উদার গণতন্ত্রের আধার আওয়ামী লীগ by মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই সম্মেলনের প্রতি সকল মহলের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ফলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক কী বলেন তা শোনার অপেক্ষায় সকলেই ছিলেন।
দু’জনের বক্তব্য অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত হলেও বেশ আকর্ষণীয় এবং গঠনমূলক ছিল। তবে আওয়ামী লীগের শুভানুধ্যায়ীদের প্রত্যাশা আরও অনেক বেশি ছিল। সমালোচকরা এটিকে গতানুগতিক একটি সম্মেলন বলেছেন। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যথাক্রমে শেখ হাসিনা এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পুনর্নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ওইদিন সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। অনেকই ধারণা করেছিলেন যে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বোধ হয় ঝুলে গেল। না, বাস্তবে তা হয়নি। ২ জানুয়ারি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করেন। ওই কমিটি নিয়ে তেমন কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায়নি। প্রাপ্তি বা না প্রাপ্তি নিয়ে কারও মধ্যে ব্যক্তিগত অসন্তোষ থাকলেও তা খুব একটা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে রাজনীতির বাস্তবতা মাথায় রেখে বিষয়গুলো বিবেচনা করে মতামত দিলে বলতে হবে কমিটি পুনর্গঠনে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পেরেছে। যারা বাদ পড়েছেন তাদের না রাখার যেমন যথেষ্ট যুক্তি ছিল, যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয়তার যৌক্তিকতাও স্বীকার করতে হবে। ফলে সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠান করা এবং কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ এ সময়ে একটা সম্মেলন শান্তিপূর্ণ উপায়ে করতে পারবে তা নিয়ে কারও কারও মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। সব আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত অমূলক বলে পরিগণিত হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার ভিত্তি নিয়ে বাইরের মতামতের সঙ্গে ভেতরের অবস্থানে বেশ মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিশেষত দলে সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিরঙ্কুশভাবে সমাদৃত হচ্ছে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফের অবস্থানও বেশ সংহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি মাঝারি থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত আস্থার আবহ বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে নিঃসন্দেহে। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে নতুন সম্মেলন ও নেতৃত্ব বাছাই করার সমস্যাটি আওয়ামী লীগ বেশ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পেরেছে এটিÑএকটি বড় সাফল্য। এখন দ্রুত সংগঠনকে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটি দল ও নেতৃত্বের জন্য বেশ জরুরি কাজ। আশা করা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ হাতে পাওয়া সময়টিকে দক্ষতার সঙ্গেই কাজে লাগাতে পারবে। আগামী নির্বাচনে ভাল ফল করতে হলে সেভাবে কাজ করা ছাড়া ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই আওয়ামী লীগের।এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থানকে দেখলে বলতে হবে যে, মধ্য উদারপন্থী অবস্থানে আওয়ামী লীগের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দল দেশে নেই। এ সময়ের মধ্য বাম ধারার শক্তিগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত। বাম রাজনীতি ছেড়ে দেয়াদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগ দারুণভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। দেশের উদার গণতান্ত্রিক ধারার প্রায় একক কেন্দ্রিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোন কোন মহল আওয়ামী লীগে বামদের অবস্থানকে বেশ তির্যকভাবে দেখার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের সব কিছু বামরা দখলে নিয়ে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ জুজুর ভয় ছড়াচ্ছে। এটি একটি সুবিধাবাদী প্রচার, দলে বিভক্তির রেখাটিকে স্থায়ী করে রাখার অপচেষ্টা এবং অপপ্রচার মাত্র। বিশেষত দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন এ ধরনের ধুয়া তোলার চেষ্টা বেশি করা হয়। এমনটি আসলে খুবই সংকীর্ণ স্বার্থপর চিন্তা। আওয়ামী রাজনীতির দর্শন ও মতাদর্শগত আধারের অবস্থানকে যারা বুঝতে পারেন তারা স্বীকার করবেন যে, দলটি রাজনীতির ডানের অংশের মিত্র কোন কালেই ছিল না। এর আদর্শগত নৈকট্য সব সময়ই মধ্য উদার বাদী অবস্থান থেকে বামের সঙ্গেই নিবিড়ভাবে ছিল। এভাবে থাকার কারণ ছিল আওয়ামী লীগ গণমানুষের অধিকার, সংগ্রাম ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য একদিকে যেমন আন্দোলনকারী দল, অন্যদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়েও একই দর্শনে অবিচল থাকা একটি দল। এ কাজগুলো কোনদিন বাংলাদেশে অন্য কোন ডানপন্থী দল কখনও করেনি, করবেও