আশ্বস্ত নন বিদেশীরা
বাংলাদেশে
দুই বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ার পর কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে
বাংলাদেশ। কিন্তু বিদেশীরা এতে আশ্বস্ত নন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক কূটনীতিককে
উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, ‘কোন দুর্বৃত্ত এখনও গ্রেপ্তার
হয়নি। আর হত্যাকাণ্ডগুলোরও কোন ক্লু মেলেনি। তাহলে এখানে আমাদের নিরাপত্তা
নিয়ে আমরা কিভাবে আশ্বস্ত হতে পারি। বিদেশীদের হত্যায় দায়ীদের খুঁজে বের
করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আরও বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ দেখার
প্রত্যাশা করছি।’ বাংলাদেশে অবস্থানরত ওই কূটনীতিক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে
সিনহুয়াকে এ কথা বলেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোমবার বারিধারা কূটনৈতিক
এলাকার প্রধান সড়কের চিত্র ছিল প্রায় জনমানবশূন্য। সাধারণত এ রাস্তাটা
ব্যস্ত থাকে। এদিক মানুষ বা যানবাহনের চলাচল ছিল কম। এছাড়া, ঢাকার গুলশান,
বনানী ও বারিধারার অন্যান্য কূটনৈতিক এলাকাগুলোতেও চলাচল ছিল কম। ঢাকার
কূটনৈতিক এলাকার প্রতিটি প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া,
রাজধানী ঢাকার অনেক রাস্তায় তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। একই পদক্ষেপ
নেয়া হয়েছে দেশের প্রধান অন্যান্য শহরগুলোতে। এক সপ্তাহের মধ্যে দুই বিদেশী
নাগরিক হত্যার ঘটনার পর এসব নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ড
দুটোর রহস্যের জট এখনও খোলেনি। ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা এবং জাপানি
নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন,
হত্যাকাণ্ডগুলো পরিকল্পিত এবং একই ধরনের। তিনি দাবি করেন, ‘বিরোধী দল এসব
হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের মদত থাকতে পারে আর বাংলাদেশের অগ্রগতি ম্লান
করার জন্যই তারা এটা করেছে।’ কিন্তু বিদেশীরা এতে আদৌ আশ্বস্ত নন বলে মনে
হচ্ছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক ইইউ কূটনীতিক বলেন, কোন দুর্বৃত্ত এখনও
গ্রেপ্তার হয় নি, হত্যার কোন ক্লু পাওয়া যায় নি। তাহলে আমরা কিভাবে আমাদের
নিরাপত্তা নিয়ে এখানে আশ্বস্ত হতে পারি। তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি
বাংলাদেশে ব্লগার এবং বিদেশীদের হত্যার পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করতে আমরা
বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আরও বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ দেখার প্রত্যাশা
করছি।’ একটি তল্লাশি চৌকিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা পরিচয়
গোপন রাখার শর্তে বলেন, আমরা মোটরসাইকেল চালকদের দিকে বেশি নজর রাখছি।
কেননা, উভয় বিদেশীকে মুখোশধারী হামলাকারীরা মোটরবাইকে এসে হত্যা করেছে।
অনেক মোটরসাইকেল চালক ডিএমপির চেকপোস্ট এড়িয়ে যাওয়া শুরু করেছে বলে তিনি
উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি কড়া নিরাপত্তা পদক্ষেপের
কারণে মোটরসাইকেল চালকরা অখুশি। এসব হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য আমাদের
মোটরসাইকেল চালকদের তল্লাশি ও তাদের ওপর নজর রাখতে হচ্ছে।’ কূটনৈতিক
এলাকাগুলোতে পথচারীদেরকে তল্লাশি করছে পুলিশ। এসব নিরাপত্তা পদক্ষেপে ঢাকায়
অনেকটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে, গুলশান, বারিধারা ও বনানীতে
নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলো পার হওয়ার সময় মানুষকে তাদের পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র
সঙ্গে রাখতে হবে। বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার প্রধান প্রবেশ পথে প্রহরা
দিচ্ছেন ভারী অস্ত্রে সজ্জিত নিরাপত্তা কর্মীরা। রাস্তায় চলাচলকারী
ব্যক্তিদের বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের আপাদমস্তক তল্লাশি করা হচ্ছে।
এতে কিছু মোটরসাইকেল চালক তাদের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আব্দুর রহমান
বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত মোটরসাইকেলই চালাবো না।
প্রতিটি চেকপয়েন্টে থামতে হচ্ছে আর কাগজপত্র দেখাতে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে
অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এমন জোরদার নিরাপত্তা
সমর্থন করেন তিনি। শিগগিরই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দোষীদের খুঁজে বের
করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
No comments