‘বাচ্চারা দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে’
‘যখন অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় তখন বাচ্চারা শ্বাস কষ্টে ভুগছিল। তারা দম নিতে পারছিল না। বাচ্চারা দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। তখন আমাদের কিছুই করার ছিল না।’ এভাবেই বলছিলেন রোশান নামের এক শিশুর চাচী পরমাত্মা গৌতম। রোশনের মতোই অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিন মরতে থাকে শিশু। দিন দিন বাড়তে থাকে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা। মাত্র ৫ দিনে মৃত্যু হয় ৬০ শিশুর। দেশজুড়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। খবর আলজাজিরা, এএফপি ও জি নিউজ। সোমবার থেকে ভারতের মধ্যপ্রদেশে গোরাখপুরে বাবা রাঘবদাস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বিআরডি) অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। ফলে অসুস্থ শিশুদের সুস্থ হয়ে ওঠার পরিবর্তে মৃত্যুবরণ করতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় অক্সিজেন সরবরাহ করেনি সংস্থাটি। সে কারণেই এমন ভয়াবহ ঘটনার শিকার হতে হয়েছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিশু ও তাদের পরিবারকে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সংকটের কথা স্বীকার করতে নারাজ। তাদের দাবি, হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট নেই। শুক্রবার নতুন করে আরো ৩০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার যুক্ত করা হয়েছে। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী বেসরকারি সংস্থার দাবি, সিলিন্ডার কিনে ৭০ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাকি টাকার জন্য বারবার তাগাদা দেয়া হলেও টাকা পরিশোধ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টাকা চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেয় ওই সংস্থা। টাকা না পাওয়ায় সাপ্লাই বন্ধ করা হয়। এ নিয়ে শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিআরডি কর্তৃপক্ষ। তবে অক্সিজেন সংকটের অভিযোগ তারা এখনো স্বীকার করেনি। গোরাখপুর বিভাগীয় কমিশনার অনিল কুমার বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি আজকেই একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে। তিনি বলেন, গত ৫ দিনে হাসপাতালটিতে ৬০টি শিশু মারা গেছে। কিন্তু আমাদের কাছে অক্সিজেন সংকটের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছে না। স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়, শুক্রবার সকালে নতুন করে অক্সিজেন লাগানো হয়েছে। রোগীর মৃত্যু শুরু হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সরবরাহকারীর উপর ক্ষীপ্ত হয় এবং দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করতে বলে। উত্তর প্রদেশের চিফ মিনিস্টার ইয়োগি আদিত্যনাথের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, হাসপাতালের শিশু বিষয়ক ওয়ার্ডে ৬০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া এক শিশুর বাবা মৃত্যুঞ্জয় সিং বলেন, আমার ৭ মাসের ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। তাকেতো মেরে ফেলার জন্য ভর্তি করাইনি। তিনি বলেন, অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যাই। তখন দেখি তারা দ্রুত অক্সিজেনের বিল মেটানোর চেষ্টা করছে। তবে উত্তর প্রদেশের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত তানভির বলেন, হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সরবরাহের পাইপ লাইনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল এটা সত্য। কিন্তু অক্সিজেন সংকটে শিশুর মৃত্যু হয়েছে এ খবর সঠিক নয়।
No comments