ধন্য তাঁর জীবনসাধন -শ্রদ্ধাঞ্জলি by বিপ্লব বালা
‘সমাজসংস্কারক’ কথাটার কী মানে আজ? আমাদের মনে ঠিক কী বা কী কী সব অর্থ ভাব আনে, তা বলা শক্ত। সমাজ বা মানবকল্যাণ জীবনের ব্রত করেছিলেন একদিন নাকি কেউ কেউ। আমরা সে কথা আজ কতটা আর বিশ্বাস করতে বা বুঝতে পারি? এমনই নাকি হতো, স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে নেমে পড়লেন কেউ অন্য কোনো কাজে, যা কেবল নিজের জন্য নয়, সবার জন্য, সমাজের সব মানুষের জন্য।
কবি জসীমউদ্দীনের সহপাঠী ছিলেন সৈয়দ আবদুর রব। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের গেরদায়। পূর্বপুরুষ এসেছিলেন আরব থেকে। সাধক পীর ছিলেন তাঁরা। আবদুর রবের বাবা ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে ছিন্ন করেন সেই ধারা। তিনি স্কুল ইন্সপেক্টর হয়েছিলেন। ফরিদপুরের মহাগৌরব সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা অম্বিকা মজুমদারের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। তাহলে বলা যায়, আবদুর রব দেশ-সমাজ থেকেই পেয়েছিলেন অন্যতর এক দীক্ষা। বহুজন হিতায়, মানবকল্যাণ ব্রতে ব্যক্তিগত জীবন-জীবিকা ছেড়ে দেওয়া। সমমনা বন্ধুজন নিয়ে ফরিদপুরেই গঠন করেন ‘খাদেমুল এনছান’ মিশন—মানব সেবক সংঘ (১৯২৮)। আরবি শব্দের এই নামকরণে স্পষ্ট হয় তাঁর কাজের মতিগতি, ভাবনা আর চারিত্র। মুসলমান সমাজের ভেতরের একজন হয়েই তাঁকে উত্তীর্ণ করা মানবে। সাম্প্রদায়িকতার ঘেরাটোপ পার হওয়া। ইংরেজি-বাংলায় দুই হাতে লিখেছেন তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায়—এই চেতনহুঁশ ফেরাতে। ইসলাম না হয়ে ইনসানের সেবক হওয়ার অঙ্গীকারের কারণে শুরুতেই তাঁকে ছেড়ে যান নাকি কেউ কেউ।
বোঝা যায়, ‘মিশন’ কথাটা ইংরেজের কাছ থেকে পাওয়া ছিল। কাজটাকে ‘মিশন’ করার প্রণোদনা আমাদের সমাজেও তো ছিল। কোনো শুভকর্মে ‘দীক্ষা দেওয়া’ হতো ব্যষ্টি থেকে উন্নীত, উত্তীর্ণ হতেই। ‘খাদেমুল এনছান’ মিশনের কাজের তিনটি বড় ক্ষেত্র ছিল—শিক্ষা, সমাজসংস্কার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের সহায় হওয়া। দুই বাংলায় পাঁচ শতাধিক স্কুলের শাখা, প্রতিষ্ঠান গঠন, ইংরেজি ও বাংলায় দুটি পত্রিকা প্রকাশ কলকাতা থেকে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘রামকৃষ্ণ মিশন’-এর সমকক্ষতা অর্জন—বাংলা, বিহার, আসাম ও উড়িষ্যায়। মোয়াজিজন ১৩৩৫-এ ও Servant of Humanity (১৯৩৫) পত্রিকায় উপমহাদেশের অগ্রগণ্য কবি, লেখক, রাজনীতিবিদ লিখতেন নিয়মিত। রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে সুভাষ চন্দ্র, শরত্চন্দ্র, নজরুল, বেগম রোকেয়া