বিপর্যস্ত দেশ : ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা by আবু সালেহ আকন
হরতাল
অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশ। এক দিকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, অন্য দিকে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি-টিয়ার শেল। সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। পুলিশি
পাহারায় হাইওয়েতে যানবাহন চালানোর কথা বললেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এ দিকে
রেলযোগাযোগ পুরোপুরি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। নৌযান কিছু চলাচল করলেও বাড়তি
চাপে হিমশিম অবস্থা। পণ্য পরিবহনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে
জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু
হয়ে গেছে। ১০ দিন ধরে দেশে টানা অবরোধ ও হরতাল চলছে। ২০ দলীয় জোটের আহ্বানে
এ অবরোধ কর্মসূচি ও হরতাল পালিত হচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটকে
সমাবেশ করতে না দেয়া এবং বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে ৬
জানুয়ারি থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এ কর্মসূচির পাশাপাশি চলছে
হরতাল। এরই মধ্যে গত ১০ দিনে এই অবরোধ ও হরতালকে ঘিরে ২৪ জনের প্রাণ গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও অবরোধকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে
নিহত হয়েছেন ১৩ জন। বাকি ১১ জন নিহত হয়েছেন আগুনে। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক।
এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা
হামলায় আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা
জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানও রয়েছেন। ফেনীতে
বোমায় আহত হয়েছেন তিন বিচারক। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিচারকদের বাড়িতে
অগ্নিসংযোগ-ককটেল হামলা, দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় থেকে ককটেল উদ্ধারসহ বেশ
কিছু ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবরোধ শুরু হওয়ার পরই সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়। এমনকি রাস্তায় যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কোনো কোনো এলাকায় যানবাহনে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হয়। তার পরও পাঁচ শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। পরিবহন সেক্টরের মালিক শ্রমিক নেতারা বলেছেন, যেভাবে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তুম আলী খান বলেছেন ওই নিরাপত্তা দিয়ে পরিবহনব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব নয়। এই নিরাপত্তার মধ্যেও গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলছে। ১৭২টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে আরো পাঁচ শতাধিক যানবাহন। ১১ জন শ্রমিক এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে এক লাখ ২৭ হাজার পণ্য পরিবাহী গাড়ি রয়েছে। তা বসে থাকলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয় প্রতিদিন। রুস্তুম আলী খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সবচেয়ে চরম মূল্য দিচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, এ অবস্থায় পণ্য পরিবহন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সদস্যসচিব মাহমুদুল আলম মন্টু বলেন, আমার নিজের বিরুদ্ধেও গাড়ি পোড়ানো মামলা হয়েছে। ৪ জানুয়ারি একটি মামলা ও ১০ জানুয়ারি আরেকটি মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিবহন সেক্টর সচল রাখতে যে নিরাপত্তা দিচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে ভয়ে অনেকেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছেন না।
পরিবহনের মধ্যে একমাত্র নৌযান সেক্টর এখনো মোটামুটি সচল রয়েছে। তবে এখানে যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাস-কোচ বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা এখন নৌযান। কিন্তু সেখানে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে মানুষকে। ভুক্তভোগীরা জানান, বরিশাল থেকে ঢাকায় আসতে জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা; কিন্তু অতিরিক্ত চাপে তাদের বসার জন্য ডেকের সিট কিনতে হচ্ছে। একজনের সিট বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। সূত্র জানায়, এতে অনেক অসহায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এ ব্যাপারে মালিক কর্তৃপক্ষের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, হরতাল-অবরোধে নৌ সেক্টরে কোনো প্রভাব পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় অবরোধ ও হরতালে সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রেল সেক্টরে। চার স্থানে এরই মধ্যে রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় কোনো কোনো অঞ্চলে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আজকে সকালের টিকিট কেটে পরদিন সন্ধ্যায় রওনা দিতে হচ্ছে কোনো কোনো এলাকা থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের কিছু করার নেই। এমন এমন এলাকা আছে যেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রেল চালাতে গিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। যানমালের নিরাপত্তার জন্য রেলের গতি কমানো হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে রেল চালাতে হচ্ছে, যা মানুষ পায়ে হেঁটেই চলতে পারে।
