লাভ হয়নি ঘড়ির কাঁটা এগিয়েঃ দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের
বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছিল জরুরি অবস্থার সরকার। সমাজের সব মহলের বিরোধিতার মুখে তখন স্থগিত হলেও মহাজোট সরকার ডিজিটাল ব্যবস্থার কথা বলে গত ১৯ জুন থেকে সেটা বাস্তবায়ন করে। হিসাব কষে তখন বলা হয়েছিল, এতে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
এমন কথায় বিদ্যুত্ সঙ্কটে কাহিল অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়েছিলেন। তখন থেকে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আসে। ‘ডিজিটাল সময়ে’ ঢুকে পড়ে বাংলাদেশ। ঋতু পরিবর্তনে দিন ছোট হয়ে আসার কথা মাথায় রেখে সে সময় বলা হয়েছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে। ১ অক্টোবর থেকে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে ঘড়ির কাঁটা। কয়েক মাসের জন্য চালু করা হলেও এখন সরকার ডিজিটাল সময়কে স্থায়ী করে নিয়েছে। পূর্ব ঘোষণা বাতিল করে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় ঘড়ির কাঁটা না পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পেছনে আসলে কী যুক্তি কাজ করেছে, সেটা সাধারণ মানুষ জানতে পারেনি ডিজিটাল সরকারের কাছ থেকে।বাস্তবে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে এনে বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের আলামতও পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুত্ সরবরাহ বেড়েছে, এমন চাক্ষুষ প্রমাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। শীতের মধ্যে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থেকে বোঝা যায় বিদ্যুত্ পরিস্থিতির উন্নতি কতটা হয়েছে। অথচ চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। গতকালের আমার দেশ বিষয়টি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রথম পৃষ্ঠার ছবিতে দেখা গেছে প্রত্যুষের আলো-আঁধারিতে রিকশায় মায়ের কোলে ঘুমন্ত শিশু স্কুলে যাচ্ছে। সকাল সাতটার স্কুল ধরতে তাকে টেনে-হেঁচড়ে ঘুম থেকে তুলতে হয়েছে আরও দেড়-দু’ঘণ্টা আগে। শীতের আগমনে এমনিতেই এ সময় শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে ভুগতে হয়। সূর্য ওঠারও আগে জোর করে ঘুম থেকে তুলে হাত-মুখ ধুইয়ে শিশুদের খাওয়ানোর বিড়ম্বনা ভুক্তভোগী মাত্রই স্বীকার করবেন। যাদের নিজস্ব গাড়ি নেই তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। রাস্তায় রিকশা খুঁজে পেলে ভাগ্য ভালো, কিন্তু চলার পথে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে শিশু শিক্ষার্থী। কুয়াশাভেজা ভোরের বাতাসে তারা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। এভাবে স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের মানসিক প্রতিক্রিয়াও নেতিবাচক হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, সাংসারিক বিড়ম্বনা ছাড়াও পথে যানবাহনের সমস্যার সঙ্গে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয় অভিভাবকদের। কিন্তু নাগরিকদের এ ধরনের সমস্যা নিয়ে মোটেই মাথাব্যথা নেই সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের। শিশুদের স্কুলে উপস্থিতির হার কমে যাওয়া বা তাদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল। এমন ডিজিটাল জেদ অন্যান্য সরকারের মধ্যে কমই দেখা গেছে।
বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের যে অমোঘ তত্ত্ব হাজির করে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হলো, তাতে নেমে আসে নাগরিক জীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ। বিস্মিত হতে হয় এ নিয়ে সুশীল ব্যক্তিবর্গ ও রাজনীতিকদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এমনকি প্রধান বিরোধী দলও বিষয়টি গোনায় ধরেছে বলা যাবে না। জরুরি অবস্থার সরকারের আমলে সৃষ্ট বিভ্রান্তি-বিভক্তি কাটিয়ে উঠতেই দলটি যেন বেশি হিমশিম খাচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে জর্জরিত মানুষের আহাজারি মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। কার্যকর চাপ বা আন্দোলনের অনুপস্থিতিতে মহাজোট সরকার ভুল সিদ্ধান্ত বদল করতে মোটেই গরজ দেখাচ্ছে না। দিনবদলের কথা ক্ষমতাসীন নেতা-নেত্রীদের মুখের ভাষণেই আটকে থাকছে। তবে ডিজিটাল সময়ের বুদ্ধি সরকারকে যারাই দিক, তাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল যে পাওয়া যায়নি তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এই মহাজ্বালা মানুষকে আর কতদিন সহ্য করতে হবে কে জানে!
No comments