কিংবা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, হুমায়ুন কবীর, সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল—যাকে বলে উপমহাদেশীয় সর্বভারতীয় গুণীজনের সমাবেশ ঘটেছিল। রবীন্দ্রনাথ এ মিশনের মানবব্রতকর্মের সাধুবাদে পঞ্চমুখ ছিলেন। বন্ধুস্থানীয় নজরুল তাঁর স্বভাবের স্বধর্মে সর্বদা যুক্ত ছিলেন পত্রিকায়। তখন পত্রবিনিময় ছিল কাজের ও ভাবনার অঙ্গাঙ্গিকৃত্য। উপর্যুক্ত জনের সঙ্গে নিয়মিতই হতো তাঁর পত্রালাপ। বিরাট এই কর্মযজ্ঞ কলকাতাকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হচ্ছিল। কলেজ স্ট্রিটে ছিল অফিস, যেখানে নজরুলের ছিল নিত্য যাতায়াত। ‘আদর্শ নগর’ গঠনকর্মে উল্টাডাঙ্গায় অবিভক্ত বাংলা সরকার বরাদ্দ করে সাড়ে আট বিঘা জমি। যেখানে জীবনকর্ম সম্পাদনের সমগ্রতার এক স্বপ্ন কল্পনা ডানা মেলেছিল। ’৪৬-এর দাঙ্গার ডাইরেক্ট অ্যাকশন যা গুঁড়িয়ে দেয়। শারীরিকভাবেও আহত হন তিনি। কেবল কি শরীরেই লাগে সে আঘাত? তা তো নয়। রাজনীতির কলুষিত বাস্তবতা থেঁতলে দেয় এই মানবব্রতীর অমল ধবল মনটিও যে। পরাস্ত, পর্যুদস্ত হয়ে ফরিদপুরেই ফিরে আসেন তিনি। ভাঙাচোরা মনপ্রাণ নিয়ে। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি—ভাইসরয় প্রদত্ত ‘গোল্ড মেডেল’ সমাজকর্ম সম্পাদনায় (১৯৩৭)। ইউরোপের কয়েক দেশে বক্তৃতার আমন্ত্রণ তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাতিল হয়। তত্কালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা দিয়েছিলেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব—স্বাভাবিক বিনয়ে আর কাণ্ডজ্ঞানেই তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
এই বুঝি এক রেনেসাঁ-কল্প মানবের বাস্তব আদল। শ্রেয়তর এক মানবকর্ম নীতির এষণায় যিনি ব্যক্তিগত জীবনের ন্যূনতম আর্থিক নিরাপত্তা অনিশ্চিত করেছিলেন আমৃত্যু। গোটা পরিবার পতিত হয়েছিল কঠিন কঠোর গদ্যময় দারিদ্র্যে। তবুও নত হয়নি উন্নত সে শির।
আমরা আজ তাহলে কোন বিবেচনায় শনাক্ত করতে পারি তাঁকে? বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত তাঁর জীবন কাজ, বাংলা একাডেমীর জীবনী গ্রন্থমালায়ও আছেন তিনি। তবু এই বিস্মৃত প্রত্ন ইতিহাস মানবেরে কী পরিচয়ে জেনে-বুঝে নেব আমরা? এই যে ছিলেন তিনি এহেন এক রূপকথাপ্রতিম মানব—কোথায় তাঁকে স্থান দেব আমরা আজকের এই উদরসর্বস্ব আত্মপরায়ণ বাজারকালে? বিপণন-যোগ্যতায় পরিমাপ্য যেখানে একেক সেলিব্রেটি, তা তিনি জীবিত বা মৃত যা-ই হোন না কেন। মঞ্চ-মিডিয়ায় যার উত্পাদন বিকাশ-নির্মাণ চলে, বাজারেরই নিত্য ক্রয়-বিক্রয় নিমিত্তে। সেখানে কিসের দেশ। কিসের কাল, কিসের সমাজ। চাই না যেন কোনো মানব আজ। যার থাকে এক জীবনযাপন অভিযাত্রা—ব্যক্তিগত জীবিকা উত্তীর্ণ বহুজন হিতাব্রত।
