শিক্ষাঙ্গনে সংঘর্ষ
শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যে আন্দোলন, তাতে ছাত্র-সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা শিক্ষার পরিবেশে বিঘœ ঘটাচ্ছে দেশের
কোন কোন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের মধ্যে
সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে শিক্ষার পরিবেশ হুমকির মুখে।
এসব সংঘাত ও হানাহানির
সময় বোমা, ককটেলÑএমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে অনেকে আহত
হচ্ছে; নিহতের ঘটনাও ঘটছে মাঝে মাঝে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট,
জাহাঙ্গীরনগর, ইসলামী, রাজশাহী ও রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু
কলেজেও ছাত্র-সংগঠনগুলোর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা পত্রপত্রিকার শিরোনাম
হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি সবার দৃষ্টি
আকর্ষণ করেছে। শিক্ষকদের দাবিকেন্দ্রিক যে আন্দোলন চলে আসছে, তা শুধু
শিক্ষক বা শিক্ষক সমিতিকেন্দ্রিক থাকেনি; তা সংক্রমিত হয়েছে সমর্থক
ছাত্র-সংগঠনগুলোর মধ্যেও। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকেন্দ্রিক ছাত্র
সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার দৈনিক জনকণ্ঠের রিপোর্ট
থেকে জানা যায়, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে
গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ৩৫ জন আহত হয়েছে।এখানে উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট আন্দোলনটি মূলত শিক্ষক-আন্দোলন। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যে আন্দোলন, তাতে ছাত্র-সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা এবং মারমুখী ভূমিকা শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশকে বিঘœ ঘটাচ্ছে, তাতে সচেতন মানুষমাত্রই চিন্তিত হবেন। শিক্ষক সমিতি কিংবা ছাত্র-সংগঠনগুলো হয়ত তাদের নিজস্ব কোনো স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলনকে জোরদার করছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা ও তার সহিংসতার মাত্রা সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে; যা শুভ ফল বয়ে আনবে না। সংঘাত-সংঘর্ষ মানেই শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বিপর্যয়; আর তার ফল ক্লাস বন্ধ, কখনও কখনও হলত্যাগ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি। এই-ই যেন আমাদের শিক্ষাঙ্গনের দৃশ্য। এর মধ্যে ক্ষতি ছাড়া লাভের ছিটেফোঁটাও নেই।
তবুও উচ্চশিক্ষাঙ্গনে হানাহানি, রক্তারক্তি চলছে। সম্ভাবনাময় অসংখ্য তরুণ-তরুণীর স্বপ্নিল ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে। এই খেলা বন্ধ না হলে শান্তিময় পরিবেশ আশা করা বৃথা। উচ্চশিক্ষাঙ্গনে নানা ধরনের লোভ ও লাভের কারণে এক শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছাত্রসংগঠনের ব্যানারকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিস্তৃতি যেভাবে ঘটছে তাতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া দরকার।
No comments