এক দিকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, অন্য দিকে পুলিশের গুলি-টিয়ার শেল ও আটক-গ্রেফতার। এসব কারণেও মানুষ চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। রাজধানীর আরামবাগের ব্যবসায়ী শাহজাহান জানান, কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। গাড়িতে উঠতে ভয় লাগে, রাস্তায় যেকোনো স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কবলে পড়তে পারেন। আবার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন যেকোনো স্থানে পুলিশি তল্লাশি ও হয়রানির শিকার হতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, বিনা কারণে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক গতকাল নাশকতা রোধে জনগণের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ যদি পুলিশকে সহায়তা করে তবে পুলিশ সহজে নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারবে। অন্য দিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রয়োজনে বিজিবি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবরোধ শুরু হওয়ার পরই সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়। এমনকি রাস্তায় যানবাহনের নিরাপত্তার জন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কোনো কোনো এলাকায় যানবাহনে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হয়। তার পরও পাঁচ শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। পরিবহন সেক্টরের মালিক শ্রমিক নেতারা বলেছেন, যেভাবে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তুম আলী খান বলেছেন ওই নিরাপত্তা দিয়ে পরিবহনব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব নয়। এই নিরাপত্তার মধ্যেও গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলছে। ১৭২টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে আরো পাঁচ শতাধিক যানবাহন। ১১ জন শ্রমিক এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে এক লাখ ২৭ হাজার পণ্য পরিবাহী গাড়ি রয়েছে। তা বসে থাকলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয় প্রতিদিন। রুস্তুম আলী খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সবচেয়ে চরম মূল্য দিচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, এ অবস্থায় পণ্য পরিবহন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সদস্যসচিব মাহমুদুল আলম মন্টু বলেন, আমার নিজের বিরুদ্ধেও গাড়ি পোড়ানো মামলা হয়েছে। ৪ জানুয়ারি একটি মামলা ও ১০ জানুয়ারি আরেকটি মামলা দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিবহন সেক্টর সচল রাখতে যে নিরাপত্তা দিচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে ভয়ে অনেকেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছেন না।
পরিবহনের মধ্যে একমাত্র নৌযান সেক্টর এখনো মোটামুটি সচল রয়েছে। তবে এখানে যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাস-কোচ বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা এখন নৌযান। কিন্তু সেখানে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে মানুষকে। ভুক্তভোগীরা জানান, বরিশাল থেকে ঢাকায় আসতে জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা; কিন্তু অতিরিক্ত চাপে তাদের বসার জন্য ডেকের সিট কিনতে হচ্ছে। একজনের সিট বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। সূত্র জানায়, এতে অনেক অসহায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এ ব্যাপারে মালিক কর্তৃপক্ষের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, হরতাল-অবরোধে নৌ সেক্টরে কোনো প্রভাব পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় অবরোধ ও হরতালে সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রেল সেক্টরে। চার স্থানে এরই মধ্যে রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় কোনো কোনো অঞ্চলে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আজকে সকালের টিকিট কেটে পরদিন সন্ধ্যায় রওনা দিতে হচ্ছে কোনো কোনো এলাকা থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের কিছু করার নেই। এমন এমন এলাকা আছে যেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রেল চালাতে গিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। যানমালের নিরাপত্তার জন্য রেলের গতি কমানো হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে রেল চালাতে হচ্ছে, যা মানুষ পায়ে হেঁটেই চলতে পারে।
এক দিকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, অন্য দিকে পুলিশের গুলি-টিয়ার শেল ও আটক-গ্রেফতার। এসব কারণেও মানুষ চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। রাজধানীর আরামবাগের ব্যবসায়ী শাহজাহান জানান, কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। গাড়িতে উঠতে ভয় লাগে, রাস্তায় যেকোনো স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কবলে পড়তে পারেন। আবার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন যেকোনো স্থানে পুলিশি তল্লাশি ও হয়রানির শিকার হতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, বিনা কারণে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক গতকাল নাশকতা রোধে জনগণের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ যদি পুলিশকে সহায়তা করে তবে পুলিশ সহজে নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারবে। অন্য দিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রয়োজনে বিজিবি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করবে।
No comments