আসামে মৃতের সংখ্যা ৭০ পুলিশের গুলি, কারফিউ
ভারতের আসাম রাজ্যে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৭০-এ। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে কয়েকটি গ্রামে অস্ত্রধারীদের হামলায় নিহত হয় ৬৫ জন। আর এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার লোকজন বিক্ষোভ শুরু করলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হয় পাঁচজন। বিচ্ছিন্নতাবাদী বোড়ো সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) এ হামলা চালিয়েছে বলে জানায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্যের কয়েকটি অংশে গতকাল কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির। আসামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শোণিতপুর ও কোকড়াঝাড় জেলার একাধিক গ্রামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা ধরে একের পর এক হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। এতে ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা গতকাল বিক্ষোভ করে এবং বোড়ো সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সহিংসতায় বোড়ো সম্প্রদায়ের দুজন নিহত হয়। পুলিশ বলছে, সম্ভাব্য গোলযোগ মোকাবিলার লক্ষ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। ভারতীয় পুলিশের মহাপরিদর্শক এস এন সিং এএফপিকে বলেন, মঙ্গলবারের হামলায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাস্থলে আরও লাশ পড়ে আছে কি না,
তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের একাধিক দল প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনডিএফবি এসব হামলায় জড়িত বলে ধারণা পুলিশের। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, সশস্ত্র জঙ্গিরা গ্রামবাসীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে ফুলবাড়ি গ্রামে। সেখানে হত্যা করা হয়েছে ৩০ জনকে। প্রত্যক্ষদর্শী অনিল মুরমু বলেন, চোখের সামনে নিজের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে মরতে দেখেছেন। তিনি খাটের তলায় লুকিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। আসামে হামলার ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরিস্থিতির খোঁজ নিতে আসাম গেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। ভুটান ও বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আসামে আদিবাসী বোড়ো সম্প্রদায়, মুসলমান এবং স্থানীয় উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ মঙ্গলবারের হামলা সম্পর্কে বলেন, এটি সাম্প্রতিক সময়ের বর্বরতম হামলাগুলোর একটি। জঙ্গিরা শিশুদেরও ছাড় দেয়নি। হামলাকারীরা পার পাবে না। বোড়ো জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আলাদা ভূখণ্ডের দাবিতে দশকের পর দশক ধরে সহিংস আন্দোলন করছে এনডিএফবি। তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মুসলিম ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক কে জি সুরেশ বলেন, গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালানোর কারণ অস্পষ্ট। তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সরকারি অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে হামলা হয়ে থাকতে পারে।
No comments