শনিবারের সুসংবাদ-বিশ্বম্ভরপুরে সবুজ শিমের জয়গান by শামস শামীম,
কচি শিমগাছের ডগার ওপর দিয়ে বইছে শীতদুপুরের মিষ্টি হাওয়া। লতানো গাছে ছেয়ে গেছে মাঠ। হাওয়ায় দুলছে বিস্তীর্ণ শিমক্ষেত। গুনগুন করে মনের আনন্দে শিম তুলে ঝুড়িতে ভরছেন দুই গৃহবধূ। হাত ব্যস্ত শীম তোলায় আর মুখ ব্যস্ত সংসারের টুকিটাকি বিষয় নিয়ে গাল-গল্পে। একটা সুন্দর ভবিষ্যতের ছবিও যেন উঁকি দিয়ে যায় তাঁদের দৃষ্টির সীমানায়। ধানচাষের অনুপযুক্ত বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে অনেকটা নীরবেই শিমচাষের বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন সুনামগঞ্জের
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মথুরাকান্দি ইউনিয়নের চাষিরা। শিমচাষে এলাকার পাঁচ শতাধিক কৃষক পরিবার এখন স্বাবলম্বী। সবুজ শিমের জয়গান তাই এ অঞ্চলের ঘরে ঘরে।
কয়েক দিন আগে সরেজমিনে ইউনিয়নের বাঘবের, আক্তাপাড়া, চালবন্দ, মাঝের টেক, জিনারপুর, রামপুর ও ঘরেরগাঁও ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের বিস্তীর্ণ আমন মাঠে এখন ধানের বদলে উপচে পড়া সবুজ শিমের ঢেউ। উত্তুরে হাওয়ায় ঢেউ খেলানো ক্ষেত থেকে মনের আনন্দে শিম তুলছেন কিষান-কিষানিরা। স্থানীয়ভাবে এই শিম প্রজাতিকে 'পলাইশ্যা' এবং 'জিনারপুরি' নামে ডাকা হয়। এই বীজ নিজেরাই তৈরি করে চাষ করেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের চাষে পরামর্শ দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা কোথায় কী কাজ করেন তা জানেন না কৃষকরা। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে গেলেও পরামর্শের বদলে বহুজাতিক কম্পানির কীটনাশক ও বীজ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
আক্তাপাড়া গ্রামের শিমচাষি আবদুল জানের স্ত্রী মিনারা বেগম এবং একই গ্রামের শের ইসলামের স্ত্রীকে দেখা গেল ক্ষেত থেকে শিম তুলছেন। কিষানিরা ক্ষেত থেকে শিম তুলে নিয়ে যান বাড়িতে। সেই শিম বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন কৃষকরা। মিনারা জানালেন, এ মৌসুমে তাঁর স্বামী ৫০ শতাংশ ভূমিতে শিম চাষ করেছেন। গত ভাদ্র মাসে লাগিয়েছিলেন। কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিম তুলে বাজারে বিক্রি করছেন ৯০-৮০ টাকা কেজিদরে। দিন যত এগোতে থাকবে, তত ফলন বাড়বে। তবে বাজারমূল্য কমবে বলে তিনি জানান। এই কিষানি আরো জানান, ৫০ শতাংশ ভূমিতে তাঁর স্বামী শিম চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আশা করছেন, ৪০-৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। মিনারা জানালেন, ২০ বছর ধরে তাঁর স্বামী এই বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে শিম চাষ করে একজন স্বাবলম্বী কৃষক হয়েছেন।
একই গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা বালুতে তাঁদের এলাকার আমন ধানের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে ধান ফলত না। তাই ধীরে ধীরে কৃষকরা ধানের বদলে শিমসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজ ফলাচ্ছেন। তিনি জানান, ১৫-২০ বছর ধরে তিনি শিম চাষ করছেন। এবার প্রায় তিন একর জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে শিম চাষ করেছেন। আশা করছেন, তিন লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। তবে শিমচাষ লাভজনক হলেও কষ্টকর জানিয়ে তিনি বলেন, ফলন আসার পর প্রতিদিনই কীটনাশক ছিটাতে হয়। না হলে ক্ষেতে পোকার ব্যাপক আক্রমণ ঘটে।
আদাং গ্রামের শিমচাষি রফিকুল ইসলাম স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, 'অফিসাররা কোনোদিন পরামর্শ দিতে আসেন না। আমাদের ক্ষেতে খুদে মাকড় এবং শিম ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ বেশি। তাই প্রতিদিনই কীটনাশক দিতে হয়। প্রতি ৩০ শতাংশ ভূমিতে ৩০০-৪০০ টাকার কীটনাশক দিতে হয়। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা এবং ভালো ফলনের জন্য অফিসাররা পরামর্শ তো দূরের কথা, মাঝেমধ্যে এলেও বিভিন্ন কম্পানির কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেন।' রফিকুল অভিযোগ করেন, গত বছর তিনি অফিসারের কথা অনুযায়ী একটি বিশেষ কম্পানির তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করে প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
বিশ্বম্ভরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক চাষি এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ হাইব্রিড এবং বাকি ৬০ শতাংশ দেশীয়। তবে উপজেলার অন্য ইউনিয়নের চেয়ে সলুকাবাদ ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে শিম। এলাকার যেসব বেলে, দোঁ-আশ মাটিতে ধান চাষ হয় না, সেসব জমিতেই শিমসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়। চার দশক ধরে এই এলাকায় ধানের বদলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ টি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মথুরাকান্দিতে দীর্ঘদিন ধরে শিমচাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের চাষিকে চাষে কেন সহায়তা এবং পরামর্শ দেওয়া হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যাঁরা আমাদের কাছে আসে তাদের আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।' ক্ষেতে পোকা ধরলে কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমরা সরকারি চাকরি করি। কোনো কম্পানির প্রতিনিধিত্ব করি না।' তবে উন্নত ফলন এবং ক্ষেত পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে বলার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।
