হিম শীতে ওম দেয়া শাল by তৌফিক অপু
পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেই দিন ফিরে আর আসবে কি কখনও? সত্যিকার অর্থেই পৌষে এক চিলতে রোদের প্রতীক্ষায় যেন দিন কাটছে। কিন্তু কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের দেখা মেলাই ভার। কনকনে হীম বাতাসে জনজীবন স্থবির হওয়ার উপক্রম।
চলছে শীত থেকে বাঁচার লড়াই। শীত নিবারণের জন্য ছুটছে গরম কাপড়ের সন্ধানে যে যার সামর্থ্য মতো, সংগ্রহ করছে শীতের পোশাক। যার প্রভাব পড়ছে শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে। আবহাওয়া ও ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোও ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। শীতের পোশাক এখন শুধু শীত নিবারণের জন্যই প্রস্তুত হয় না, শীতের পোশাক এমন রীতিমতো ফ্যাশন ট্রেন্ডের একটি অংশ। যে কারণে অনেক চিন্তা-ভাবনার সমন্বয় ঘটিয়েই প্রস্তুত করা হয় শীতের পোশাক। একটি সময় ছিল যখন মানুষ শীতের পোশাক কেনাকাটায় ডিজাইন এবং প্যাটার্নকে তেমন প্রাধান্য দিত না। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে অনেক কিছু। বেশিরভাগ ফ্যাশন আউটলেটে দেখা মিলবে ফ্যাশনেবল শীতের পোশাক। রং, রূপ এবং ডিজাইনে বেশ পরিপাটি। বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে খুবই মানানসই।সে কারণে দিন দিন কদর বাড়ছে ফ্যাশনেবল শীতের পোশাকের। ঠিক তেমনি পরিবর্তন ঘটেছে শীতের শাল বা চাদরের ক্ষেত্রেও। এক কালারের কিংবা সাদামাটা চাদরের চল দীর্ঘদিন ছিল। কিন্তু পাল্টে গেছে সেসব দৃশ্যপ্ট। চোখে পড়ার মতো ভেরিয়েশন এসেছে চাদর কিংবা শালের ক্ষেত্রে। শীতের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে শাল। চমৎকার বুনন এবং ডিজাইনে প্রস্তুত হচ্ছে নজরকাড়া শাল। শালের ভেরিয়েশেনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে পোশাকের কালারের সঙ্গে সমন্বয় অর্থাৎ পোশাকের কালারের সঙ্গে ম্যাচ করে শাল পাওয়া যাচ্ছে। যা সত্যিকার অর্থেই আকর্ষণীয়। এছাড়াও কোন ড্রেসের সঙ্গে কেমন শাল মানানসই তা নিয়েও রীতিমতো গবেষণা চলছে। আউটলেট ঘুরে দেখলেই ব্যাপারটি চোখে পড়বে। এ প্রসঙ্গে ডিজাইনার রিয়া হাসান জানান, মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। যেমন তেমন পোশাক পরে চলতে এখন আর অভ্যস্ত নয়। সেই রুচিশীলতার তাগিদে বৈচিত্র্য এসেছে ফ্যাশন ট্রেন্ডে। যে শাল শুধুমাত্র শীত নিবারণেই ব্যবহৃত হতো, কালার এবং ডিজাইন যেখানে গৌণ ছিল, ঠিক তারই উল্টো ঘটনাটি ঘটেছে এখন। অর্থাৎ শাল এখন নান্দনিক একটি বিষয়। চমৎকার ডিজাইন প্যাটার্নের ডাবল কিংবা সিঙ্গেল শাল পাওয়া যাচ্ছে। নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক শাল। গ্রামীণ ঐতিহ্যের নকশী কাঁথার কাজ দখল করে আছে শালের বড় একটি অংশ। নারী ও পুরুষভেদে শালের ডিজাইন এবং প্যাটার্ন ভেরি করে থাকে। নারীদের তুলনায় পুরুষদের শাল একটু বড় হয়ে থাকে, তবে সবচেয়ে বেশি ভেরিয়েশন চোখে পড়ে মেয়েদের শালে। এ শালগুলো আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে ডিজাইনে প্রচুর ভেরিয়েশন আনতে হয়। সমন্বয় ঘটাতে হয় রঙের সঙ্গে। যেমন কোন শাড়ির সঙ্গে কোন শাল মানাবে কিংবা জিন্স সালোয়ার কামিজের সঙ্গে কেমন শাল মানাবেÑতা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতে হয়। এবারের শালগুলোতে খাদি, চিকন এবং মোটা উল ব্যবহার করা হয়েছে। হাতে বোনা মোটা কটনের শালও রয়েছে বাজারে। এছাড়া কাশ্মীরী সিল্ক এবং দেশী সিল্কের শাল তো রয়েছেই। শালের বাজারে বড় একটা অংশ দখল করে রাখে বার্মিজ শাল। ডিজাইনের ক্ষেত্রে শাড়ির সঙ্গে ব্যবহার উপযোগী শালে ক্রিস্টাল এবং স্টোন ব্যবহার করা হয়েছে। গর্জিয়াস একেকটি শাল মিলবে ১৮০০ থেকে ৪৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া সিম্পল শালগুলো পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে। জিন্স টি-শার্ট কিংবা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে ম্যাচ করা শালে হাতের কাজ এবং এম্ব্রয়ডারির প্রাধান্য রয়েছে। পাইপিন দিয়ে বর্ডারের কাজ শালে এনেছে নতুনত্ব। পশমী কিছু শাল রয়েছে, যা দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। ওজনে খুব হাল্কা, কিন্তু বেশ গরম। সহজেই ভাঁজ করে ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়া যায়। দামও খুব বেশি নয়। ৫০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে পশমী শাল পাওয়া যাবে। কালার এবং নতুন ডিজাইনের এ শালগুলো সহজেই ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। দেশের প্রায় প্রতিটি আউটলেটেই পাওয়া যাবে ফ্যাশনেবল শাল। বর্তমান সময়ে তরুণদের কাছে শাল খুবই জনপ্রিয়। আগেকার দিনে বাড়ির মুরব্বিদের শাল ব্যবহার করতে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে তরুণদের মধ্যেও শাল ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ তো বটেই জিন্স, টি- শার্ট কিংবা শট শার্টের সঙ্গে অনায়াসে মানিয়ে যাচ্ছে ফ্যাশনেবল শালগুলো।
মডেল : তামান্না ও শিমুল
মেকআপ: পারসোনা
পোশাক : বিসর্গ
No comments