মাতৃভাষা-প্রিয় বাংলার দীনদশা by মশিউল আলম
হার্বি হাউস, স্কাই রেস্টুরেন্ট, হোটেল গিভেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, সুরেন অ্যান্ড কোং, রঘু অ্যান্ড কোং, কোনাক প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার ডেভেলপারস লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ডক্টরস ফার্মা, কোয়ালিটি ট্রেডিং কোম্পানি, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, এফ কবির অ্যান্ড কোম্পানি, জ্যাড রু টেকনোলজি, ইমপেরিয়াল পেইন্টস, আরএফএল ডোর, এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল...।
পাঠকের বুঝতে মোটেই অসুবিধা হচ্ছে না এগুলো একেকটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামফলকে মুদ্রিত নাম। রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কের এক পাশে যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, কোনো বাছবিচার না করে টুকে নিয়ে এলাম সেগুলোর নাম, ৫০টির বেশি। সবগুলো নাম এখানে ছাপানো গেল না জায়গার অভাবে। সেই প্রয়োজনও বোধ করি নেই। কারণ, আমাদের দেশের দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদির নামগুলো এমনই হয়, এটা আমরা সবাই জানি। কিছু প্রতিষ্ঠানের নামফলক ইংরেজি হরফে লেখা, বাকিগুলো বাংলায়। কিন্তু শুধু বর্ণমালা ব্যবহার করলেই বলা যায় না এগুলো বাংলা নাম।
এটা কোনো গুরুতর বিষয় নয় যে এ নিয়ে সংবাদপত্রে লেখার কিছু আছে। কিন্তু নিশ্চয়ই কিছু প্রবণতা এ থেকে পরস্ফুিট হয়। অন্তত এটা বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানের নামকরণে বাংলা ভাষাকে আমরা কত কম গুরুত্ব দিই, কত অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি। ফার্মগেটের একটি উড়ালসেতুর গায়ে একটি মোবাইল টেলিফোন অপারেটর একটি বিজ্ঞাপনের ভাষা ইংরেজি হরফে লেখা, ‘আই সি পালস।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর দৃষ্টি সেদিকে আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করি, ওই কথাটার মানে কি বোঝা যায়? উত্তরে তিনি বললেন, ‘বাক্যটার সরাসরি মানে তিনি করতে পারছেন না, তবে বুঝতে পারছেন যে মোবাইল ফোন কোম্পানিটি কথা বলার সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাবের কথা জানাচ্ছে।’ এ দেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর গ্রাহকেরা তো সব বাঙালি, কিন্তু তারা ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তরুণটির হাসিমাখা মন্তব্য, ‘বাংলায় তো স্মার্ট লাগে না।’
এ রকম ‘কেতাদুরস্ত’ হওয়ার উদ্দেশ্যে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই মনোহারি দোকানেও। ঢাকায় বেশ কিছু বড় দোকান হয়েছে, যেগুলোতে মাছ-মাংস, চাল-চিনি, শাকসবজি, মসলাপাতি থেকে শুরু করে সাবান-শ্যাম্পু—সবকিছু পাওয়া যায়। এমনই একটি দোকানের তাকে দেখতে পেলাম নানা ধরনের বাদাম: চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম। কিন্তু এই নামগুলো ওখানে নেই; আছে এগুলোর ইংরেজি নাম, ইংরেজি হরফে লেখা। এক বিক্রয়কর্মীকে হাসিমুখে বলি, দোকানটা কি আপনারা বিদেশিদের জন্য খুলেছেন? বেচারি আমার প্রশ্নটার শ্লেষ ধরতে পারেননি। তখন পরিষ্কার করে বলি, এগুলো ইংরেজিতে লেখা কেন বলতে পারেন? বিক্রেতার হাসিমাখা উত্তর, ‘ইংলিশে ইস্মার্ট হয়, স্যার!’
