পরিবেশ-চট্টগ্রাম: উপেক্ষিত বাংলার রানি by আমিনুল ইসলাম
কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে (১৪ জানুয়ারি) ‘ইট পুড়ছে বন, লোকালয় ও হাসপাতালের পাশে’ শিরোনামে কক্সবাজারের রামু উপজেলার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ধ্বংস হচ্ছে চট্টগ্রামের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে।
দুদিন পরপরই পাহাড় কাটার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। ‘পাহাড় খেকোদের’ থাবায় চট্টগ্রামের পাহার নিঃশেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ—কেউ-ই বিশেষ চিন্তিত বলে মনে হয় না। পরিবেশের ও প্রতিবেশের বিষয়গুলো বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে।
শুধু একটি বন্দর নগর হিসেবে নয়, সমুদ্রসৈকত, প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও চট্টগ্রামের গুরুত্ব ব্যাপক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আবর্জনা ও জলাবদ্ধ দূষিত পানির জন্য সমুদ্রসৈকত ধ্বংসের মুখে। ময়লা-আবর্জনা, বস্তি ও জলাবদ্ধ দূষিত পরিবেশের মধ্যেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল হোটেল, মোটেল। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের আশ্রয় এই হোটেল-মোটেলগুলোতেই। কক্সবাজারের জলাবদ্ধ পানিতে এখন ভাসমান কীটপতঙ্গ ও মশা-মাছির আবাস। কিছুদিন আগে একটি দৈনিকের সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘আবর্জনায় ভরা কক্সবাজার!’। কর্তৃপক্ষ নির্বিকার! অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর স্বার্থ জড়িত থাকার কারণেই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। কদিন আগে জেনেছি, কক্সবাজারে পাহাড় কেটে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য একসময় মানুষ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে যেত, কিন্তু এখন আর সে উপায় নেই!
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেল, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুসারে সেন্ট মার্টিনে ভারী ও বাণিজ্যিক স্থাপনা বন্ধের নোটিশ দেওয়ার পরও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এখনো ভারী ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে। সেন্ট মার্টিনের স্বচ্ছ পানি দূষিত হচ্ছে। দ্বীপটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ আর আগের মতো ভালো নেই। অন্যদিকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এই দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে না। পরিবেশ ও প্রতিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার পর পর্যটকদের ভ্রমণ করতে দিতে হবে।
কক্সবাজারে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, সোনাদিয়া দ্বীপ, ইতিহাসখ্যাত কানাবাজার গুহা, হিমছড়ি ঝরনাসহ বেশ কটি দর্শনীয় স্থান। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সেন্ট মার্টিনকে আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে। সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। সিঙ্গাপুরের মতো একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সমগ্র পৃথিবীতেই সুপরিচিত হবে।
পাহাড়, বন, সমতল ভূমি, নদী ও সাগরের অপূর্ব সমন্বয় চট্টগ্রাম। মেয়র এম মন্জুর আলম চট্টগ্রামকে ‘কুইন অব বেঙ্গল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে অসংখ্য ইটভাটা ও সমিলের কারণে এলাকাগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠেছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমাও এখন দূষণের শিকার। বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসা দুই হাজারের বেশি জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে প্রায় চার হাজার টন এবং দৈনিক প্রায় ১১ টন সলিড ওয়েস্ট নিঃসরণ করা হয়। এসব বর্জ্য যত্রতত্র নিঃসরণের কারণে বন্দরের পানি, জলসীমা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। বন্দরের পরিবেশ রক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প কার্যকর করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে জাহাজভাঙাশিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করছে, কিন্তু এর জন্য পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংঘটনগুলো। পরিত্যক্ত পুরোনো ভাঙা জাহাজ, বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক বর্জ্যের ধারক হিসেবে বিবেচিত, যা পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে জাহাজভাঙাশিল্পকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমুদ্রের উপকূলের গাছ কেটে শিপইয়ার্ড নির্মাণ এবং রাসায়নিক বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে দূষিত হচ্ছে উপকূলীয় পরিবেশ; সেই সঙ্গে ধ্বংসের ঝুঁকিতে রয়েছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ। জাহাজভাঙাশিল্পে যেসব শ্রমিক কাজ করেন, ঝুঁকি রয়েছে তাঁদেরও। এই শিল্পে কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক মারা গেছেন।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক নগর চট্টগ্রামের রাউজানে রয়েছে জ্বালানি গ্যাসে চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। বেসরকারিভাবেও ফার্নেস অয়েল এবং অন্যান্য জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হযেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করবে। এ ছাড়া নিঃসরিত বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ পরিবেশদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতিতে শিল্পায়ন ভূমিকা রাখলেও পরিবেশদূষণের কারণ হিসেবে সেই শিল্পায়নকেই দায়ী করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানার উৎপাদিত বর্জ্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া কার্বন ও সালফার ডাই-অক্সাইড যাতে সরাসরি বাতাসে মিশে যেতে না পারে এ জন্য যথাযথ ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিদূষণও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে শিল্প-কারখানা, ইটের ভাটা স্থাপন ও যান্ত্রিক জলযানের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে। পানি অপসারণসহ বিভিন্ন কারণে হালদা নদীর পানির লবণাক্ততাও ক্রমে বাড়ছে। পলিথিন ও অপচনশীল আবর্জনার জন্য চট্টগ্রামের অসংখ্য নালা-খন্দ হালকা বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায়; সেই সঙ্গে ময়লা পানিতে ডুবে যায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট। বিভিন্ন কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। পাহাড় কাটার বিষয়ে সুপরিকল্পিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশের ওপর হামলা আত্মঘাতী বলেই আমরা মনে করি।
আমিনুল ইসলাম: পরিবেশকর্মী।
aminul.didar@gmail.com
শুধু একটি বন্দর নগর হিসেবে নয়, সমুদ্রসৈকত, প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও চট্টগ্রামের গুরুত্ব ব্যাপক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আবর্জনা ও জলাবদ্ধ দূষিত পানির জন্য সমুদ্রসৈকত ধ্বংসের মুখে। ময়লা-আবর্জনা, বস্তি ও জলাবদ্ধ দূষিত পরিবেশের মধ্যেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল হোটেল, মোটেল। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের আশ্রয় এই হোটেল-মোটেলগুলোতেই। কক্সবাজারের জলাবদ্ধ পানিতে এখন ভাসমান কীটপতঙ্গ ও মশা-মাছির আবাস। কিছুদিন আগে একটি দৈনিকের সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘আবর্জনায় ভরা কক্সবাজার!’। কর্তৃপক্ষ নির্বিকার! অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর স্বার্থ জড়িত থাকার কারণেই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। কদিন আগে জেনেছি, কক্সবাজারে পাহাড় কেটে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য একসময় মানুষ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে যেত, কিন্তু এখন আর সে উপায় নেই!
