বাথরুমে শিশুর গলিত লাশ, শরীরে আঘাতের চিহ্ন, পোশাক ছেঁড়া- প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ
রাজধানীর তোপখানা রোডের এক বাসার বাথরুম থেকে রিতু আক্তার নামে ১০ বছরের এক শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে ৩ জনকে।
পাশবিক নির্যাতনের পর রিতুকে হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। এমন ঘটনায় স্থানীয়রা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীরা খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। স্থানীয়রা জানায়, ট্রপিকানা টাওয়ারে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গন্ধে সেখানে টেকা দায়। এমন অবস্থায় ভবনের বাসিন্দারা খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয় বাথরুম থেকে গন্ধ আসছে। বাথরুমের দরজার নিচ দিয়ে রক্তের মতো দেখা যায়। এমন অবস্থায় পুরো ভবনের লোকজন চারতলায় নেমে আসে। পরে তারাই পুলিশকে খবর দেন।খবর পেয়ে পুলিশ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন তোপখানা মোড়ের ৪৫ নম্বর ট্রপিকানা টাওয়ারের চতুর্থ তলায় অভিযান চালায়। চারতলায় মোট ৪টি বাথরুম। এর মধ্যে ২টি বাথরুম তালা দেয়া। মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে পুলিশ একটি তালাবদ্ধ বাথরুমের তাল ভেঙ্গে ফেলে।
বাথরুমের দরজা খোলামাত্রই চোখে পড়ে বীভৎস লাশ। মেয়ে শিশুর লাশ উপুড় হয়ে বাথরুমে পড়ে আছে। শরীরের অনেকাংশই পচেগলে গেছে। তার পরণে ছিল গোলাপী রঙের শীতের চাদর, ছাই রঙের টি শার্ট, মাল্টিকালারের বাটিকের কামিজ, কামিজটি ছেড়া, সবুজ লাল রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি, সাদা রঙের রক্তাক্ত সেলোয়ার কামিজ। রিতুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে রক্তমাখা কালো সেন্ডেল, রক্তমাখা জামাকাপড় ও ডিএনএ পরীক্ষা নিরীক্ষার রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে এমন খবরে পুরো এলাকার জনতার ঢল নামে। শত শত মানুষ ভবনটির চারতলায় অবস্থান নেয়। পুলিশ উৎসুক জনতার ভিড় ঠেকাতে হিমশিম খায়। রিতুকে পাশবিক নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয়।
এমন বীভৎসতা দেখে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শত শত মানুষ তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে ও জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের প্রতিটি রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জনতা বিক্ষোভের উত্তাপে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা যানবাহন ভাংচুরের জন্য উদ্যত হয়। বিক্ষোভকারীরা খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নতুবা আরও বড় ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এমন হত্যাকা-ের সমোচিত জবাব দেবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। পরে পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে খুনীদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দেন। এমন আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা থেকে সরে যান।
পুলিশ জানায়, রিতুর পরিবার তোপখানা রোডের ২৬ নম্বর টিনশেড বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করত। রিতু তার মা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে থাকত। রিতুর পিতার নাম আমিন উদ্দিন (মৃত)। বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানাধীন দুপুরিয়া গ্রামে। রিতুর বাবা মারা যাওয়ার পর নিতান্তই পেটের তাগিদে ভাত বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। ভাত বিক্রির ব্যবসায় মাকে সহায়তা করত ছোট্ট শিশু রিতু।
মা বাজার করেন। এরপর বাসায় রান্না করেন। আর রান্না করা ভাত, তরকারি প্লাস্টিকের বাটিতে ভরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনের ফ্লোরে ফ্লোরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতেন। মায়ের ব্যবসায় সহায়তা করত রিতু। সে দুপুরে ভাতের বাটি বিভিন্ন ভবনে পৌঁছে দিত। আর বিকেল হলেই খালি বাটিগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসত।
গত ১৪ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে রিতু বাটি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এদিকে রিতুর মায়ের ধারণা মেয়ে তাকে না বলেই বাড়ি চলে গেছে। রিতুর মা এমন ভাবনা ভেবেই কাজ সেরে যথারীতি প্রতিদিনের মতো বিকেলে বাসায় ফেরেন। কিন্তু রিতু বাসায় নেই। এরপর রিতুকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেন। মাইকিং করেন। কিন্তু কোন হদিস মেলেনি রিতুর।
ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশ জানায়, রিতু চারতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাতের বাটি সরবরাহ করত। আলামতের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।
শাহবাগ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, যে ফ্লোরে খাবার সরবরাহ করত সেই গোলাম মোস্তফা, সেলিম বিশ্বাস ও নজরুল ইসলাম নামে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। পাশবিক নির্যাতনের পর রিতুকে হত্যা করা হতে পারে। আবার রিতুকে আটকে রেখে কয়েক দিন ধরে গণধর্ষণ করার মতো ঘটনা ঘটাও বিচিত্র নয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রিতু যাদের দুপুরের খাবারের বাটি দিত এবং খালি বাটি ফেরত নিয়ে আসত সেসব ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। খুনীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
No comments