‘স্মার্টনেস’ মহার্ঘ্য, বলাই বাহুল্য। বাংলার সাধ্য কী ওই বস্তু এনে দেয়? তাই বুঝি ব্যাংক-বিমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, আবাসিক গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান, তৈরি পোশাক কোম্পানির নাম হতে হয় ইংরেজি। বহুতল আবাসিক ভবনগুলোর নামেও বাংলা পাবেন খুবই কদাচিৎ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তো কথাই নেই; ওদের কাছে বাংলা সম্ভবত অচ্ছুত ভাষা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-গবেষকেরাও গবেষণা করেন, প্রবন্ধ-সন্দর্ভ লেখেন ইংরেজি ভাষায়। তাঁদের অনেকেই শুদ্ধ বাংলা লিখতে পারেন না এবং একে তাঁরা কোনো ঘাটতি বা অযোগ্যতা বলে মনে করেন না। অযোগ্যতা মনে করা হয় ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখতে না পারাকে। আপনি উচ্চশিক্ষিত বাঙালি হয়েও যদি বাংলায় লিখতে না পারেন, আপনার লজ্জাবোধ হবে না; যদি আপনি কাজ চালানোর মতো ইংরেজিটুকুই লিখতে পারেন। ‘আমি তো বাংলা লিখতে পারি না’ বলে শ্লাঘা প্রকাশ করতে দেখেছি দুয়েকজন মানুষকে, যাঁরা ইংরেজিতে লিখতে পারেন। বাংলা ভাষায় যে সংবাদপত্র ছাপা হয়, সেখানে আপনি ইংরেজিতে চিঠি লিখে পাঠান, আপনার চিঠিতে সারবস্তু থাকলে ওই বাংলা সংবাদপত্রের কর্মীরা আপনার ইংরেজিতে লেখা চিঠিখানি বাংলায় অনুবাদ করে ছাপাবেন। কিন্তু আপনি যদি ইংরেজিতে লিখতে না পারেন, ইংরেজি কোনো সংবাদপত্রে চিঠি পাঠানোর কথা কি ভাবতে পারবেন?
আমাদের চিত্রশিল্পীদের অধিকাংশই তাঁদের আঁকা ছবির নাম দেন ইংরেজিতে। আমাদের তরুণ নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনেকের মধ্যেই ইংরেজিপ্রীতি (অর্থাৎ বাংলার প্রতি অবহেলা) বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তরুণ চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে অগ্রগণ্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনটি। সবগুলোরই নাম ইংরেজি: ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। টিভি চ্যানেলগুলোতে এখন ইংরেজি নামের নাটকের ছড়াছড়ি। আরও মজার বিষয়, কবি ও কথাশিল্পী, মাতৃভাষা বাংলায় যাঁরা লেখেন এবং ভাষাই যাঁদের একমাত্র হাতিয়ার, তাঁদের মধ্যেও ইংরেজিপ্রীতি এখন আর বিরল নয়। নিরীক্ষাপ্রবণ কথাসাহিত্য লেখেন মামুন হুসাইন। এ বছর তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন একটি উপন্যাসের জন্য। উপন্যাসটির নাম ইংরেজি: নিক্রোপলিস (শুদ্ধ উচ্চারণ হবে নেক্রোপলিস, মানে মৃতের নগর)। তরুণ গল্পকার মাহবুব মোর্শেদের প্রথম উপন্যামের নাম ফেস বাই ফেস। সম্ভাবনাময় গল্পকার শাগুফতা শারমিন তানিয়ার প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম কনফেশান বক্সের ভিতর, অটাম দিনের গান। কবিতায়ও ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়েছে।
এসবের কী মানে? বাংলা ভাষা হীন হয়ে যাচ্ছে, দীন হয়ে যাচ্ছে? ফুরিয়ে যাচ্ছে তার ঐশ্বর্য, তার সম্পদ, তার মর্যাদা? ‘আমি বাংলা জানি’ বলে আর গৌরব করার কিছু কি নেই, যেমন গৌরব সৈয়দ মুজতবা আলীকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর?
