সাতকানিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান খুন-উপজেলা চেয়ারম্যান ছয় লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন!

ট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফ ছয় লাখ টাকায় খুনিদের ভাড়া করে নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আবছারকে খুন করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলেছে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া শাহ আলম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার পর শাহ আলম তাঁদের এমন তথ্য দিয়েছেন।


পুলিশ বলেছে, গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতু এলাকা থেকে শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র ক্রেতা সেজে তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র কেনার কথা বলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ওই রাতে খাগরিয়া এলাকা থেকে মো. ইলিয়াস নামের আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ইলিয়াসের দেওয়া তথ্য নিয়ে ‘কিলিং মিশনে’ ব্যবহার করা তিনটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, একটি চাকু ও একটি দরজা ভাঙার কাজে ব্যবহূত লোহা (কুড়াবারি) উদ্ধার করা হয়। এর আগে আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) নূরে আলম মিনা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহ আলম তাঁদের বলেছেন, নুরুল আবছারকে খুন করার জন্য আবদুল মোনাফ জসিম উদ্দিন ওরফে ডাকাত জসিমকে ভাড়া করেন। হত্যাকাণ্ডের পর মোনাফ তাঁদের ছয় লাখ টাকা দেবেন বলে ঠিক হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটাতে ডাকাত জসিম মাহমুদুল হক ওরফে ডাকাত মাদু, আবদুল জলিল ও শাহ আলমকে ভাড়া করেন।
শাহ আলমের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে নূরে আলম মিনা বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে মাহমুদুল হক, জলিল ও শাহ আলম ১০-১১ জন সহযোগী নিয়ে দুই দলে ভাগ হয়ে নুরুল আবছারের বাড়িতে যান। তাঁরা আবছারের বাড়ির সামনে তাঁর এক আত্মীয়কে মারধর করতে থাকলে আবছার দোতলার বারান্দায় এসে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন শাহ আলম তাঁকে প্রথম গুলি করেন। দ্বিতীয় গুলি করেন মাহমুদুল হক। ঘটনাস্থলেই নিহত হন আবছার।
শাহ আলম জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর তাঁদের ছয় লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে ঠিক হলেও আবদুল মোনাফ তা তাঁদের না দিয়েই আত্মগোপন করেন।
হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে ইতিমধ্যে জেলে পাঠানো হয়েছে। অন্য চারজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। আজ-কালের মধ্যে তাঁদের গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হতে পারে বলে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।
আবছার খুন হওয়ার পরদিন আবদুল মোনাফ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে আবছারের জানাজার নামাজে উপস্থিত হন। উপস্থিত লোকজন সেখানে তাঁকে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী সন্দেহে গণপিটুনি দেয়। ওই দিনই সন্ধ্যায় খাগরিয়া থেকে পুলিশ মাহমুদুল হক ও জলিল নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের জবানবন্দির পরই পুলিশ শাহ আলম ও ডাকাত জসিমকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোনাফ গণপিটুনিতে আহত হয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে তিনি আত্মগোপন করেন।
হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার তথ্য আমাদের হাতে চলে এসেছে।’

No comments

Powered by Blogger.