কয়েক দিন আগে সরেজমিনে ইউনিয়নের বাঘবের, আক্তাপাড়া, চালবন্দ, মাঝের টেক, জিনারপুর, রামপুর ও ঘরেরগাঁও ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের বিস্তীর্ণ আমন মাঠে এখন ধানের বদলে উপচে পড়া সবুজ শিমের ঢেউ। উত্তুরে হাওয়ায় ঢেউ খেলানো ক্ষেত থেকে মনের আনন্দে শিম তুলছেন কিষান-কিষানিরা। স্থানীয়ভাবে এই শিম প্রজাতিকে 'পলাইশ্যা' এবং 'জিনারপুরি' নামে ডাকা হয়। এই বীজ নিজেরাই তৈরি করে চাষ করেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকদের চাষে পরামর্শ দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা কোথায় কী কাজ করেন তা জানেন না কৃষকরা। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে গেলেও পরামর্শের বদলে বহুজাতিক কম্পানির কীটনাশক ও বীজ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
আক্তাপাড়া গ্রামের শিমচাষি আবদুল জানের স্ত্রী মিনারা বেগম এবং একই গ্রামের শের ইসলামের স্ত্রীকে দেখা গেল ক্ষেত থেকে শিম তুলছেন। কিষানিরা ক্ষেত থেকে শিম তুলে নিয়ে যান বাড়িতে। সেই শিম বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন কৃষকরা। মিনারা জানালেন, এ মৌসুমে তাঁর স্বামী ৫০ শতাংশ ভূমিতে শিম চাষ করেছেন। গত ভাদ্র মাসে লাগিয়েছিলেন। কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিম তুলে বাজারে বিক্রি করছেন ৯০-৮০ টাকা কেজিদরে। দিন যত এগোতে থাকবে, তত ফলন বাড়বে। তবে বাজারমূল্য কমবে বলে তিনি জানান। এই কিষানি আরো জানান, ৫০ শতাংশ ভূমিতে তাঁর স্বামী শিম চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আশা করছেন, ৪০-৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। মিনারা জানালেন, ২০ বছর ধরে তাঁর স্বামী এই বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে শিম চাষ করে একজন স্বাবলম্বী কৃষক হয়েছেন।
একই গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা বালুতে তাঁদের এলাকার আমন ধানের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে ধান ফলত না। তাই ধীরে ধীরে কৃষকরা ধানের বদলে শিমসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজ ফলাচ্ছেন। তিনি জানান, ১৫-২০ বছর ধরে তিনি শিম চাষ করছেন। এবার প্রায় তিন একর জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে শিম চাষ করেছেন। আশা করছেন, তিন লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। তবে শিমচাষ লাভজনক হলেও কষ্টকর জানিয়ে তিনি বলেন, ফলন আসার পর প্রতিদিনই কীটনাশক ছিটাতে হয়। না হলে ক্ষেতে পোকার ব্যাপক আক্রমণ ঘটে।
আদাং গ্রামের শিমচাষি রফিকুল ইসলাম স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, 'অফিসাররা কোনোদিন পরামর্শ দিতে আসেন না। আমাদের ক্ষেতে খুদে মাকড় এবং শিম ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ বেশি। তাই প্রতিদিনই কীটনাশক দিতে হয়। প্রতি ৩০ শতাংশ ভূমিতে ৩০০-৪০০ টাকার কীটনাশক দিতে হয়। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা এবং ভালো ফলনের জন্য অফিসাররা পরামর্শ তো দূরের কথা, মাঝেমধ্যে এলেও বিভিন্ন কম্পানির কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেন।' রফিকুল অভিযোগ করেন, গত বছর তিনি অফিসারের কথা অনুযায়ী একটি বিশেষ কম্পানির তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করে প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
বিশ্বম্ভরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক চাষি এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ হাইব্রিড এবং বাকি ৬০ শতাংশ দেশীয়। তবে উপজেলার অন্য ইউনিয়নের চেয়ে সলুকাবাদ ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে শিম। এলাকার যেসব বেলে, দোঁ-আশ মাটিতে ধান চাষ হয় না, সেসব জমিতেই শিমসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়। চার দশক ধরে এই এলাকায় ধানের বদলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ টি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মথুরাকান্দিতে দীর্ঘদিন ধরে শিমচাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের চাষিকে চাষে কেন সহায়তা এবং পরামর্শ দেওয়া হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যাঁরা আমাদের কাছে আসে তাদের আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।' ক্ষেতে পোকা ধরলে কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমরা সরকারি চাকরি করি। কোনো কম্পানির প্রতিনিধিত্ব করি না।' তবে উন্নত ফলন এবং ক্ষেত পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে বলার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।
No comments