যে কারণে বিএনপি নেতাদের মুখে কথা নেই- খুনীদের ফাঁসি
রাজন ভট্টাচার্য বিপাকে বিএনপিসহ চার দলের শরিকরা! ৰমতায় থাকার সময় পুরস্কৃত পছন্দের ব্যক্তিরা নেই। তাই মিত্র শোকে পাথর দলের নেতারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার অপরাধে খুনীদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টার কাছে কোনভাবেই হার মানেনি প্রতিহত করার চেষ্টা। ব্যর্থ হয়েছে খুনীদের রৰার অপতৎপরতা। যে কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর এখন অনেকটাই হতবাক বিএনপি। কী বলবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাই মুখে কুলুপ। খুনীদের রৰা করতে না পারা ও মিত্রদের বিদায়ের শোক এখন জোট নেতাদের চারপাশ ঘিরে আছে। সেই সঙ্গে রায়ের ব্যাপারে নেতিবাচক মনত্মব্য করা মানেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে_ এ নিয়েও চিনত্মিত বিএনপির হাইকমান্ড। তাই রায়ের ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোন রকম প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ বিএনপি। আরেকদিকে মিত্রদের মৃতু্য ভাবিয়ে তুলেছে খালেদা জিয়াসহ চার দলকে। কারণ, এবার যুদ্ধাপরাধীরে বিচারের পালা। সরকারের পৰে এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরম্ন। আবারও হারানো লাগতে পারে অনেক মিত্রকে। তাছাড়া খালেদা জিয়ার অঘোষিত নির্দেশের কারণে দলের অন্য কেউ ফাঁসির ব্যাপারে এখন আর মুখ খুলতে নারাজ। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে মহাচিনত্মিত জামায়াত। নিজেদের রৰা করাই এখন তাদের কাছে বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। বিএনপিতে থাকা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত নেতারাও নীরব ভূমিকা পালন করছেন। খুনীদের মৃতু্যদ- কার্যকর নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ বিএনপির পৰে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করেছিল; তা হয়নি। দলের পৰে নীরব ভূমিকা পালন করায় ইতোমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে বিসত্মর। অনেকেই বলছেন, বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকার খুনীদের মদদদাতা, তা আবারও প্রমাণিত ।সর্বোচ্চ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় হওয়ার পর পরই বিএনপির পৰে প্রথমেই প্রতিক্রিয়া জানান দলের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে শুরম্ন হয় তোলপাড়। ৰুব্ধ হন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কেন প্রতিক্রিয়া জানানো হলো? এ নিয়ে মওদুদকে তলব করেন খালেদা। কারণ জানতে চান তিনি। এ সময় মওদুদের বক্তব্য ছিল, সংবাদ মাধ্যমে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা নিজস্ব। এর পরও রৰা পাননি মওদুদ। তার বক্তব্য মেনে নেননি খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার বক্তব্য কখনও নিজস্ব হতে পারে না। সাধারণ মানুষ ধরে নেয়, এটি দলীয় বক্তব্য হিসেবে। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। অঘোষিত নির্দেশ দেন, এ ব্যাপারে কোন কথা না বলার জন্য। যার প্রমাণ মিলল এবারের ঘটনায়। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর থেকে সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা বিএনপির পৰ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নিতে কয়েক দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মুখ দিয়ে নানা ইসু্য নিয়ে প্রতিদিন বিচিত্র বচন বের হলেও এখন তিনিও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোন মনত্মব্য করতে চান না তিনি। নীরব ভূমিকা পালন করছেন দলের বিতর্কিত ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত নেতারাও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেছেন, এ ব্যাপারে কোন মনত্মব্য করা যাবে না। দলীয় বৈঠকে বিষয়টি চূড়ানত্ম হবে। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন, সেলিমা রহমান বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের নানা কায়দায় এড়িয়ে যান। কৌশলে সামান্য প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি চাইলে আসামিদের ৰমা করতে পারতেন। শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায়ে মৃতু্যদ- আমাদের ইতিহাসে এক বিয়োগানত্মক ঘটনা। রাষ্ট্রপতির ৰমতাবলে প্রাণভিৰা দিলে হয়ত এই বিয়োগানত্মক ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতার মনত্মব্য প্রমাণ করে, বিএনপির আসল বক্তব্য কী হতে পারে। কিংবা বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের মানসিক অবস্থা। সেই সঙ্গে দলের পৰ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানানোর কারণ।
রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা মনে করেন, মিত্র শোকে পাথর বিএনপি। শত চেষ্টা করেও খুনীদের রৰা করা গেল না, এই বেদনা কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের। কষ্টের কারণে তাই তাৎৰণিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারছে না দলটি। মুখ বন্ধ শীর্ষ নেতাদেরও। তারা বলছেন, সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেদনা কমবে বিএনপির। তারপর ফাঁসির রায় কার্যকর করার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে দলটি। তবে এটি তাদের আসল কথা বা অনত্মরের বক্তব্য নয়। সাধারণ মানুষের সমালোচনা এড়াতেই ইতিবাচক কিছু নিয়ে হাজির হতে পারে সংবাদমাধ্যমের সামনে। তবে জাতির সামনে ব্যর্থতার গস্নানি নিয়ে হয়ত হাজির হবেন না খালেদা জিয়া। কারণ, খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান এবং তিনি নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। এ ঘটনা অনুসন্ধানে সকল আইনী প্রক্রিয়া না করতে পারার পথও রম্নদ্ধ করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পৃষ্ঠপোষকতা শুরম্ন হয়। স্বামীর ধারাবাহিকতা রৰা করেছেন খালেদা জিয়াও। অভিযোগ আছে সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের বিরম্নদ্ধেও। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দেয়া হয় বঙ্গবন্ধুর আত্নস্বীকৃত খুনীদের। হতবাক হয় জাতি। এখানেই শেষ নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করার পথ তৈরি করে দেয়া হয়। পবিত্র সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করে জাতির পিতার খুনীরা!
No comments