সৈয়দ আবদুর রব জন্মেছিলেন ১৯০৩ সালে। আজ তাঁর মৃত্যু দিন। তাঁকে স্মরণ থেকে যদি মেলে কোনো শরণবোধের সামান্য ভাবও।
‘মানুষের জীবনপ্রবাহে জিজ্ঞাসা সৃষ্টি এবং সত্য, সমাজ ও সাহিত্যের বিভিন্ন-পন্থী সমস্যা সমাধানমূলক এই অদ্বিতীয় সর্বজনীন মুক্তি আন্দোলন’ সূচিত করতেই একদিন খাদেমুল এনছান সমিতি প্রতিষ্ঠার এবং তাঁর মুখপত্র হিসেবে মোয়াজিজন ও Servant of Humanity প্রকাশ করা হয়। সমিতির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতি বলে ঘোষিত হয়—সেবা, শিক্ষা, সত্য ও নীতি, শান্তি ও একতা, কুসংস্কার-মোচন, স্বাস্থ্য, সংগঠন ও পত্রিকা পরিচালনা। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা-আসামে ৩২৮টি শাখা সমিতি, ২১৩টি সাহিত্য-সংস্কৃতিকেন্দ্র, ১১৫ শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পত্রিকা দুটি সর্বভারতীয় সেরা পত্রিকাসমূহের মর্যাদায় গৃহীত হতো। তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির মধ্যে ১. বাংলা সাহিত্যে ফরিদপুরের দান, ২. মহানবীর সাধনা, ৩. বিশ্ব-ভাস্কর, ৪. জীবন ও সাহিত্য, ৫. বাস্তববাদী সাহিত্য, ৬. বিশ্ব-মুসলিমের সমস্যা, ৭. ধর্ম-সাহিত্য, ৮. সাহিত্য ও সমসাময়িক সমাজচিত্র, ৯. আত্মচরিত প্রভৃতি। জীবনের এক সমগ্রতার সন্ধিত্সায় এই মানবকল্যাণব্রতী ধর্ম-সমাজ-সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। তিনি ধন্য। ধন্য তাঁর জীবনসাধন।
কবি জসীমউদ্দীনের সহপাঠী ছিলেন সৈয়দ আবদুর রব। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের গেরদায়। পূর্বপুরুষ এসেছিলেন আরব থেকে। সাধক পীর ছিলেন তাঁরা। আবদুর রবের বাবা ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে ছিন্ন করেন সেই ধারা। তিনি স্কুল ইন্সপেক্টর হয়েছিলেন। ফরিদপুরের মহাগৌরব সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা অম্বিকা মজুমদারের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। তাহলে বলা যায়, আবদুর রব দেশ-সমাজ থেকেই পেয়েছিলেন অন্যতর এক দীক্ষা। বহুজন হিতায়, মানবকল্যাণ ব্রতে ব্যক্তিগত জীবন-জীবিকা ছেড়ে দেওয়া। সমমনা বন্ধুজন নিয়ে ফরিদপুরেই গঠন করেন ‘খাদেমুল এনছান’ মিশন—মানব সেবক সংঘ (১৯২৮)। আরবি শব্দের এই নামকরণে স্পষ্ট হয় তাঁর কাজের মতিগতি, ভাবনা আর চারিত্র। মুসলমান সমাজের ভেতরের একজন হয়েই তাঁকে উত্তীর্ণ করা মানবে। সাম্প্রদায়িকতার ঘেরাটোপ পার হওয়া। ইংরেজি-বাংলায় দুই হাতে লিখেছেন তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায়—এই চেতনহুঁশ ফেরাতে। ইসলাম না হয়ে ইনসানের সেবক হওয়ার অঙ্গীকারের কারণে শুরুতেই তাঁকে ছেড়ে যান নাকি কেউ কেউ।
