই হোন, কর্মচারী নিয়োগে তাঁরা বহিরাগত হস্তক্ষেপকারী। এটাই তাঁদের প্রথম অপরাধ। দ্বিতীয়ত, স্মারকলিপি পেশের জন্য লাঠিধারী ‘লোকবল’ নিয়ে হাসপাতালকে জিম্মি করা ফৌজদারি অপরাধ। তৃতীয়ত, জাতীয় সাংসদের একজন আইনপ্রণেতা কেবল একজন জনপ্রতিনিধিই নন, তিনি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অংশীদার; মাস্তানি করতে গিয়ে প্রহূত হওয়া তাঁর জন্য মোটেই গৌরবের নয়। দুঃখের বিষয়, সম্প্রতি অনেক সাংসদকেই দেখা যাচ্ছে এ রকম দুর্বৃত্তপনায় জড়িত হতে। সম্প্রতি রাজধানীর সরকারদলীয় সাংসদ কামাল মজুমদারকেও আমরা মনিপুর বিদ্যালয়ে অনুরূপ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখেছি। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের সাংসদ গিয়াসউদ্দিন আহাম্মেদ কিংবা কক্সবাজার-৪ আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদিকেও আমরা দেখেছি এ রকম আচরণ করতে।
জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সেবা করবেন বলে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাঁদের অনেকেই নিজেদের নির্বাচিত ‘জমিদার’ মনে করে প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতা এবং জনগণের সম্পদে থাবা বসাচ্ছেন। এঁরা ক্ষমতার ঘুণপোকা; নিরন্তর এঁরা রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে ভেতর থেকে ফাঁপা করে দেবেন।
রংপুরের ঘটনা ক্ষমতাসীন জোটের দুই শরিকের প্রশাসনিক কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপের একটি নজির মাত্র। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ হবে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে। সেখানে সাংসদ বা ছাত্রলীগ নেতার কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারও তদবিরে কোনো কর্মচারী নিয়োগ হলে তা বাতিল করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.