মেলায় নানা অব্যবস্থাপনা

টোকাই, হকার, ফকিরের উপদ্রব বেড়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। যত্রতত্র পরিত্যক্ত পলিথিন উড়ছে দেদার। মোবাইল, ল্যাপটপ চুরির ঘটনাও ঘটছে। স্টল থেকে ক্রেতা ডাকাডাকি চলছে গুলিস্তানি কায়দায়। উদ্বোধনের ১১তম দিনেও কোনো কোনো প্যাভিলিয়ন রয়েছে নির্মাণাধীন। এসব কারণে জৌলুস হারাচ্ছে মেলা। উচ্চ-মধ্যবিত্তরা এখনও মেলাবিমুখ। এখনও বিদেশি দর্শকের সমাগম তেমন হচ্ছে না।


মেলা আয়োজনে এ বছর চরম বিশৃঙ্খলা নিয়ে আয়োজক খোদ ইপিবিও হতাশ। মাঠে ইপিবির মেলা সচিবালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল সমকালকে বলেছেন, ১৭ বছর ধরে মেলা আয়োজন করছে ইপিবি, কখনও এবারের মতো এত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হয়নি। তিনি বলেন, স্টল বরাদ্দ নিয়ে অনিয়ম, প্যাভিলিয়ন মালিকদের ইচ্ছামতো স্থান বরাদ্দ এমনকি বরাদ্দকৃত প্যাভিলিয়নের বিপরীতে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এখনও টাকা জমা দেয়নি বলে জানান তিনি। নাম ও পরিচয় গোপন রাখতে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন এ কর্মকর্তা। এসবের সঙ্গে বিরূপ আবহাওয়া। এসব কারণে মেলার আয়ু প্রায় মাঝ পর্যায়ে গড়ালেও প্রাণ আসেনি এখনও।
এশিয়ান টেক্সটাইল মিলের প্যাভিলিয়নে গ্রুপ ডিরেক্টর মিজানুর রহমান বাবুল জানালেন, গত বছর এ পর্যায়ে যে পরিমাণ বিক্রি ছিল এ বছর তার অর্ধেকও নেই। গত আয়োজন থেকে তাদের বিক্রি ছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। এ বছর ৫ কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে মেলায় অংশ নিয়েছে তারা। মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ করে মিজান বলেন, মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি ঘটনায় অনেকে বিব্রত হচ্ছেন। তবে বেচা-বিক্রি আপত্তি থাকলেও পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পেয়ে খুশি আছেন তারা। শার্টিং-শুটিংয়ের বিশাল সম্ভার নিয়ে প্যাভিলিয়ন সাজালেও মেলায় কোনো ছাড়ের ব্যবস্থা নেই তাদের।
বেক্সি ফেব্রিক্সের প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম জুয়েল জানান, বেচা-বিক্রি একেবারে মন্দ না। তবে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। এ বছর এ পর্যন্ত সাত থেকে আট লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত বছর তাদের মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৫ লাখ টাকার মতো। বেক্সির নিয়মিত পণ্যের সঙ্গে মেলা উপলক্ষে বিশেষ কিছু পণ্য আনা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে পণ্যে কোনো ছাড় না থাকলেও সব পণ্যের সঙ্গে একটি দৃষ্টিনন্দন ডেস্ক ক্যালেন্ডার দিচ্ছে বেক্সি।
হোম ট্যাক্সের বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, এ বছরই প্রথম তারা বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছে। মেলার বেচা-বিক্রি নিয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই । তবে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। মেলা গেটে কোনো পণ্য নিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার কথা তিনি বলেন। সাধারণ কোন পণ্য নিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ৮ থেকে ১০টা টিকিট কিনতে বাধ্য করছেন গেট ইজারাদাররা। তিনি বলেন, একটা পানির জার আনতে ১০টা টিকিট কাটতে হয়। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এসব কারণে কোনো ক্রেতা পণ্য কিনে একবার মেলা গেটের বাইরে গেলে প্রয়োজনে আর পরিবর্তন করতে পারেন না। হাতে বহনযোগ্য একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে ২০ টাকা মূল্যের অন্তত ৫টি টিকিট কিনতে হয়। আধুনিক সব ধরনের বেডসিট, কভার, পর্দায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে হোম ট্যাক্স।
এক্সটাচির বিপণন সহকারী ফারজানা জানান, ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জিতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ এবং মেয়েদের পোশাকে ৫০ শতাংশসহ বাচ্চাদের বিভিন্ন পোশাকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে তারা।
মেলা উপলক্ষে সাধারণ পণ্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫টি পণ্য বিক্রিও প্রদর্শন করছে এক্সটাচি। মেলা উপলক্ষে বেশি দাম লিখে তার ওপর বেশি ছাড় দিচ্ছে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ফারজানা জানান, আমাদের অন্যান্য শোরুমের সঙ্গে তুলনা করলে ক্রেতারা দাম যাচাই করতে পারবেন। এ ছাড়া স্বয়ক্রিয় পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ এবং বিক্রি করায় এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.