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেল, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুসারে সেন্ট মার্টিনে ভারী ও বাণিজ্যিক স্থাপনা বন্ধের নোটিশ দেওয়ার পরও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এখনো ভারী ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে। সেন্ট মার্টিনের স্বচ্ছ পানি দূষিত হচ্ছে। দ্বীপটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিবেশ আর আগের মতো ভালো নেই। অন্যদিকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এই দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে না। পরিবেশ ও প্রতিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার পর পর্যটকদের ভ্রমণ করতে দিতে হবে।
কক্সবাজারে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, সোনাদিয়া দ্বীপ, ইতিহাসখ্যাত কানাবাজার গুহা, হিমছড়ি ঝরনাসহ বেশ কটি দর্শনীয় স্থান। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও সেন্ট মার্টিনকে আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়বে। সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। সিঙ্গাপুরের মতো একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সমগ্র পৃথিবীতেই সুপরিচিত হবে।
পাহাড়, বন, সমতল ভূমি, নদী ও সাগরের অপূর্ব সমন্বয় চট্টগ্রাম। মেয়র এম মন্জুর আলম চট্টগ্রামকে ‘কুইন অব বেঙ্গল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে অসংখ্য ইটভাটা ও সমিলের কারণে এলাকাগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠেছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমাও এখন দূষণের শিকার। বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসা দুই হাজারের বেশি জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে প্রায় চার হাজার টন এবং দৈনিক প্রায় ১১ টন সলিড ওয়েস্ট নিঃসরণ করা হয়। এসব বর্জ্য যত্রতত্র নিঃসরণের কারণে বন্দরের পানি, জলসীমা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। বন্দরের পরিবেশ রক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প কার্যকর করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে জাহাজভাঙাশিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করছে, কিন্তু এর জন্য পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংঘটনগুলো। পরিত্যক্ত পুরোনো ভাঙা জাহাজ, বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক বর্জ্যের ধারক হিসেবে বিবেচিত, যা পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে জাহাজভাঙাশিল্পকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমুদ্রের উপকূলের গাছ কেটে শিপইয়ার্ড নির্মাণ এবং রাসায়নিক বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে দূষিত হচ্ছে উপকূলীয় পরিবেশ; সেই সঙ্গে ধ্বংসের ঝুঁকিতে রয়েছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ। জাহাজভাঙাশিল্পে যেসব শ্রমিক কাজ করেন, ঝুঁকি রয়েছে তাঁদেরও। এই শিল্পে কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক মারা গেছেন।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক নগর চট্টগ্রামের রাউজানে রয়েছে জ্বালানি গ্যাসে চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। বেসরকারিভাবেও ফার্নেস অয়েল এবং অন্যান্য জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হযেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করবে। এ ছাড়া নিঃসরিত বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ পরিবেশদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতিতে শিল্পায়ন ভূমিকা রাখলেও পরিবেশদূষণের কারণ হিসেবে সেই শিল্পায়নকেই দায়ী করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানার উৎপাদিত বর্জ্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া কার্বন ও সালফার ডাই-অক্সাইড যাতে সরাসরি বাতাসে মিশে যেতে না পারে এ জন্য যথাযথ ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিদূষণও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে শিল্প-কারখানা, ইটের ভাটা স্থাপন ও যান্ত্রিক জলযানের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে। পানি অপসারণসহ বিভিন্ন কারণে হালদা নদীর পানির লবণাক্ততাও ক্রমে বাড়ছে। পলিথিন ও অপচনশীল আবর্জনার জন্য চট্টগ্রামের অসংখ্য নালা-খন্দ হালকা বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায়; সেই সঙ্গে ময়লা পানিতে ডুবে যায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট। বিভিন্ন কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। পাহাড় কাটার বিষয়ে সুপরিকল্পিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশের ওপর হামলা আত্মঘাতী বলেই আমরা মনে করি।
আমিনুল ইসলাম: পরিবেশকর্মী।
aminul.didar@gmail.com
No comments