শ্রম আইন :একটি পর্যালোচনা by শরিফুল ইসলাম সেলিম
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর ১৫ জুলাই
সংসদে সংশোধিত শ্রম আইন-২০১৩ পাস হয়েছে। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী
প্রতিশ্রুতি ছিল এই আইন। সংসদে অনুমোদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার একে
দেশের শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি বলে আখ্যায়িত করেছে।
বলা হয়েছে, এ আইনের সংশোধনী পাসের ফলে দেশের শ্রম পরিবেশে স্থিতিশীলতা
আসবে। কিন্তু আইনের নানা দিক বিবেচনায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই আইনটিও শ্রমিক
শোষণ কমাতে পারবে না। গত ২২ এপ্রিল মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর
সংশোধনী প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন ট্রেড
ইউনিয়ন সংগঠন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ সংশোধনী প্রস্তাবের নানা
ত্রুটিপূর্ণ দিক সম্পর্কে সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে অবহিত করেছে। তা ছাড়া এ
সংশোধনী প্রস্তাব প্রস্তুতের আগে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পর্যায়ে
আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিক নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ সভা করেছে বলে শোনা
গেছে। কিন্তু এসবের কোনো প্রতিফলনই অনুমোদিত শ্রম আইনের দেখা যায়নি। তাজরীন
গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ড, রানা প্লাজায় স্মরণকালের ভয়াবহ ধসের পর দেশের
শ্রমিক সংগঠনগুলোর তীব্র আন্দোলন, বিদেশি ক্রেতা এবং ভোক্তা সংগঠন ও দাতা
প্রতিষ্ঠানের চাপের মুখে শ্রম আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সংশোধিত
শ্রম আইনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলোর পর্যালোচনা তুলে ধরা হলো।
এ আইনের ইতিবাচক দিকগুলো হলো : ১. এ আইন অনুসারে ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলেই সে প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনকালে কোনো শ্রমিক প্রতিনিধিকে অন্য কোথাও বদলি করা যাবে না; ২. কোনো কারখানায় ১০০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য গোষ্ঠী বীমা নিশ্চিত করতে হবে; ৩. ৫০০-এর বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। তা ছাড়া তাদের জন্য একজন শ্রম কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে; ৪. পোশাকশিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা অপসারণই এ আইনের ইতিবাচক দিক। এ ছাড়াও নতুন আইনে জাহাজ নির্মাণ, জাহাজভাঙা, ওয়েল্ডিং, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, কৃষিশ্রমের সঙ্গে জড়িতদের এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নেতিবাচক দিকগুলো আলোচনা হচ্ছে : ১. সংশোধিত শ্রম আইনের ৩০৯ ধারায় বিপজ্জনক পরিণতিসম্পন্ন আইন লঙ্ঘনের জন্য নিয়োগকর্তা ও মালিকদের জন্য যে দণ্ড বিধান করা হয়েছে তা অপর্যাপ্ত। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকের সারাজীবনের আয়ের হিসেবে ও পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মতো ক্ষতিপূরণের বিধান থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল; ২. সংশোধিত শ্রম আইনের ২৩(৩), ৪(ছ) ধারায় শ্রমিকের অসদাচরণের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে তাও ত্রুটিপূর্ণ। যার আশ্রয় নিয়ে মালিকরা নিরপরাধ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করতে পারে। তা ছাড়া এই ধারার সংশোধিত প্রস্তাবটি এই আইনের ২৩ ও ২৪ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক; ৩. ধারা ২(৪৫)-এ মজুরির সংজ্ঞা হতে বাড়িভাড়া বাদ দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের এই শ্রমিক শ্রেণীর ওপর এই বিধান দ্বিগুণ চাপের সৃষ্টি করবে; ৪. ধারা ১০-এ ছুটির মেয়াদের ক্ষেত্রে সাময়িক ও অসুস্থতাজনিত ছুটি অন্তর্ভুক্ত কি-না তা স্পষ্ট করা হয়নি; ৫. নারী শ্রমিকদের জন্য মাতৃকল্যাণ সুবিধা ৬ মাসে উন্নীত করার বহুল আলোচিত বিধানটিও সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি; ৬. রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার না দেওয়া সমীচীন হয়নি; ৭. বিদেশি মালিকানাধীন কারখানায় প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছর ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা হয়েছে; ৮. ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত কর্মস্থলে যৌন নিপীড়ন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও এই আইনে নারী শ্রমিকদের ওপর যৌন নিপীড়ন প্রতিকারের বিধান নেই; ৯. শ্রমিকদের নিয়োগ ও বরখাস্ত, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মালিকের অনিয়ম রোধের শর্ত আইনে স্পষ্ট নয়।