ফেব্রুয়ারি মাসটি ফিরে এসেছে আবার। এ যে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো মাস। এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এ দেশের মুদ্রণ ও সম্প্রচার গণমাধ্যম। না হলে হয়তো খুব কম মানুষেরই মনে পড়ে সেই বায়ান্নর রক্তঝরা ফাল্গুনের কথা, যখন মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য সত্যি সত্যি বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন কয়েকজন তরুণ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার এই এক বিশেষ ঐতিহ্য: স্মৃতি উদ্যাপনে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব সে কখনো ভোলে না; বিস্মৃতির বিরুদ্ধে প্রহরীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তাই তো ডিসেম্বর এলে, ফেব্রুয়ারি এলে, মার্চ এলে মাসজুড়ে স্মৃতির পসরা সাজায় সংবাদপত্রগুলো; প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করে টিভি চ্যানেলগুলো। সারা ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর চত্বরে চলে একুশের বইমেলা। বইমেলা ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা উৎসবমুখর থাকে সারা মাস। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন শহরে নানা অনুষ্ঠান হয়। গোটা বাংলাদেশেরই মনে পড়ে একুশের শহীদদের কথা। তাঁদের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির কথা।
এখন তাহলে আমরা একটু ভেবে দেখি, আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার আজ এই দীনদশা কেন। কী করে আমরা তার দীনতা মোচন করতে পারি।
মশিউল আলম: সাংবাদিক
mashiul.alam@gmail.com
এটা কোনো গুরুতর বিষয় নয় যে এ নিয়ে সংবাদপত্রে লেখার কিছু আছে। কিন্তু নিশ্চয়ই কিছু প্রবণতা এ থেকে পরস্ফুিট হয়। অন্তত এটা বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানের নামকরণে বাংলা ভাষাকে আমরা কত কম গুরুত্ব দিই, কত অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি। ফার্মগেটের একটি উড়ালসেতুর গায়ে একটি মোবাইল টেলিফোন অপারেটর একটি বিজ্ঞাপনের ভাষা ইংরেজি হরফে লেখা, ‘আই সি পালস।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর দৃষ্টি সেদিকে আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করি, ওই কথাটার মানে কি বোঝা যায়? উত্তরে তিনি বললেন, ‘বাক্যটার সরাসরি মানে তিনি করতে পারছেন না, তবে বুঝতে পারছেন যে মোবাইল ফোন কোম্পানিটি কথা বলার সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাবের কথা জানাচ্ছে।’ এ দেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর গ্রাহকেরা তো সব বাঙালি, কিন্তু তারা ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তরুণটির হাসিমাখা মন্তব্য, ‘বাংলায় তো স্মার্ট লাগে না।’
এ রকম ‘কেতাদুরস্ত’ হওয়ার উদ্দেশ্যে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই মনোহারি দোকানেও। ঢাকায় বেশ কিছু বড় দোকান হয়েছে, যেগুলোতে মাছ-মাংস, চাল-চিনি, শাকসবজি, মসলাপাতি থেকে শুরু করে সাবান-শ্যাম্পু—সবকিছু পাওয়া যায়। এমনই একটি দোকানের তাকে দেখতে পেলাম নানা ধরনের বাদাম: চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম। কিন্তু এই নামগুলো ওখানে নেই; আছে এগুলোর ইংরেজি নাম, ইংরেজি হরফে লেখা। এক বিক্রয়কর্মীকে হাসিমুখে বলি, দোকানটা কি আপনারা বিদেশিদের জন্য খুলেছেন? বেচারি আমার প্রশ্নটার শ্লেষ ধরতে পারেননি। তখন পরিষ্কার করে বলি, এগুলো ইংরেজিতে লেখা কেন বলতে পারেন? বিক্রেতার হাসিমাখা উত্তর, ‘ইংলিশে ইস্মার্ট হয়, স্যার!’
‘স্মার্টনেস’ মহার্ঘ্য, বলাই বাহুল্য। বাংলার সাধ্য কী ওই বস্তু এনে দেয়? তাই বুঝি ব্যাংক-বিমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা, আবাসিক গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান, তৈরি পোশাক কোম্পানির নাম হতে হয় ইংরেজি। বহুতল আবাসিক ভবনগুলোর নামেও বাংলা পাবেন খুবই কদাচিৎ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তো কথাই নেই; ওদের কাছে বাংলা সম্ভবত অচ্ছুত ভাষা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-গবেষকেরাও গবেষণা করেন, প্রবন্ধ-সন্দর্ভ লেখেন ইংরেজি ভাষায়। তাঁদের অনেকেই শুদ্ধ বাংলা লিখতে পারেন না এবং একে তাঁরা কোনো ঘাটতি বা অযোগ্যতা বলে মনে করেন না। অযোগ্যতা মনে করা হয় ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখতে না পারাকে। আপনি উচ্চশিক্ষিত বাঙালি হয়েও যদি বাংলায় লিখতে না পারেন, আপনার লজ্জাবোধ হবে না; যদি আপনি কাজ চালানোর মতো ইংরেজিটুকুই লিখতে পারেন। ‘আমি তো বাংলা লিখতে পারি না’ বলে শ্লাঘা প্রকাশ করতে দেখেছি দুয়েকজন মানুষকে, যাঁরা ইংরেজিতে লিখতে পারেন। বাংলা ভাষায় যে সংবাদপত্র ছাপা হয়, সেখানে আপনি ইংরেজিতে চিঠি লিখে পাঠান, আপনার চিঠিতে সারবস্তু থাকলে ওই বাংলা সংবাদপত্রের কর্মীরা আপনার ইংরেজিতে লেখা চিঠিখানি বাংলায় অনুবাদ করে ছাপাবেন। কিন্তু আপনি যদি ইংরেজিতে লিখতে না পারেন, ইংরেজি কোনো সংবাদপত্রে চিঠি পাঠানোর কথা কি ভাবতে পারবেন?
