বৈকুণ্ঠের 'জননী-যন্ত্রণা' by কামরুজ্জামান মিলু

৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আবৃত্তি সংগঠন বৈকুণ্ঠের নতুন প্রযোজনা 'জননী-যন্ত্রণা'। বিস্তারিত লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু 'মা', 'মাগো'_যা-ই বলি না কেন, যেভাবেই বলি না কেন, হতে পারে তা প্রচণ্ড ভয়ে কোনো এক আর্তচিৎকার, হতে পারে ভীষণ বিপদে 'মা মা' বলে আশ্রয় খুঁজে ফেরা, হতে পারে তা ভীষণ নিঃসঙ্গতার হাহাকার, বুকফাটা আর্তনাদ।


যেভাবেই বলি না কেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষণে এই একটি শব্দই (মা) হয়ে ওঠে আমাদের পরম আশ্রয়স্থল। সেই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বৈকুণ্ঠের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় মিলনায়তনে ভিড় জমিয়েছেন দর্শক-শ্রোতারা। কাশবনের সাজানো সুন্দর-সুবিস্তৃত মঞ্চে ঠিক সাড়ে ৬টায় পর্যায়ক্রমে হাজির হন আবৃত্তিশিল্পীরা। প্রথমেই আবৃত্তিশিল্পী শামীমা শাম্মী 'আমার মায়ের চোখ' শিরোনামের রফিক আজাদের কবিতা দিয়ে আবৃত্তি অনুষ্ঠানটি শুরু করেন। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম, ততক্ষণে লোকজন কানায় কানায় পূর্ণ। হবেই না কেন, সব মাকে উৎসর্গ করেই যেন বৈকুণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমী এই অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছে।
মাকে স্মরণ করে সব খ্যাতনামা লেখকের কবিতা পর্যায়ক্রমে আবৃত্তি করে শোনান আজিজুল বাসার মাসুম, ফারাহ্ দিবা, খালেদা শাপলা, সঞ্চিতা নাসরিন, ফারজানা মালিক নিম্মি, নাজনীন সুলতানা সুখী, আফসানা পারভীন লুনা, রাজু আনোয়ার, জসীম উদ্দিন মানিক, শাম্মী আক্তার শীলা, মাহমুদুল হাকিম, গোলাম সারোয়ার, তানিয়া মোনালিসা, অপরাজিতা সাহা, কাজী তাহিয়া ইসলাম, সাকিজ উদ্দিন সরকার, হাসান কামরুল প্রমুখ। কোনো বিরতি না দিয়ে টানা কবিতা আবৃত্তি করেন এসব শিল্পী। শুধু তাই নয়, কবিতা অনুযায়ী মঞ্চের পেছনের প্রজেক্টরের পর্দায় দেখানো (মা ও শিশুর) ছবিও বদলাতে থাকে। কবিতার প্রাণবন্ত কথার সঙ্গে যেন ছবি ভেসে ওঠে। সব কিছু ছেড়ে সবাইকে পেঁৗছে দেয় ছোটবেলার স্মৃতি এবং মায়ের সঙ্গে সন্তানের ভালোবাসার গল্পে। অনেক দর্শকেরই মনে ভেসে ওঠে নিজ মায়ের মুখ। কারো কারো চোখের কোণে অশ্রুও দেখা যায়।
বৈকুণ্ঠের এই নতুন প্রযোজনা 'জননী-যন্ত্রণা' অনুষ্ঠানে আবৃত্তিশিল্পীরা মোট ২২টি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। এর মধ্যে কবি রাজদাশের 'মা', শুভাদাস গুপ্তের 'জন্মদিন', আবদুর রশীদ খানের 'বিদেশে পহেলা বৈশাখ', তসলিমা নাসরিনের 'সবিতার কবিতা', 'মায়ের কাছে চিঠি', 'সোল নিলসন' ও 'কিছু যেত-আসত না', সৈয়দ শামসুল হকের 'আর কত রক্তের দরকার হবে', শৌনক দত্ত তনুর 'মা', মহাদেব সাহার 'আশীর্বাদের হাত', হুমায়ুন আজাদের 'আমাদের মা', আজিজুর রহমান আজিজের 'অর্কিডের মিছিল', মুহম্মদ নূরুল হুদার 'দুধ খোকা', জসীমউদ্দীনের 'পল্লী জননী', শামসুর রাহমানের 'জলপাইয়ের পল্লবে পল্লবে', নির্মলেন্দু গুণের 'নিজের ঘরে আগুন', রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'মনে পড়ে' এবং রফিক আজাদের 'আমার মায়ের চোখ'। পুরো অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় শিমুল মুস্তাফা এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আজিজুল বাসার মাসুম।
'জননী-যন্ত্রণা' প্রসঙ্গে শিমুল মুস্তাফা বলেন, 'বৈকুণ্ঠ সব সময়ই নতুন ভাবনা থেকে অনুষ্ঠান প্রযোজনার চেষ্টা করে থাকে। আমাদের এবারকার প্রযোজনাটিও সেই ধরনের প্রয়াস থেকেই করা।'

No comments

Powered by Blogger.