অনুশীলনের বিকল্প নেই ॥ গণিত এ কে এম আমান উল্লা মিয়া সহকারী প্রধান শিক্ষক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ পিলখানা, ঢাকা
শুভেচ্ছা নিও। এসএসসি পরীক্ষা খুবই সন্নিকটে। তোমরা এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। প্রস্তুতির পাশাপাশি পরীক্ষায় ভাল করার জন্য কিছু কৌশল থাকা আবশ্যক।
আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা, পরীক্ষক হিসেবে এবং প্রধান পরীক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতার আলোকে তোমাদের জন্য কিছু পরামর্শ ও কৌশল উপস্থাপন করলাম। আশা করি তোমরা উপকৃত হবে। (১) প্রথমত ভয়কে জয় করতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা খুব সন্নিকটে হলেই প্রচ- চাপ অনুভব করে যা তার ভাল প্রস্তুতির অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। মনে রাখতে হবে, এটা বিদ্যালয়ের পরীক্ষার মতই একটি স্বাভাবিক পরীক্ষা বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও নমনীয়।(২) পরীক্ষার হল নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রথম দিনেই পরীক্ষার হলকে নিজের মতো করে মানিয়ে নেবে যা তোমাকে একজন ভাল পরীক্ষার্থী হতে সাহায্য করবে। একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবে প্রত্যেক কক্ষ পরিদর্শক তোমার একজন বন্ধুর মতো। তোমার যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে কক্ষ পরিদর্শকই তোমাকে সাহায্য করবে। সেক্ষেত্রে তোমার উত্তম আচরণই প্রধান হাতিয়ার।
(৩) পরীক্ষার হলে পরিদর্শকের নিকট হতে খাতা সংগ্রহের পরই রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর, বিষয় কোড ও তোমার বিভাগের নামের বৃত্তটি সাবধানতার সঙ্গে ভরাট করবে। কোন কারণে ভুল হলে পরিদর্শককে অবহিত করবে। কাটাকাটি করবে না। অতিরিক্ত পৃষ্ঠা নিয়ে থাকলে অবশ্যই নম্বরটি কভার পৃষ্ঠার নির্দিষ্ট ঘরে লিখে বৃত্ত ভরাট করবে। একজন আদর্শ পরীক্ষার্থী হিসেবে তুমি অবশ্যই প্রত্যেক পৃষ্ঠায় মার্জিন করবে।
(৪) একজন আদর্শ পরীক্ষার্থীর সময়জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। তুমি যে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে চাও সেগুলোর সময় বণ্টন করে নেবে। এ কৌশলটি তোমাকে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর করার নিশ্চয়তা প্রদান করবে। মনে রাখবে একটি উত্তর খুব বেশি বড় করার চেয়ে প্রতিটি প্রশ্নের যথাসময়ে যথার্থভাবে উত্তর প্রদান ভাল ফলাফলের শ্রেষ্ঠ উপায়। প্রশ্নোত্তরের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা সহজ ও জ্ঞাত প্রশ্নের উত্তরটি সর্বপ্রথমে করবে। এর ফলে পরীক্ষক তোমার সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করবে যা তোমাকে পরবর্তী উত্তরগুলোতে ভাল নম্বর পেতে সাহায্য করবে।
(৫) গণিত, হিসাববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের মতো যেসব বিষয়ে গাণিতিক সমস্যার সমাধান চাওয়া হয় সেগুলোর অবশ্যই উত্তর লিখতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় টীকা, নোটস, চিত্র বা সারণির প্রয়োজন থাকলে তা অবশ্যই যথার্থভাবে উপস্থাপন করবে।
(৬) এটা খুবই লক্ষণীয় যে, অনেকে সামান্য কয়েকটি লাইনের মাধ্যমে একটি পৃষ্ঠা সমাপ্ত করে থাকে। এর ফলে উক্ত শিক্ষার্থীর অপচয় প্রবণতা প্রকাশ পায়। একজন আদর্শ পরীক্ষার্থী হিসেবে তুমি অবশ্যই প্রতি পৃষ্ঠায় কমপক্ষে ১০-১২ লাইন এবং প্রতি লাইনে ৮-১০টি করে শব্দ লিখবে। প্যারাগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখবে এবং প্রতিটি লাইনের দূরত্ব সমান রাখার চেষ্টা করবে। প্যারার শিরোনাম থাকলে তার নিচে নীল কালির দাগ টেনে দেওয়া যেতে পারে। এতে তোমার লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবে, সুন্দর হস্তাক্ষর ও সুন্দর উপস্থাপনা কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনের একটি অন্যতম কৌশল।
(৬) প্রিয় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার মাত্র স্বল্প সময় বাকি। এ অবশিষ্ট সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত কর এবং প্রত্যেকটি বিষয়কে সময় অনুযায়ী বণ্টন করে নাও তাহলে বিষয় প্রতি রিভিশন করা খুব সহজ হবে। ধরে নাও আজকের দিনটি তোমার হাতে থাকা শেষ সময়। মনে রাখবে শেষ ভাল যার সব ভাল তার।
(৭) গণিত বিষয়ের একজন পরীক্ষক/প্রধান পরীক্ষক হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তোমাদের সচেতনতা প্রত্যাশা করছি। সাধারণত গণিতের চারটি অংশের মধ্যে জ্যামিতি অংশটি তোমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ অংশটির ওপর একজন শিক্ষার্থীর গণিত বিষয়ে এ+ নির্ভর করে। প্রস্তুতির এ সময়টিতে উপপাদ্য ও সম্পাদ্যের সাধারণ নির্বচন ও চিত্র বার বার করে লিখবে ও আঁকবে।
জ্যামিতির চিত্র সঠিক হলে বর্ণনাও সঠিক হবে যা তোমকে এ+ পেতে সহায়তা করবে। ত্রিকোণমিতির ক্ষেত্রে ভূমি, লম্ব ও অতিভূজের অনুপাত সঠিকভাবে আঁকার অভ্যাস করবে। পরিমিতির অংশে ভাল করতে হলে সূত্রগুলো বার বার প্র্যাকটিস কর। বীজগণিতের অংশে ভাল করার জন্য অধ্যায়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ অংকগুলোর অনুশীলন করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রত্যেক অধ্যায় হতে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণগুলো ভালভাবে অনুশীলন করবে। তাছাড়া বিগত তিন/চার বছরের বিভিন্ন বোর্ডের প্রশ্নগুলো ও অনুশীলন করবে।
(৮) পরীক্ষার রাতে বেশিক্ষণ জেগে থাকা ঠিক নয়। তাছাড়া পরীক্ষার রাতে কোন নতুন বিষয় আয়ত্ত না করাই উত্তম। যথাসম্ভব পূর্বের পঠিত বিষয়গুলো ভাল করে রিভিশন করে নেবে।
সর্বোপরি তোমাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যহানি ঘটে এমন যে কোন কাজ থেকে বিরত থাকবে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে। যথাসম্ভব পরীক্ষার আগ পর্যন্ত প্রতিটি মূহূর্তের যথার্থ মূল্য দেবে। মনে রাখবে একটি প্রত্যাশিত ফলই তোমাকে ভাল একটি কলেজে ভর্তির পথকে সুগম করবে।
No comments