বোঝা যায়, ‘মিশন’ কথাটা ইংরেজের কাছ থেকে পাওয়া ছিল। কাজটাকে ‘মিশন’ করার প্রণোদনা আমাদের সমাজেও তো ছিল। কোনো শুভকর্মে ‘দীক্ষা দেওয়া’ হতো ব্যষ্টি থেকে উন্নীত, উত্তীর্ণ হতেই। ‘খাদেমুল এনছান’ মিশনের কাজের তিনটি বড় ক্ষেত্র ছিল—শিক্ষা, সমাজসংস্কার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের সহায় হওয়া। দুই বাংলায় পাঁচ শতাধিক স্কুলের শাখা, প্রতিষ্ঠান গঠন, ইংরেজি ও বাংলায় দুটি পত্রিকা প্রকাশ কলকাতা থেকে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘রামকৃষ্ণ মিশন’-এর সমকক্ষতা অর্জন—বাংলা, বিহার, আসাম ও উড়িষ্যায়। মোয়াজিজন ১৩৩৫-এ ও Servant of Humanity (১৯৩৫) পত্রিকায় উপমহাদেশের অগ্রগণ্য কবি, লেখক, রাজনীতিবিদ লিখতেন নিয়মিত। রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে সুভাষ চন্দ্র, শরত্চন্দ্র, নজরুল, বেগম রোকেয়া কিংবা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, হুমায়ুন কবীর, সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল—যাকে বলে উপমহাদেশীয় সর্বভারতীয় গুণীজনের সমাবেশ ঘটেছিল। রবীন্দ্রনাথ এ মিশনের মানবব্রতকর্মের সাধুবাদে পঞ্চমুখ ছিলেন। বন্ধুস্থানীয় নজরুল তাঁর স্বভাবের স্বধর্মে সর্বদা যুক্ত ছিলেন পত্রিকায়। তখন পত্রবিনিময় ছিল কাজের ও ভাবনার অঙ্গাঙ্গিকৃত্য। উপর্যুক্ত জনের সঙ্গে নিয়মিতই হতো তাঁর পত্রালাপ। বিরাট এই কর্মযজ্ঞ কলকাতাকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হচ্ছিল। কলেজ স্ট্রিটে ছিল অফিস, যেখানে নজরুলের ছিল নিত্য যাতায়াত। ‘আদর্শ নগর’ গঠনকর্মে উল্টাডাঙ্গায় অবিভক্ত বাংলা সরকার বরাদ্দ করে সাড়ে আট বিঘা জমি। যেখানে জীবনকর্ম সম্পাদনের সমগ্রতার এক স্বপ্ন কল্পনা ডানা মেলেছিল। ’৪৬-এর দাঙ্গার ডাইরেক্ট অ্যাকশন যা গুঁড়িয়ে দেয়। শারীরিকভাবেও আহত হন তিনি। কেবল কি শরীরেই লাগে সে আঘাত? তা তো নয়। রাজনীতির কলুষিত বাস্তবতা থেঁতলে দেয় এই মানবব্রতীর অমল ধবল মনটিও যে। পরাস্ত, পর্যুদস্ত হয়ে ফরিদপুরেই ফিরে আসেন তিনি। ভাঙাচোরা মনপ্রাণ নিয়ে। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি—ভাইসরয় প্রদত্ত ‘গোল্ড মেডেল’ সমাজকর্ম সম্পাদনায় (১৯৩৭)। ইউরোপের কয়েক দেশে বক্তৃতার আমন্ত্রণ তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাতিল হয়। তত্কালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা দিয়েছিলেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব—স্বাভাবিক বিনয়ে আর কাণ্ডজ্ঞানেই তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
