পুলিশের ডাকাতি-নাগরিকদের নিরাপত্তা কে দেবে?
অপরাধীর পক্ষাবলম্বন করে ভুক্তভোগী মানুষের বিপক্ষে দাঁড়ানোর ঘটনা নয় এটি। এমন ঘটনা এন্তার ঘটে। পুুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় অপরাধের শিকার মানুষের পক্ষে না দাঁড়িয়ে অপরাধীর পক্ষে দাঁড়ায়, অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।
কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি অপরাধ কর্মে নেমে যায় এমন অভিযোগ এখনও কম। ফলে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ-কাহারোলের পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে সরাসরি ডাকাতি করতে গৃহস্থের বাড়িতে হানা দিয়েছে এমন খবরে সবাই বিস্মিত হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে ঘুষ আদায় করে, অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য উৎকোচ নেয়, রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করে ক্ষমতাধরদের পক্ষে কাজ করে_ এসব অভিযোগ সাধারণ বলে কথিত অভিযোগের তালিকায় এখন যদি পুলিশের বিরুদ্ধে ডাকাতি, রাহাজানির মতো অভিযোগ ওঠে তবে নাগরিকদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠবে। কোনো পক্ষপাত না দেখিয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া পুলিশের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার অত্যন্ত জরুরি কাজটি তাদের হাতে ন্যস্ত। এমন গুরুদায়িত্ব অস্বীকার করে রাতের অন্ধকারে সাদা পোশাকে, মাইক্রোবাস সজ্জিত হয়ে একটি থানার পুলিশ সদস্যরা গৃহস্থের বাড়িতে ডাকাতি করে ফেরার সময় জনতার হাতে ধৃত হয়েছে। এ ন্যক্কারজনক ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী থানাগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন তো দূরের কথা, সাধারণের কাছ থেকে পুলিশ সদস্যদের ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেছে। ছিনিয়ে নিতে গিয়ে পুলিশি ক্ষমতাও ব্যবহার করেছে। এমন ঘটনায় লজ্জিত না হয়ে উপায় নেই। এ কথা সবাই স্বীকার করবেন, জনতার হাতে ধৃত সহকর্মীদের রক্ষা নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াই থানাগুলোর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সহকর্মীদের রক্ষার জন্য থানার তৎপরতা জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তাদের অনাস্থাকে বাড়িয়ে তুলেছে। ঘটনাটি জ্বালাও-পোড়াও থেকে শুরু করে অবরোধ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। থানাগুলো এ দায়িত্বহীন পদক্ষেপের দায় এড়াতে পারে না। আশার কথা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব হবে, নিজেদের ভাবমূর্তি ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বার্থে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনা। মানুষ যাতে থানা ও পুলিশকে নিজেদের সহযোগী ভাবে সে ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহল থেকে এ আপ্তবাক্য শোনা যায় যে, পুলিশ জনগণের বন্ধু। কিন্তু আদতেই কি পুলিশ জনগণের বন্ধু, এ প্রশ্ন আজ সহজাতভাবে উঠবে। তবে এ প্রত্যাশা ঠিক, পুলিশকে জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে হাজির করতে নানা সরকারি-বেসরকারি তৎপরতা কার্যকর আছে। কিন্তু সে উদ্যোগ কার্যক্ষেত্রে কতটুকু সফল হচ্ছে সে প্রশ্ন উঠবে। কেননা, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া জনগণ পুলিশকে বন্ধু হিসেবে মেনে নিচ্ছে এমন নজির নেই। বিশেষজ্ঞরা ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনবান্ধব করে তোলার তাগিদ দেন। রাজনৈতিক প্রভাব নিরপেক্ষ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদও সমাজে আলোচিত হয়। পুলিশের বেতন-ভাতার স্বল্পতার দিকেও অঙ্গুলি নির্দেশিত হয়। এসব সমস্যার দিকে সরকারের নজর পড়া উচিত। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানো দরকার। কেননা, অপরাধের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক থাকলে, সময়ে সময়ে পুলিশ নিজেরাই অপরাধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে মানুষের আস্থার কোনো জায়গা থাকবে না। দিনাজপুরে পুলিশ সদস্যরা যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল তা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থাও নিশ্চিত হওয়া দরকার।
No comments