‘সুন্দরবনের ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে’
সুন্দরবনের
শেলা নদীতে ট্যাংকারডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে
যেতে পারে বলে দাবি করেছে বিএনপির তদন্ত কমিটি। তারা বলেছে, সরকারের
উদাসীনতায় সুন্দরবনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় বিপর্যয়ের ঘটনায় সরকার
অপরাজনীতি করছে। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে শেলা নদীর চ্যানেল দিয়ে নৌযান
চলাচল বন্ধ ও দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনাসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে তদন্ত টিম।
আজ সকালে চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির তদন্ত টিমের
প্রতিবেদন তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান টিম প্রধান ও
দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন,
সুন্দরবনের শেলা নদীতে ট্যাংকারডুবির ৪৮ ঘণ্টা পরও তেল অপসারণে সরকারের কোন
উদ্যোগ নেইনি। চারদিকে বিষাক্ত তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল
আতঙ্কত জনগণ নিজ উদ্যোগের তেল অপসারণ শুরু করে। তবে পরিদর্শনকালে স্থানীয়
জনগণ আমাদের জানিয়েছে, বনের ভেতরে ও নদীতে ছীড়য়ে পড়া তেল সামান্য পরিমাণই
উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ডুবে যাওয়া ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’-এর
কোন ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। এটি অবৈধ রুটে বেআইনিভাবে তেল পরিবহন
করছিল। সাউদার্ন স্টার ছিল বালু ও পাথরবাহী কার্গো। এটির মালিক সরকারের
একজন মন্ত্রীর (বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) শ্যালক। হাফিজউদ্দিন বলেন,
বিএনপির ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ২২শে ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহব্যাপী
কাজ করে। এ সময় ওই এলাকায় মাছ, ইরাবতি ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর
প্রাণের স্পন্দন ছিল না। তেলের কারণে সুন্দরবনের শ্বাসমূল কালো হয়ে গেয়ে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবনের ওপর মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে।
পাখিও তেলের সংস্পর্শে প্রজনন ক্ষমতা হারাতে বসেছে বলে মনে করছেন
বিশেষজ্ঞরা। সাবেক এই পানি সম্পদমন্ত্রী বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য
নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে যারা তেল আহরণ করেছেন, ইতিমধ্যে তাদের চর্মরোগ
দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিও রয়েছে। বিএনপির ভাইস
চেয়ারম্যান বলেন, ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল বন্ধ হওয়ার পর নৌপথ মন্ত্রণালয়
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শেলা নদীকে বৈধ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বন বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে এ রুট ব্যবহার
করা হচ্ছিল। ঘটনার তিনদিন পর নৌমন্ত্রী শাজাহান খান তেল নিঃসরণে
সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন। আর ঘটনার ছয়দিন পর
প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনের তেলের দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের
নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার
মতো এখানে সরকার অপরাজনীতি কাজ করছে। দেশে যখন আইনের শাসন থাকে না, তখন এ
ধরনের ঘটনা ঘটে। সরকারের দুঃশাসনের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সরকারের
দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দাবি জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন
আহমদ বলেন, সুন্দরবনে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গে হতে
পারত। কিন্তু ভারত সেখানে না করে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সেখানে
বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বাংলাদেশ নিজেই জলবায়ুু দূষণকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত
হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন ফান্ডের
জন্য আবেদন করার যোগ্যতা হারাবে।
তদন্ত টিমের ৬ সুপারিশ
সুন্দরবনের ক্ষতি কমানোর জন্য বিএনপির তদন্ত কমিটি ৬টি সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হলোÑ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে শেলা নদীসহ সকল নদীর ওপর দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ, ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল চালু, সুন্দরবনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজ ভাঙা শিল্পসহ সব লাল শ্রেণীর শিল্প স্থাপন বন্ধ, ট্যাংকারডুবির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তিদান, ক্ষতিপূরণ আদায় করা, নৌপথে টহল জোরদার, সুন্দরবনের নিরাপত্তা জোরদার এবং বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ গঠন। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত টিমের সদস্য ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল ইসলাম মনা, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদসু সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৯ই ডিসেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ২২শে ডিসেম্বর বিএনপির সাত সদস্যের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
তদন্ত টিমের ৬ সুপারিশ
সুন্দরবনের ক্ষতি কমানোর জন্য বিএনপির তদন্ত কমিটি ৬টি সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হলোÑ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে শেলা নদীসহ সকল নদীর ওপর দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ, ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল চালু, সুন্দরবনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজ ভাঙা শিল্পসহ সব লাল শ্রেণীর শিল্প স্থাপন বন্ধ, ট্যাংকারডুবির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তিদান, ক্ষতিপূরণ আদায় করা, নৌপথে টহল জোরদার, সুন্দরবনের নিরাপত্তা জোরদার এবং বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ গঠন। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত টিমের সদস্য ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল ইসলাম মনা, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদসু সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৯ই ডিসেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ২২শে ডিসেম্বর বিএনপির সাত সদস্যের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
No comments