‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়, ‘উপাচার্য’ হবে আরবি ভার্সিটির প্রধানের পদ by বিভাষ বাড়ৈ
‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পদ হবে ‘উপাচার্য’। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিই প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন।
উপাচার্য পদের নাম ও যোগ্যতা নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম হলেও জানা গেছে, উদ্যোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ‘গ্রান্ড মুফতি’ শব্দ আলোচনায় এলেও চূড়ান্ত হওয়া আইনে কোথাও এ কথা বলা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং যাদের আন্দোলনের ফসল এ বিশ্ববিদ্যালয়, সেই বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন সকল বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে বলেছে ‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পদ হবেন ‘উপাচার্য’। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। এদিকে দ্রুত চলছে আইন অনুমোদনের কাজ। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের পর ইতোমধ্যে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। ভেটিং শেষে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইন জতীয় সংসদে উঠছে বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছিল, প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উপাচার্য পদ ও তার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়নি প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি উপাচার্য পদের নাম ও যোগ্যতা ‘গ্রান্ড মুফতি’ হচ্ছে বলেও খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এ বিশ্ববিদ্যলয়ের মান, উদ্দেশ্য, এমনকি গ্রহণযোগ্যতাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। ঠিক এমন অবস্থায় খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রাথমিক পর্যায়েই কেবল ‘গ্রান্ড মুফতি’ শব্দটি আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত হওয়া আইনে কোথাও এ কথা বলা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কাজী সালাউদ্দিন আকবর জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পদ হবে ‘উপাচার্য’। যোগ্যতাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতোই। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ বহুদূূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে খুবই আন্তরিক। লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আইনটির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। উপাচার্য পদ ও যোগ্যতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের বিষয়ে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমেদ মোমতাজী জনকণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। কারণ ‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়Ñ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পদ হবেন ‘উপাচার্য’। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন। মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর বহু বছরের দাবি ও জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে কেবল মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৃথক এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনুমোদনকারী বা এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জমিয়াতুল মোদাররেছীনের মহাসচিব বলেন, সত্যি বলতে কি ইসলামের নামে এই দেশে বহু সরকার এসেছে। কিন্তু সেই সরকারগুলো ইসলাম ও মাদ্রাসার জন্য কিছুই করেনি।
গত ৬ আগস্ট ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১২ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ্যাফিলিয়েটিং শব্দটি তেমন প্রচলিত না হওয়ায় নামের ক্ষেত্রে এই শব্দটি না রাখার বিষয়ে মতামত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ কার্য সম্পাদন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা অর্থাৎ ফাজিল এবং কামিল বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ হবে ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন দেয়া, অনুমোদন বাতিল করা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা গ্রহণ, ডিগ্রী প্রদান করা। মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের পর আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। মতামত পাওয়া গেলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। তবে সরকারী কারিকুলাম অনুযায়ী না চলার কারণে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে না। দেশে কামিল এবং ফাজিল পর্যায়ের এক হাজার ৯শ’ মাদ্রাসা রয়েছে।
দেশে প্রথমবরের মতো এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সম্পর্কে জানা গেছে, মাদ্রাসা শিক্ষকদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন বহু বছর যাবত মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য পৃথক একটি এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে এ স্তরের শিক্ষার সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে এক হাজার মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ, মাদ্রাসাসহ ২০ হাজার ৫শ’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন, ১০০ মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা, ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালুসহ অসংখ্য কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া আছে শিক্ষার অন্যান্য ধারার মতো এবতেদায়ী ও দাখিল পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সমূহের একই সিলেবাস চালু করার উদ্যোগ। জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পৃথক একটি মাদ্রাসা অধিদফতর গঠন করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চ অর্থাৎ ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষাঙ্গনগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ এবং পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তমানে কুষ্টিয়াস্থ ইসলামীক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু একটি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ বিশাল দায়িত্ব পালন দুরূহ। সঙ্গত কারণে কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একটি অনুমোদনকারী (এ্যাফিলিয়েটিং) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। শিক্ষানীতিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে দ্রুত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান জমিয়াতুল মোদাররেছীনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী ওই সময়েই পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে তাঁদের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী এ কমিটির আহ্বায়ক করে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য, একজন উপ-উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ থাকবেন।