কেবল জিএসপি সুবিধা পাওয়া বা রক্ষার জন্য নয়, দেশে টেকসই শিল্পায়নের জন্যই শ্রমিকবান্ধব শ্রমনীতি থাকা জরুরি। বর্তমানে দেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৯৪ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে কর্মরত। সঙ্গত কারণেই এ আইনের ত্রুটির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাত এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক শ্রেণী।
য় শরিফুল ইসলাম সেলিম :শিক্ষানবিশ আইনজীবী
এ আইনের ইতিবাচক দিকগুলো হলো : ১. এ আইন অনুসারে ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলেই সে প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ট্রেড ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনকালে কোনো শ্রমিক প্রতিনিধিকে অন্য কোথাও বদলি করা যাবে না; ২. কোনো কারখানায় ১০০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য গোষ্ঠী বীমা নিশ্চিত করতে হবে; ৩. ৫০০-এর বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। তা ছাড়া তাদের জন্য একজন শ্রম কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে; ৪. পোশাকশিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা অপসারণই এ আইনের ইতিবাচক দিক। এ ছাড়াও নতুন আইনে জাহাজ নির্মাণ, জাহাজভাঙা, ওয়েল্ডিং, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, কৃষিশ্রমের সঙ্গে জড়িতদের এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নেতিবাচক দিকগুলো আলোচনা হচ্ছে : ১. সংশোধিত শ্রম আইনের ৩০৯ ধারায় বিপজ্জনক পরিণতিসম্পন্ন আইন লঙ্ঘনের জন্য নিয়োগকর্তা ও মালিকদের জন্য যে দণ্ড বিধান করা হয়েছে তা অপর্যাপ্ত। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকের সারাজীবনের আয়ের হিসেবে ও পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মতো ক্ষতিপূরণের বিধান থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল; ২. সংশোধিত শ্রম আইনের ২৩(৩), ৪(ছ) ধারায় শ্রমিকের অসদাচরণের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে তাও ত্রুটিপূর্ণ। যার আশ্রয় নিয়ে মালিকরা নিরপরাধ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করতে পারে। তা ছাড়া এই ধারার সংশোধিত প্রস্তাবটি এই আইনের ২৩ ও ২৪ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক; ৩. ধারা ২(৪৫)-এ মজুরির সংজ্ঞা হতে বাড়িভাড়া বাদ দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের এই শ্রমিক শ্রেণীর ওপর এই বিধান দ্বিগুণ চাপের সৃষ্টি করবে; ৪. ধারা ১০-এ ছুটির মেয়াদের ক্ষেত্রে সাময়িক ও অসুস্থতাজনিত ছুটি অন্তর্ভুক্ত কি-না তা স্পষ্ট করা হয়নি; ৫. নারী শ্রমিকদের জন্য মাতৃকল্যাণ সুবিধা ৬ মাসে উন্নীত করার বহুল আলোচিত বিধানটিও সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি; ৬. রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার না দেওয়া সমীচীন হয়নি; ৭. বিদেশি মালিকানাধীন কারখানায় প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন বছর ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা হয়েছে; ৮. ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত কর্মস্থলে যৌন নিপীড়ন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও এই আইনে নারী শ্রমিকদের ওপর যৌন নিপীড়ন প্রতিকারের বিধান নেই; ৯. শ্রমিকদের নিয়োগ ও বরখাস্ত, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মালিকের অনিয়ম রোধের শর্ত আইনে স্পষ্ট নয়।
কেবল জিএসপি সুবিধা পাওয়া বা রক্ষার জন্য নয়, দেশে টেকসই শিল্পায়নের জন্যই শ্রমিকবান্ধব শ্রমনীতি থাকা জরুরি। বর্তমানে দেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৯৪ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে কর্মরত। সঙ্গত কারণেই এ আইনের ত্রুটির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাত এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক শ্রেণী।
য় শরিফুল ইসলাম সেলিম :শিক্ষানবিশ আইনজীবী
No comments