৭ নভেম্বরের শিক্ষা by ইয়ামিন খান
আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। এ দিবসটি প্রত্যেক দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ‘মানুষের কাছে’ অত্যন্ত স্মরণীয় দিন। আজ থেকে প্রায় ৩৪ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমিক সিপাহি-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সব আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগসল্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে।
কিন্তু তারপরও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। একপর্যায়ে ৩ নভেম্বর প্রতিবিপ্লবের মধ্য দিয়ে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তার ক্যু করার উদ্দেশ্য ছিল এদেশের ওপর সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, যার পরিণতিতে খন্দকার মোশতাক আহমদ বন্দি হন এবং ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের সামরিক নেতাদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা গ্রহণের পর আধিপত্যবাদ ও তাদের দোসররা একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব স্লমকির সম্মুখীন করে। জাতি প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং দেশ এক ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়। এমতাবস্থায় ৭ নভেম্বর রাতে দেশপ্রেমিক সিপাহিরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে পড়েন। খালেদ মোশাররফ তার সাঙ্গপাঙ্গসহ নিহত হন। আগ্রাসী আধিপত্যবাদ ও তাদের পদলেহী অনুগত দোসরদের পরাজিত করে ৭ নভেম্বর রাতের সব অন্ব্দকার ও ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাস্ল আকবার, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ আওয়াজ তুলে লাখো সিপাহি-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলেন, এ ছিল অধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বজ্র নির্ঘোষ, যার কারণে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট। ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলেন। যারা সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করেছিল, জিয়া তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; যার পরিণতিতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। আজ ৩৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনাকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্লমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং আধিপত্যবাদী ভারতের সঙ্গে একের পর এক চুক্তি করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। যেমন—টিফা চুক্তি, টিপাইমুখ বাঁধ, এশিয়ান হাইওয়ে, করিডোর, ট্রানজিট, দীর্ঘমেয়াদি সামরিক চুক্তি, মার্কিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে গ্যাস রফতানির চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার, দক্ষিণ এশীয় সন্ত্রাসবিরোধী টাস্কফোর্স এবং বঙ্গোপসাগরে টাইগার শার্কের নামে মার্কিন-বাংলাদেশ যৌথ সামরিক মহড়া ইত্যাদি। এসব চুক্তির মাধ্যমে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের অজুহাত তুলে সরকার দেশে বিদেশি আগ্রাসনের পথকে সহজ করে দিতে চায়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশলগত স্বার্থে বঙ্গোপসাগরে বিমান ও নৌঘাঁটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। আর এসব কারণে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করাতে চায়। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জবাব দিতে পারে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের কালজয়ী দেশপ্রেম ও রণকৌশল। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে।
লেখক : ছাত্র, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর
No comments