জরুরি সরকারের টাকা হাতানোর বিরুদ্ধে রুল জারিঃ সব অপকর্মের বিচার হতে হবে
ধর্মের কল যে বাতাসে নড়ে, তা আবার প্রমাণ হতে চলেছে সোমবার হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কর্তৃক রুল জারির মধ্য দিয়ে। জরুরি অবস্থায় সেনা-সমর্থিত সরকারের আমলে ডিজিএফআই মেঘনা সিমেন্ট কোম্পানির কাছ থেকে ৫২ কোটি টাকা জোর করে হাতিয়ে নিয়েছিল। মেঘনা সিমেন্ট কোম্পানির মালিক বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সে টাকা সুদে-আসলে ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন।
সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মামুনুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ ব্যাপারে রুল জারি করে ডিজিএফআই’র মহাপরিচালক, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও জনতা ব্যাংককে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন। রিট আবেদনে দাবি করা হয়, জেনারেল মইন উ আহমেদ নিয়ন্ত্রিত জরুরি অবস্থার সরকারের সময় নির্যাতনের মুখে বেআইনি ও অবৈধভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের মেঘনা সিমেন্ট কোম্পানির কাছ থেকে ৫২ কোটি টাকা ডিজিএফআই নিয়ে যায়। সন, তারিখ, পে-অর্ডারের নম্বর এবং কোন ব্যাংকের কোন শাখার অনুকূলে দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকাগুলো নেয়া হয়েছিল, সে সবের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে রিট আবেদনে। এতে বলা হয়, তখন ডিজিএফআই কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, লে. কর্নেল আফজাল, লে. কর্নেল মোয়াজ্জেম ও লে. কর্নেল জাহিদ ছিলেন ডিজিএফআই কার্যালয়ে খুবই ক্ষমতাধর। তারা আইনের তোয়াক্কা না করে যখন-তখন যাকে খুশি ধরে নিয়ে যেতেন। ধরে নেয়ার পর ডিজিএফআই’র অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিনের পর দিন নির্যাতন চালানো হতো। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শ্যালকসহ কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ডিজিএফআই মাসাধিককাল নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। মূলত তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য সে যাত্রায় একান্ত বাধ্য হয়ে ডিজিএফআই’কে ওই পরিমাণ টাকা দিতে হয়।এ অভিযোগ সত্য হলে এটাকে রাষ্ট্র প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্রেফ ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জরুরি সরকারের আমলে এ ধরনের অপরাধ ঘটানো হয়েছে। সে আমলে ডিজিএফআই হয়ে উঠেছিল নিপীড়নের প্রতীক। ডিজিএফআই দফতরের পাশের রাস্তায় দাঁড়ালে ভেতর থেকে নির্যাতিতদের আর্তচিত্কার প্রায়ই শোনা যেত বলে ব্যাপক জনশ্রুতি আছে। শুধু ডিজিএফআই নয়, মইন-ফখরুদ্দীনের স্বৈরশাসনামলে এ ধরনের নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল ঘাটে ঘাটে। দুর্নীতি দমনের নামে সে সময় চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তার নিরপেক্ষ বিচার হওয়া দরকার।
অজ্ঞাত কারণে বর্তমান সরকার মইন-ফখরুদ্দীনের জরুরি তাণ্ডবের বিচারে অনাগ্রহী। অথচ সেই আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপরও নির্যাতন-নিপীড়ন একেবারে কম হয়নি। যারা জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে দু’বছর ধরে একের পর এক জঘন্য সব অপকর্ম করে গেল, উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দিল, তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা না হলে ঘুঘুরা বার বার ধান খেয়ে যাবে; করার কিছুই থাকবে না। এই সোজা কথা না বুঝে বর্তমান সরকার শুধু জরুরি আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে একের পর এক প্রত্যাহারে ব্যস্ত। অথচ একই আমলে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুরভিসন্ধিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা তো হচ্ছেই না, বরং এগুলো নতুন করে চাঙ্গা করা হচ্ছে। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বেলাতেও সরকার একই খেলা খেলছে। এতে দলবাজির ষোলকলা পূর্ণ হচ্ছে বটে, গণতন্ত্র কিন্তু থেকে যাচ্ছে অরক্ষিত।
No comments