গ্লানিমোচন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
২৭ জানুয়ারি, ২০১০ দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় গ্লানির মোচন ঘটল এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধারা সূচিত হলো। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে জাতি এই দিনের অপেক্ষা করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের নৃশংস হত্যার বিচার রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। হত্যাকারীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ নামের কালাকানুন জারি করা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকারীদের পুরস্কৃতও করা হয়েছিল বিদেশি মিশনে লোভনীয় পদে চাকরি দিয়ে। এমনকি, পরবর্তী সময়ে তাঁদের কাউকে কাউকে রাজনৈতিক দল গঠন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ন্যায়বিচার ও মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ও সরকারি উদ্যোগে।
কিন্তু সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থের বিপরীতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সব সময় কামনা করেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার সুষ্ঠু বিচার। সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘ ২১ বছর: ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন পর্যন্ত। মামলা দায়ের, আসামিদের কয়েকজনের গ্রেপ্তার ও বিচার-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরও মাঝখানে সরকার পরিবর্তনের ফলে ছেদ পড়ে আবার। ২০০১ সালে নির্বাচিত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পুরোটা আমল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ঝুলে থাকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত, আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ কোনো সরকার জাতির জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে এভাবে পাশ কাটিয়ে বা অনিষ্পন্ন রেখে দিতে পারে—এটা সত্যিই ছিল দুর্ভাগ্যজনক।
তবে অনেক দেরিতে হলেও বিচার সম্পন্ন হয়েছে, দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে—এটা জাতির জন্য স্বস্তির বিষয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এটি হয়েছে দেশের প্রচলিত সাধারণ আইনে, কোনো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তড়িঘড়ি আসামিদের ফাঁসি দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
দু-একটি রাজনৈতিক মহল মনে করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশকে কথিত একদলীয় স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত করার একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিজেই স্বৈরতান্ত্রিক। কারণ, একতরফা বলপ্রয়োগ ও রক্তপাতই এর নির্ধারিত পন্থা, যা শেষ বিচারে একটি ভুল পন্থা। এই পথে গণতন্ত্র আসে না, মানুষের মুক্তির কথা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তিকে আজ মনেপ্রাণে মেনে নিতে হবে গণতান্ত্রিক পথেই গণতন্ত্র আসে, বলপ্রয়োগ বা রক্তপাতের পথে নয়। ভবিষ্যতে আর কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, সংবিধানবহির্ভূত কোনো পন্থা নয়—এই অঙ্গীকার করতে হবে সব রাজনৈতিক শক্তিকে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে আইনের শাসনের যুগে প্রবেশ করুক। স্বস্তি ও শান্তি দীর্ঘজীবী হোক।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের নৃশংস হত্যার বিচার রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। হত্যাকারীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ নামের কালাকানুন জারি করা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকারীদের পুরস্কৃতও করা হয়েছিল বিদেশি মিশনে লোভনীয় পদে চাকরি দিয়ে। এমনকি, পরবর্তী সময়ে তাঁদের কাউকে কাউকে রাজনৈতিক দল গঠন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ন্যায়বিচার ও মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ও সরকারি উদ্যোগে।
কিন্তু সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থের বিপরীতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সব সময় কামনা করেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার সুষ্ঠু বিচার। সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘ ২১ বছর: ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন পর্যন্ত। মামলা দায়ের, আসামিদের কয়েকজনের গ্রেপ্তার ও বিচার-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরও মাঝখানে সরকার পরিবর্তনের ফলে ছেদ পড়ে আবার। ২০০১ সালে নির্বাচিত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পুরোটা আমল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ঝুলে থাকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত, আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ কোনো সরকার জাতির জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে এভাবে পাশ কাটিয়ে বা অনিষ্পন্ন রেখে দিতে পারে—এটা সত্যিই ছিল দুর্ভাগ্যজনক।
তবে অনেক দেরিতে হলেও বিচার সম্পন্ন হয়েছে, দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে—এটা জাতির জন্য স্বস্তির বিষয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এটি হয়েছে দেশের প্রচলিত সাধারণ আইনে, কোনো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তড়িঘড়ি আসামিদের ফাঁসি দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
দু-একটি রাজনৈতিক মহল মনে করে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশকে কথিত একদলীয় স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত করার একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিজেই স্বৈরতান্ত্রিক। কারণ, একতরফা বলপ্রয়োগ ও রক্তপাতই এর নির্ধারিত পন্থা, যা শেষ বিচারে একটি ভুল পন্থা। এই পথে গণতন্ত্র আসে না, মানুষের মুক্তির কথা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তিকে আজ মনেপ্রাণে মেনে নিতে হবে গণতান্ত্রিক পথেই গণতন্ত্র আসে, বলপ্রয়োগ বা রক্তপাতের পথে নয়। ভবিষ্যতে আর কোনো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, সংবিধানবহির্ভূত কোনো পন্থা নয়—এই অঙ্গীকার করতে হবে সব রাজনৈতিক শক্তিকে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে আইনের শাসনের যুগে প্রবেশ করুক। স্বস্তি ও শান্তি দীর্ঘজীবী হোক।
No comments