এই বুঝি এক রেনেসাঁ-কল্প মানবের বাস্তব আদল। শ্রেয়তর এক মানবকর্ম নীতির এষণায় যিনি ব্যক্তিগত জীবনের ন্যূনতম আর্থিক নিরাপত্তা অনিশ্চিত করেছিলেন আমৃত্যু। গোটা পরিবার পতিত হয়েছিল কঠিন কঠোর গদ্যময় দারিদ্র্যে। তবুও নত হয়নি উন্নত সে শির।
আমরা আজ তাহলে কোন বিবেচনায় শনাক্ত করতে পারি তাঁকে? বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত তাঁর জীবন কাজ, বাংলা একাডেমীর জীবনী গ্রন্থমালায়ও আছেন তিনি। তবু এই বিস্মৃত প্রত্ন ইতিহাস মানবেরে কী পরিচয়ে জেনে-বুঝে নেব আমরা? এই যে ছিলেন তিনি এহেন এক রূপকথাপ্রতিম মানব—কোথায় তাঁকে স্থান দেব আমরা আজকের এই উদরসর্বস্ব আত্মপরায়ণ বাজারকালে? বিপণন-যোগ্যতায় পরিমাপ্য যেখানে একেক সেলিব্রেটি, তা তিনি জীবিত বা মৃত যা-ই হোন না কেন। মঞ্চ-মিডিয়ায় যার উত্পাদন বিকাশ-নির্মাণ চলে, বাজারেরই নিত্য ক্রয়-বিক্রয় নিমিত্তে। সেখানে কিসের দেশ। কিসের কাল, কিসের সমাজ। চাই না যেন কোনো মানব আজ। যার থাকে এক জীবনযাপন অভিযাত্রা—ব্যক্তিগত জীবিকা উত্তীর্ণ বহুজন হিতাব্রত।
সৈয়দ আবদুর রব জন্মেছিলেন ১৯০৩ সালে। আজ তাঁর মৃত্যু দিন। তাঁকে স্মরণ থেকে যদি মেলে কোনো শরণবোধের সামান্য ভাবও।
‘মানুষের জীবনপ্রবাহে জিজ্ঞাসা সৃষ্টি এবং সত্য, সমাজ ও সাহিত্যের বিভিন্ন-পন্থী সমস্যা সমাধানমূলক এই অদ্বিতীয় সর্বজনীন মুক্তি আন্দোলন’ সূচিত করতেই একদিন খাদেমুল এনছান সমিতি প্রতিষ্ঠার এবং তাঁর মুখপত্র হিসেবে মোয়াজিজন ও Servant of Humanity প্রকাশ করা হয়। সমিতির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতি বলে ঘোষিত হয়—সেবা, শিক্ষা, সত্য ও নীতি, শান্তি ও একতা, কুসংস্কার-মোচন, স্বাস্থ্য, সংগঠন ও পত্রিকা পরিচালনা। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা-আসামে ৩২৮টি শাখা সমিতি, ২১৩টি সাহিত্য-সংস্কৃতিকেন্দ্র, ১১৫ শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পত্রিকা দুটি সর্বভারতীয় সেরা পত্রিকাসমূহের মর্যাদায় গৃহীত হতো। তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির মধ্যে ১. বাংলা সাহিত্যে ফরিদপুরের দান, ২. মহানবীর সাধনা, ৩. বিশ্ব-ভাস্কর, ৪. জীবন ও সাহিত্য, ৫. বাস্তববাদী সাহিত্য, ৬. বিশ্ব-মুসলিমের সমস্যা, ৭. ধর্ম-সাহিত্য, ৮. সাহিত্য ও সমসাময়িক সমাজচিত্র, ৯. আত্মচরিত প্রভৃতি। জীবনের এক সমগ্রতার সন্ধিত্সায় এই মানবকল্যাণব্রতী ধর্ম-সমাজ-সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। তিনি ধন্য। ধন্য তাঁর জীবনসাধন।
No comments