আমাদের চিত্রশিল্পীদের অধিকাংশই তাঁদের আঁকা ছবির নাম দেন ইংরেজিতে। আমাদের তরুণ নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনেকের মধ্যেই ইংরেজিপ্রীতি (অর্থাৎ বাংলার প্রতি অবহেলা) বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তরুণ চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে অগ্রগণ্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনটি। সবগুলোরই নাম ইংরেজি: ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। টিভি চ্যানেলগুলোতে এখন ইংরেজি নামের নাটকের ছড়াছড়ি। আরও মজার বিষয়, কবি ও কথাশিল্পী, মাতৃভাষা বাংলায় যাঁরা লেখেন এবং ভাষাই যাঁদের একমাত্র হাতিয়ার, তাঁদের মধ্যেও ইংরেজিপ্রীতি এখন আর বিরল নয়। নিরীক্ষাপ্রবণ কথাসাহিত্য লেখেন মামুন হুসাইন। এ বছর তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন একটি উপন্যাসের জন্য। উপন্যাসটির নাম ইংরেজি: নিক্রোপলিস (শুদ্ধ উচ্চারণ হবে নেক্রোপলিস, মানে মৃতের নগর)। তরুণ গল্পকার মাহবুব মোর্শেদের প্রথম উপন্যামের নাম ফেস বাই ফেস। সম্ভাবনাময় গল্পকার শাগুফতা শারমিন তানিয়ার প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম কনফেশান বক্সের ভিতর, অটাম দিনের গান। কবিতায়ও ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়েছে।
এসবের কী মানে? বাংলা ভাষা হীন হয়ে যাচ্ছে, দীন হয়ে যাচ্ছে? ফুরিয়ে যাচ্ছে তার ঐশ্বর্য, তার সম্পদ, তার মর্যাদা? ‘আমি বাংলা জানি’ বলে আর গৌরব করার কিছু কি নেই, যেমন গৌরব সৈয়দ মুজতবা আলীকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর?
ফেব্রুয়ারি মাসটি ফিরে এসেছে আবার। এ যে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো মাস। এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এ দেশের মুদ্রণ ও সম্প্রচার গণমাধ্যম। না হলে হয়তো খুব কম মানুষেরই মনে পড়ে সেই বায়ান্নর রক্তঝরা ফাল্গুনের কথা, যখন মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য সত্যি সত্যি বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন কয়েকজন তরুণ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার এই এক বিশেষ ঐতিহ্য: স্মৃতি উদ্যাপনে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব সে কখনো ভোলে না; বিস্মৃতির বিরুদ্ধে প্রহরীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তাই তো ডিসেম্বর এলে, ফেব্রুয়ারি এলে, মার্চ এলে মাসজুড়ে স্মৃতির পসরা সাজায় সংবাদপত্রগুলো; প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করে টিভি চ্যানেলগুলো। সারা ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর চত্বরে চলে একুশের বইমেলা। বইমেলা ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা উৎসবমুখর থাকে সারা মাস। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন শহরে নানা অনুষ্ঠান হয়। গোটা বাংলাদেশেরই মনে পড়ে একুশের শহীদদের কথা। তাঁদের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির কথা।
এখন তাহলে আমরা একটু ভেবে দেখি, আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার আজ এই দীনদশা কেন। কী করে আমরা তার দীনতা মোচন করতে পারি।
মশিউল আলম: সাংবাদিক
mashiul.alam@gmail.com
No comments