রাজধানী ঢাকাতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে। পাশাপাশি কোরান, হাদিস, ফিকাহ, তাজবিদ, শরিয়তসহ নানা বিষয়ের কোর্স কারিকুলাম তৈরি, পাঠদান ও ডিগ্রী দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালের আগে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার সব ধরনের ডিগ্রী দিত মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। বর্তমানে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ডিগ্রী দেয় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। আর ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী দেয় কুষ্টিয়ার বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছিল, প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উপাচার্য পদ ও তার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়নি প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি উপাচার্য পদের নাম ও যোগ্যতা ‘গ্রান্ড মুফতি’ হচ্ছে বলেও খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এ বিশ্ববিদ্যলয়ের মান, উদ্দেশ্য, এমনকি গ্রহণযোগ্যতাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। ঠিক এমন অবস্থায় খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রাথমিক পর্যায়েই কেবল ‘গ্রান্ড মুফতি’ শব্দটি আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত হওয়া আইনে কোথাও এ কথা বলা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কাজী সালাউদ্দিন আকবর জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পদ হবে ‘উপাচার্য’। যোগ্যতাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতোই। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ বহুদূূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, সরকার এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে খুবই আন্তরিক। লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আইনটির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। উপাচার্য পদ ও যোগ্যতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের বিষয়ে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমেদ মোমতাজী জনকণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। কারণ ‘গ্রান্ড মুফতি’ নয়Ñ ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পদ হবেন ‘উপাচার্য’। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবেন। মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর বহু বছরের দাবি ও জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে কেবল মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৃথক এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনুমোদনকারী বা এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জমিয়াতুল মোদাররেছীনের মহাসচিব বলেন, সত্যি বলতে কি ইসলামের নামে এই দেশে বহু সরকার এসেছে। কিন্তু সেই সরকারগুলো ইসলাম ও মাদ্রাসার জন্য কিছুই করেনি।
গত ৬ আগস্ট ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১২ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ্যাফিলিয়েটিং শব্দটি তেমন প্রচলিত না হওয়ায় নামের ক্ষেত্রে এই শব্দটি না রাখার বিষয়ে মতামত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ কার্য সম্পাদন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা অর্থাৎ ফাজিল এবং কামিল বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ হবে ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন দেয়া, অনুমোদন বাতিল করা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা গ্রহণ, ডিগ্রী প্রদান করা। মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের পর আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। মতামত পাওয়া গেলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। তবে সরকারী কারিকুলাম অনুযায়ী না চলার কারণে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে না। দেশে কামিল এবং ফাজিল পর্যায়ের এক হাজার ৯শ’ মাদ্রাসা রয়েছে।
দেশে প্রথমবরের মতো এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সম্পর্কে জানা গেছে, মাদ্রাসা শিক্ষকদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছীন বহু বছর যাবত মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য পৃথক একটি এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে এ স্তরের শিক্ষার সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে এক হাজার মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ, মাদ্রাসাসহ ২০ হাজার ৫শ’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন, ১০০ মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা, ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালুসহ অসংখ্য কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া আছে শিক্ষার অন্যান্য ধারার মতো এবতেদায়ী ও দাখিল পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সমূহের একই সিলেবাস চালু করার উদ্যোগ। জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পৃথক একটি মাদ্রাসা অধিদফতর গঠন করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চ অর্থাৎ ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষাঙ্গনগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ এবং পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তমানে কুষ্টিয়াস্থ ইসলামীক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু একটি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ বিশাল দায়িত্ব পালন দুরূহ। সঙ্গত কারণে কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একটি অনুমোদনকারী (এ্যাফিলিয়েটিং) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। শিক্ষানীতিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে দ্রুত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান জমিয়াতুল মোদাররেছীনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী ওই সময়েই পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে তাঁদের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী এ কমিটির আহ্বায়ক করে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য, একজন উপ-উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ থাকবেন।
রাজধানী ঢাকাতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে। পাশাপাশি কোরান, হাদিস, ফিকাহ, তাজবিদ, শরিয়তসহ নানা বিষয়ের কোর্স কারিকুলাম তৈরি, পাঠদান ও ডিগ্রী দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালের আগে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার সব ধরনের ডিগ্রী দিত মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। বর্তমানে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ডিগ্রী দেয় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। আর ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী দেয় কুষ্টিয়ার বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments