সুরঞ্জিত কাহিনী-সত্যান্বেষণে মিডিয়া নির্ভীক

যেসব রাজনীতিকের সঙ্গে মিডিয়ার চমৎকার সম্পর্ক তাদের অন্যতম সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাকে 'দাদা' বলে সম্বোধন করতে অনেক সাংবাদিকই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পেশাগত কারণে যাকে টেলিফোনে গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে কথা বলতে অনেক সাংবাদিকই ইতস্তত বোধ করেন না, সেই দাদা এখন মিডিয়ার ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত।


কারণ একটাই_ সাংবাদিকরা রেলের মহাদুর্নীতি কেলেঙ্কারির সঙ্গে তার জড়িত থাকার কথিত খবরটি আদ্যোপান্ত প্রকাশে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনো মূল্যই দিচ্ছেন না। দুর্নীতির কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হলে তাকে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়। রাজনীতিতে সৌভাগ্যের বরপুত্র বলেই তিনি দফতর ছাড়া মন্ত্রিত্ব ফিরে পান। তার নিজের ভাষায়, 'উজিরে খামাখা'। এই উজিরে খামাখা গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে মিডিয়াকে প্রকারান্তরে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর হুমকি দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, তিনি নির্দোষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে বলেছেন, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের প্রকাশকদের আমলনামা তার কাছে আছে। তার এপিএসের ড্রাইভার আজম খানের দুটি সাক্ষাৎকার আরটিভিতে প্রচার হওয়া এবং দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়াকে তিনি সহজভাবে নিতে পারেননি। তা না হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন, যে ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলেছেন তা যে মোটেই স্বাভাবিক নয়, তা তিনি বুঝতে পারতেন। তার প্রচ্ছন্ন হুমকিতে মিডিয়াকর্মীরা খুব একটা ভীত হয়েছেন বলে মনে হয় না। তারা একটি বার্তাই 'দাদা'র কাছে পেঁৗছে দিতে চান যে, সাংবাদিকরা নীতিমালা বিসর্জন দিয়ে কারও চিরদিনের বন্ধু হয় না। তারা 'দাদা'র কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর হুমকিতে ভীত নন এ জন্য যে, সাংবাদিকরা প্রতিদিনই সকালে লক্ষ-কোটি পাঠকের কাঠগড়ার সামনে দাঁড়ান। পরীক্ষার মুখোমুখি হন। তবে এ কথা সত্য যে, মানুষ রেগে গেলে অনেক সময় স্বাভাবিক আচরণ করেন না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যাপারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি দাবি করেছেন যে, তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। আমরা তো তা-ই চাই। তার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার স্বচ্ছ তদন্ত হোক। তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিডিয়াও খুশি হবে। 'দুদক' ইতিমধ্যে তাকে 'নির্দোষ' বলে যে সার্টিফিকেট দিয়েছে, তা জনগণ মেনে নেয়নি। 'দুদক' চেয়ারম্যান ড্রাইভার আজম খানের টিভি সাক্ষাৎকার যে ভাষায় নাকচ করেছেন, তা শোভনীয় নয়। যে কোনো পেশার যে কেউ সাক্ষী হিসেবে, মানুষ হিসেবে সমমর্যাদার অধিকারী। আমরা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এহেন মন্তব্য প্রত্যাশা করি না। আমরা ড্রাইভার আজম খানকে যথাযথ নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসার পরিবেশ তৈরির দাবি জানাচ্ছি। আরটিভির প্রতিবেদক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন। তারও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংবাদ সম্মেলনে একটি মজার প্রশ্ন তুলেছেন, আজম খান কেন মাত্র একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিলেন। এখানে কৃতিত্ব সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার বায়েজীদের। এ ধরনের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য পৃথিবীর সব দেশের সাংবাদিকরাই উন্মুখ থাকেন। অন্যরা পারেননি_ বায়েজীদ পেরেছেন। তাকে অভিনন্দন।
 

No comments

Powered by Blogger.