সময় ভাগ করে প্রস্তুতি নাও- অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীর জন্য শুভকামনা। আশা করি তোমরা ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়েছ। এখানে ভাল ফলের ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ।
এ পরীক্ষায় তোমাদের মেধার সর্বোচ্চ প্রতিফলন যেন ঘটে সেদিকে নজর দেবে। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাওয়ার পর তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থির থেকে, সময় নিয়ে প্রশ্ন পাঠ করবে। এরপর যে প্রশ্নগুলো তোমার সবচেয়ে সহজ মনে হবে সেই প্রশ্নের উত্তর লিখতে শুরু করবে। উত্তর লেখার সময় প্রশ্নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। যে প্রশ্নের উত্তর তোমার কম জানা, সেগুলো শেষ দিকে লিখবে। যাতে পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নের সময় প্রথম দিকে তোমার অধীত বিষয়ের উত্তরগুলো দেখে ভাল ধারণা করতে পারেন। কোনভাবেই পরীক্ষার হলে অস্থির হবে না। বরং হলে অবস্থানকালীন পুরো সময় সুস্থির থেকে পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষার আগের রাতে এবং সম্ভব হলে পরীক্ষার দিন সকালে সে দিনের বিষয়টি শেষবাবের মতো রিভিশন দেবে। পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই। সারা বছর তোমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছ তা নিয়েই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করবে। পরীক্ষার সময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরী। শেষ মুহূর্তে কোন অপূর্ণতা নজরে এলে হতাশ হবে না। কারণ, সকল পরীক্ষার্থীরই কিছু না কিছু অপূর্ণতা থাকে। আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পরীক্ষার হলে যাবে এবং উত্তরপত্রে লেখাই হচ্ছে পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। অভিভাবকম-লী স্বাভাবিকভাবেই সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। এ জন্য তাঁরা অনেক সময় সন্তানদের প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত চাপ দেন। অভিভাবক ম-লীর প্রতি আমার পরামর্শ শেষ মুহূর্তে এবং পরীক্ষার হলে প্রবেশকালে পরীক্ষার্থীদের কোন ধরনের মানসিক চাপ দেবেন না। সব সময় তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবেন।আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মু্িক্তযুদ্ধ শুরু করেছিলাম। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে আমরা এ দেশ অর্জন করেছি। সুন্দর এই দেশকে আরো সুন্দর-সমৃদ্ধ করা দরকার। সেজন্যই নেতৃত্ব দরকার। আর এ নেতৃত্ব দেবে তোমরা। ২০২১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করবে। সুবর্ণজয়ন্তী পালন হবে। সে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেখানে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর হবে। সেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য কমে যাবে। বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর জন্য মডেল। যে কথা ইতোমধ্যেই বলেছেন অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অর্মত্য সেন। তারপরও তোমরা দেখছো ইংল্যান্ডের বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলা হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোকে ছড়িয়ে যাবে। সেসব কথা মনে রেখে তোমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূণ পরীক্ষায় অবশ্যই ভাল করতে হবে।
হাতে খুব বেশি সময় নেই।০ এই সময়ের মধ্যেও কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার। পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করবে না। বরং যে সময়টুকু আছে, সে সময়টুকু প্রস্তুতির জন্য সর্বোত্তম ব্যবহার কর। এ ক্ষেত্রে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। সুস্থ দেহে সুস্থ মনে প্রস্তুতি নাও। অবশ্যই কাঙ্খিত ফল অর্জন করবে। রুটিন অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিষয়ের প্রতি সময় ভাগ করে প্রস্তুতি নাও। পরিকল্পনা ছাড়া কিছু আশা করা যায় না। পরিকল্পনার জন্য একটু সাহায্যও নিতে পার। আগে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের কাছ থেকে । স্কুলের শিক্ষকদের সাথেও পরামর্শ করতে পার। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেবে। খাবার গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবে। স্কুলে এবং বাড়িতে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করলে অন্যান্য বিষয়ের মতোই ইংরেজী ও গণিতে ভাল করা যায়। ইংরেজী ও গণিতের ভীতি যতটা না বাস্তবিক তারচেয়ে বেশি প্রথাগত ও মানসিক। বানানের ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। গণিতের মৌলিক নিয়ম রপ্ত করে রাখতে হবে। তোমাদের জন্য রইল শুভকামনা।
অনুলিখন : আহমেদ রিয়াদ
No comments