জলবায়ু সম্মেলন ও বাংলাদেশ -ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে স্বীকৃতি মিললেও ক্ষতিপূরণ নগণ্য
শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। কিন্তু কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলন গোড়ায় যত আড়ম্বর ও উচ্চাশা সৃষ্টি করেছিল, শেষ দিনের ঘোষণায় সেই আশার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। পৃথিবীর জলবায়ু বাঁচাতে দরকার ছিল একটি কার্যকর চুক্তি, কিন্তু নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ সম্মেলনের শেষে পাওয়া গেল কেবল একটি মৌখিক ঘোষণা। কূটনৈতিক ভাষায় একে বলা হয় ‘নীতিগত সমঝোতা’। এতে শিল্পায়নপূর্ব সময়ের চেয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার প্রয়োজন স্বীকৃত হলেও কী পদ্ধতিতে, কবে নাগাদ তা নিশ্চিত করা হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি রাখা হয়নি। বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি সবাই স্বীকার করে নিলেও সেই অনুযায়ী কাজ করার কোনো নিশ্চয়তা বিশ্বনেতারা দেখাতে পারেননি। হতাশা লুকানোর কোনো জায়গা তাই নেই। পৃথিবীকে রক্ষার চেষ্টায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো মানবজাতি।
কোপেনহেগেনে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন ঘিরে সৃষ্টি হওয়া উচ্চাশা পূরণ না হওয়ার প্রধান কারণ, একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টানাটানি, অন্যদিকে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ভারত-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের মতৈক্য না হওয়া। ধনী দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থে ছাড় না দেওয়ায় জলবায়ু সম্মেলন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারল না। তবে সত্যিকার জলবায়ু-ঐক্য সৃষ্টির সূচনাবিন্দু হিসেবে কোপেনহেগেনকে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ বলা যাবে না। কেননা, শিল্পোন্নত দেশগুলো দুটি বিষয় প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিয়েছে—১. মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে তাদের দায় এবং ২. বিপর্যয় মোকাবিলায় দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। কার্বন নিঃসরণ বিষয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশ যে অঙ্গীকার করেছে, আশা করা যায়, আগামী বছর মেক্সিকোয় অনুষ্ঠেয় কোপ-১৬-তে কোপেনহেগেনের অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক আইনে পরিণত হবে। অভিযোজন তহবিলে আপাতত তিন বছরের জন্য প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ কমানোয় (মিটিগেশন) যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল হবে, তা চলে যাবে মূলত অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী দেশ তথা ভারত-চীন-ব্রাজিলের মতো দেশের কাছে। সুতরাং জলবায়ু-বিপন্নতার স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের ঝুলিতে আপাতত কিছু জোটেনি।
এ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্য একটিই—বিশ্বে জলবায়ু-বিপর্যস্ত দেশগুলোর শীর্ষে থাকা দেশের স্বীকৃতি। এখানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যে অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতিটি এল, তাতে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা ডুবে যাওয়া কিংবা প্রায় তিন কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার ভয় মোটেই কাটেনি, বরং আরও বেড়েছে। যদিও বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বিপত্সীমার নিচে আসার কোনো নিশ্চয়তা এ সম্মেলন সৃষ্টি করতে পারেনি; তবে এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে, সেটা কাজে লাগিয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় স্তরে সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বন্দোবস্ত করতে হবে। ক্ষতিপূরণ আদায়ের শর্ত হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে সব সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখতে হবে। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন বাংলাদেশের জনগণের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেনি। কিন্তু এ দেশের নির্বাচিত সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে জলবায়ু-বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। কোপেনহেগেন সম্মেলনের সমর্থন কাজে লাগিয়ে দেশে-বিদেশে তত্পরতা বজায় রাখার এটাই মোক্ষম সময়।
কোপেনহেগেনে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন ঘিরে সৃষ্টি হওয়া উচ্চাশা পূরণ না হওয়ার প্রধান কারণ, একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টানাটানি, অন্যদিকে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ভারত-ব্রাজিল-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের মতৈক্য না হওয়া। ধনী দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থে ছাড় না দেওয়ায় জলবায়ু সম্মেলন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারল না। তবে সত্যিকার জলবায়ু-ঐক্য সৃষ্টির সূচনাবিন্দু হিসেবে কোপেনহেগেনকে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ বলা যাবে না। কেননা, শিল্পোন্নত দেশগুলো দুটি বিষয় প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিয়েছে—১. মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে তাদের দায় এবং ২. বিপর্যয় মোকাবিলায় দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। কার্বন নিঃসরণ বিষয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশ যে অঙ্গীকার করেছে, আশা করা যায়, আগামী বছর মেক্সিকোয় অনুষ্ঠেয় কোপ-১৬-তে কোপেনহেগেনের অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক আইনে পরিণত হবে। অভিযোজন তহবিলে আপাতত তিন বছরের জন্য প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ কমানোয় (মিটিগেশন) যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল হবে, তা চলে যাবে মূলত অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী দেশ তথা ভারত-চীন-ব্রাজিলের মতো দেশের কাছে। সুতরাং জলবায়ু-বিপন্নতার স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের ঝুলিতে আপাতত কিছু জোটেনি।
এ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্য একটিই—বিশ্বে জলবায়ু-বিপর্যস্ত দেশগুলোর শীর্ষে থাকা দেশের স্বীকৃতি। এখানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যে অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতিটি এল, তাতে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা ডুবে যাওয়া কিংবা প্রায় তিন কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার ভয় মোটেই কাটেনি, বরং আরও বেড়েছে। যদিও বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বিপত্সীমার নিচে আসার কোনো নিশ্চয়তা এ সম্মেলন সৃষ্টি করতে পারেনি; তবে এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে, সেটা কাজে লাগিয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় স্তরে সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বন্দোবস্ত করতে হবে। ক্ষতিপূরণ আদায়ের শর্ত হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে সব সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখতে হবে। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন বাংলাদেশের জনগণের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেনি। কিন্তু এ দেশের নির্বাচিত সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে জলবায়ু-বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। কোপেনহেগেন সম্মেলনের সমর্থন কাজে লাগিয়ে দেশে-বিদেশে তত্পরতা বজায় রাখার এটাই মোক্ষম সময়।
No comments