না। ডানপন্থীরা আর্দশ ও চরিত্রগতভাবে প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদী, রক্ষণশীল, গণবিরোধী বটে। বাংলাদেশের জনগণের কোন বড় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ডানপন্থার মুসলিম লীগ, হালের বিএনপির নেতৃত্বে কখনও গড়ে ওঠেনি। যারা রাজনীতি বোঝেন, পড়াশোনা করে তা জানেন, খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন যে, সকল গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন মধ্য উদারবাদীদের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়, বামদের বেশিরভাগই জনগণের অধিকার আদায়ের যে কোন আন্দোলনে মধ্য উদারপন্থীদের নিকটতম সহযোগী বা মিত্র হিসেবে ছিলেন বা থাকেন। তাদের উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শ ও সংস্কৃতিগত মিলও বেশ কাছাকাছি, পার্থক্য হচ্ছে পথ ও লক্ষ্যে। মধ্য উদারবাদীদের মূল লক্ষ্য থাকে একটি আধুনিক উদারবাদী বা কল্যাণবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা, বামরা অবশ্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববাসী। হালে সেখানে বেশকিছু বিপর্যয় ঘটায় বামদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের মতো বড় উদারবাদী গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এতে আওয়ামী লীগও দলগতভাবে বেশ লাভবান হয়েছে। একটি দল আদর্শিক ও অগ্রসর চিন্তাধারার এত সংখ্যক নেতাকর্মীকে ধারণ করতে পারাটিকে ছোট বা ভিন্ন ভাগে দেখার প্রয়োজন নেই। যারা এ ক্ষেত্রে প্রচার-অপ্রচারের আশ্রয় নিচ্ছে তারা আসলে বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিকাশের সমস্যাগুলো এরা বুঝতে চায় না। আওয়ামী লীগকে বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তির প্রধান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে এরা কার্যত বাধা দিচ্ছে, নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ-চরিতার্থ করতেই আওয়ামী লীগকে দ্বিধাবিভক্ত করতে এসব প্রচারণা চালাচ্ছে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগে এক সময় ডানপন্থী সুবিধাবাদী একটি অংশ যুক্ত ছিল। পাকিস্তান আমলে তাদের আসল চেহারাটি ততটা উন্মোচিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সেই অংশটি কিভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে গোটা মুক্তিযুদ্ধকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ওই সব ব্যক্তিই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু, ৩ নভেম্বর জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যাসহ গোটা আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। দক্ষিণপন্থায় বিশ্ববাসীদের অবস্থান কোন বড় গণতান্ত্রিক দলে সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু যখন দলটি সত্যিসত্যিই রাষ্ট্র ও সমাজের বৃহত্তর রূপান্তরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন দক্ষিণপন্থায় বিশ্ববাসীরা ছোবল মারতে মোটেও দেরি করে না। একাত্তরে তারা চেষ্টা করে সফল হয়নি, কিন্তু পঁচাত্তরে তারা সফল হয়েছিল। তাতে শুধু আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। গোটা বাংলাদেশকেও তারা রাজনৈতিকভাবে দ্বিখ-িত করে ফেলে। বাংলাদেশে ডানপন্থার নানা গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসিয়ে একটি বড় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা শেষে দেশটাকে দ্বিমেরুর রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে বিভক্ত করেছে। যার ডান মেরুর শক্তি পাকিস্তানী ভাবধারা, সুবিধাবাদী ও রক্ষণশীল ধারার রাজনীতিকে স্ফীত করেছে। উদারবাদী মেরুর আওয়ামী লীগকে তিন যুগ কাটাতে হয়েছে। রাস্তায় আন্দোলন করে এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে যখন মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ সুযোগ পেয়েছে, সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে তখন রাজনৈতিকভাবে সবচাইতে বড় বাধা আসছে সমগ্র ডানমেরুর দলগুলোর কাছ থেকে যারা এখন ১৮ দলীয় জোট গঠন করেছে। এমন একটি দ্বিমেরুকরণের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত শক্তি করা হবে তা সহজেই অনুমেয়। দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, কল্যাণবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি-মানুষ, ছোট-বড় গোষ্ঠী, দল ও সম্প্রদায় যাদের নৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানটি অনেকটাই স্পষ্ট। এমন অবস্থানে থাকা মানুষগুলো সরাসরি আওয়ামী রাজনীতিতে থাকতেও পারে, কাছে থেকেও ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের পর আমাদের দেশেও সিপিবি, জাসাদসহ বাম রাজনীতির ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রভাব পড়ে সমাজব্যবস্থার ওপরও। এতে লাভবান বেশি হয়েছিল ডান তথা দক্ষিণপন্থার শক্তিসমূহ তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গণতান্ত্রিকভাবে চলে আসে। এর ফলে রাষ্ট্র-রাজনীতিতে আদর্শবাদের ভাঙন অনাকাক্সিক্ষতভাবে দ্রুত হতে থাকে। তবে রাজনীতি-সচেতন অংশ তখন যথার্থভাবেই আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার চাইতে অন্য কোন বিকল্প চিন্তা করেনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দর্শন চিন্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। সমাজের গণতান্ত্রিক মল্যবোধের প্রতি আস্থাশীল রাজনীতিতে পোড়খাওয়া মানুষগুলোকে, অসাম্প্রদায়িক সকল শক্তিকে দলে বা দলের কাছাকাছি তিনি টেনে নিয়েছেলেন। এতে আওয়ামী লীগে নতুন রক্তের সঞ্চালন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সতেজ হওয়ার প্রাণশক্তি সঞ্চয় করেছে। গত দুই দশকে আওয়ামী লীগ ক্রমেই মধ্য উদারকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রধান এবং অনেকটা একক প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ডানের প্রভাব আওয়ামী লীগে থাকলেও তা এখনও আগের মতো ততটা দৃশ্যমান নয়, তবে নানা ছদ্মাবরণে তাদের অবস্থান রয়েছে। বামের বিষয়টি নিতান্তই জুজুর ভয় ছড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। তবে প্রায় সবাই আওয়ামী রাজনীতির সংস্কৃতিতে মূল্যবান অবদান রাখছেনও। এতে আওয়ামী লীগেরই সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেখ হাসিনার হাত অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী হচ্ছে। আওয়ামী লীগ একটি উদারবাদী গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে রূপান্তরের একটি প্রক্রিয়ায় আছেÑএটি যারা বুঝতে পারেন না, তারা আসলে আওয়ামী লীগকে ডান-বামে বিভক্ত করার প্রচারণাই চালাচ্ছেন। গত দুই দশকে বাম ধারা থেকে আগত অধিকাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিই আওয়ামী লীগের বৃহত্তর রাজনৈতিক দর্শনে অভ্যস্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের আদি রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে বামদের মৌলিক কোন বিরোধ নেই। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর ত্যাগের নজির অনেক বামদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এক সময়ে সততা, ত্যাগ ও মেধার চর্চা, লেখাপড়ার বিষয়গুলো উদার গণতন্ত্র এবং বামদের রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। খুব বেশি পার্থক্য তাদের মধ্যে ছিল না। এখন অবশ্য দুনিয়া বদলে গেছে। রাজনীতিতে ত্যাগের চাইতে চাওয়া-পাওয়া ও ভোগের অংশ বেড়েছে। তারপরও উদার গণতান্ত্রিক ধারার অবস্থান ডানদের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয়। সেই অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কিছুই ভাবা যায় না। এখন যেহেতু বামদের অবস্থান বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকসেবা বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ বাম দিকে যতটা হাত প্রসারিত করবে ততটাই তার হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগের যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে শুধু দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এককভাবে নয়, বাংলাদেশও রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে। দ্বিমেরুর রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে উদার গণতন্ত্রের মাঠকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না হলে পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিস্তার ঘটবে। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম অনেকটাই সংহত ও শক্তিশালী একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে যখন দলটি গত ৪ বছরে বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে একটি আস্থার জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছে।
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবেও যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ এবং যুদ্ধাপরাধীদের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছে, ডানপন্থার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রমাণ রাখতে পারছে, পশ্চিমা দেশগুলোকে তোয়াজ না করে স্বাধীন অবস্থান জানানোর সক্ষমতা দেখাতে পারছে। এ ধরনের পর্বে উত্তরণটি একধাপ অগ্রগতি মাত্র। এখনও বাংলাদেশের সমাজ মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও দক্ষিণপন্থার ঝোঁক থেকে মোটেও মুক্ত নয়, সেগুলো সমাজ দুর্বল নয়। এ ধরনের অবস্থায় আওয়ামী লীগকে আরও বেশি সাংগঠনিক রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। এর জন্য মধ্যপন্থার উদার অসাম্প্রদায়িক এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্ববাসীদের জন্য স্পেস রাখার ব্যবস্থা করে দিতে হবে আওয়ামী লীগকেই। এর দরজা আরও বেশি উদার এবং মুক্ত থাকবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য। সেখানে বিভাজন নয়, সমন্বয় সাধনই বেশি বেশি দরকার। রাজনীতির মাঠই এর আসল জায়গা। তবে সেই মাঠে আওয়ামী লীগকে যথেষ্ট সর্তক ও সচেতনভাবেই রাজনীতির চর্চা করতে হবে। কেননা, এর প্রতিপক্ষ ভেতরে ও বাইরে বেশ সবল। তারপরও রাজনৈতিভাবেই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে গণতন্ত্রের মাঠে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটিই নিয়ম।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট
No comments