জামাল উদ্দিন-সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নিহত সাংবাদিকদের তালিকায় এবার যুক্ত হলেন জামাল উদ্দিন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কাগজের কাশীপুর প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। শার্শা উপজেলার একটি বাজার কাশীপুর। এমন একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তিনি চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন মাদক চোরাচালানকারী প্রভাবশালী চক্রের।
এ চক্রটি তাকে হুমকিও দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে কাশীপুর বাজার থেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। প্রাথমিক অভিযোগের তীর হুমকিদাতাদের দিকেই। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত সাংবাদিকদের সারিতে জামাল উদ্দিনের নাম যুক্ত হওয়া একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। এর আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সন্ত্রাসী চক্রের হাতে নিহত হয়েছেন ১৩ সাংবাদিক। দুঃখজনক হলেও সত্য, সাংবাদিক হত্যার জন্য কাউকে এখন পর্যন্ত শাস্তি পেতে হয়নি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরও কেন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না, প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না_ তা একটি বড় প্রশ্ন। বলাবাহুল্য, দেশে গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী বা বড় শহরেও সাংবাদিকরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রকাশ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাংবাদিকদের নির্যাতন করছেন এমন অগ্রহণযোগ্য দৃশ্যও আমাদের দেখতে হচ্ছে। তবে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে, পর্যাপ্ত না হলেও কিছু প্রতিবিধান হচ্ছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল অঞ্চলে সাংবাদিকরা পেশাগত ঝুঁকির মধ্যে আছেন। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই তারা নানা দুষ্টচক্রের রোষানলে পড়ে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব হয় না। সাংবাদিক জামাল উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনা এ অঞ্চলে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলল। স্থানীয় প্রশাসনগুলো এদিকে নজর রাখবে বলেই আমরা আশা করি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যার উপযুক্ত বিচার হওয়া দরকার। কোনো শিথিলতার অবকাশ না রেখে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা দরকার। নইলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শুধু যে সাংবাদিকদের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা নয়, যশোরে একদিনে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা বলে দিচ্ছে সার্বিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো যত দ্রুত সচেতন হবে ততই মঙ্গল।
No comments