কেন এই বিদেশি?
পরদিন স্বাধীনতা কাপের ফাইনাল। কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে এসেছে ফরাশগঞ্জ। ‘মোজেস, মোজেস কই?’ কোচ মুঠোফোনে ফোন করলেন। ও প্রান্ত থেকে মোজেস জানালেন, তিনি গুলিস্তানে। ‘জলদি আসো’—কোচের নির্দেশ পেয়ে নাইজেরিয়ার ফুটবলারটি এলেন। অনুশীলনের পোশাকও তাঁর সঙ্গে ছিল না। শেষমেশ মোজেস অনুশীলন করেছেন।
দলের ঐতিহাসিক এই ফাইনালের আগের দিনও একজন বিদেশি খেলোয়াড়কে ফোন করে অনুশীলনে আনতে হয়! এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। বাংলাদেশে এখন খেলতে আসা বিদেশি ফুটবলারদের বেশির ভাগই বিচিত্র সব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। অনেকে চলেন খেয়াল-খুশিমতো। ঠিকমতো অনুশীলন করেন না। এ ক্ষেত্রে অনেক ফুটবলারের বক্তব্য, ‘টাকা-পয়সা ঠিকভাবে না পেলে খেলায় মনোযোগ দিই কীভাবে?’
যুক্তিসিদ্ধ প্রশ্ন, তবে এই ফুটবলারদের নিয়ে আবাহনীর ইরানি কোচ আলী আকবর পোরমুসলিমি গুরুতর অভিযোগই তুলছেন, ‘দু-একজন বাদে যেসব আফ্রিকান খেলোয়াড় খেলছে এ দেশে, তাদের কোনো স্কিল নেই। শারীরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে মাঠে যা খুশি করে। আমি বলব, ওরা (রেফারি এবং বিদেশি ফুটবলাররা) এ দেশের ফুটবলকে হত্যা করছে।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রায় সবাই। চলমান বাংলাদেশ লিগের শীর্ষ দল মুক্তিযোদ্ধার কোচ মারুফুল হক যেমন বলছেন, ‘আবাহনী কোচের বক্তব্যের সঙ্গে আমি অনেকাংশেই একমত। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এখন আসা আফ্রিকান ফুটবলারদের শরীর ছাড়া আসলে আর কিছুই নেই।’
সমস্যাটা হচ্ছে, এদের সংখ্যাটা বাড়ছেই। শেখ জামাল জাতীয় দলের সব খেলোয়াড় নিয়ে গেছে, তাই বিদেশি কোটা বাড়াও—ক্লাবগুলোর এই আবদার মিটিয়ে এবার গোলরক্ষকসহ বিদেশি কোটা করা হয়েছে পাঁচজন! মজার ব্যাপার, সেই শেখ জামালও পাঁচজন বিদেশি নিয়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় অনেক প্রথম সারির খেলোয়াড়কে বেঞ্চে ঠেলে এবার ১২ দলে ৫৫ জন বিদেশি নিবন্ধিত!
৯০ শতাংশই আফ্রিকান। তুলনামূলক গড়পড়তা মানে আবাহনী একটু ‘ভালো’ খেলোয়াড় আনছে। অন্য বড় দলগুলোতেও ব্রাজিলিয়ানসহ আরও দু-তিনজন তুলনামূলক ভালো ফুটবলারের দেখা মিলছে। তাঁদের কয়েকজনকে ৫ নম্বর দিলে বাকিরা পাবেন ২ নম্বর। অতিনিম্নমানের গা-জোয়ারি ফুটবল খেলছেন তাঁরাই।
কেন এই ‘নিম্নমানের’ বিদেশি? দীর্ঘ অভিজ্ঞতার শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘ভালো মানের বিদেশি স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে খেলতে আগ্রহী হবে না। তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিকও দিতে সক্ষম নই আমরা। তবে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যমানের ফুটবলার এনেই যেহেতু আমাদের ক্লাবগুলো ফল পায়, তাই তাদেরই আনে।’ যোগ করলেন আরও, ‘আবাহনী কোচের সঙ্গে আমি খানিক দ্বিমত করব। ভুলে গেলে চলবে না, এখনকার ফুটবল শরীরনির্ভরই হয়ে পড়েছে।’
যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক, অবস্থা এমন, পায়ের কারুকাজসম্পন্ন ফুটবলাররা বাংলাদেশে এসে খাপ খাওয়াতে পারেন না। সদ্য বাংলাদেশে আসা আবাহনীর ইরানি মিডফিল্ডার সেজাদির অভিজ্ঞতা শুরুতে খুবই খারাপ, ‘এ দেশে ফাউল ছাড়া আর কিছু নেই। প্রথম ম্যাচটায় চট্টগ্রাম মোহামেডানের বিদেশিরা আমার হাত-পা ভেঙে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। আমাকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে!’
অনেক দলে বিদেশিদের শৃঙ্খলার বালাই নেই। বিদেশিরা টাকা পায় না ঠিকমতো। মোহামেডানের মতো ক্লাবে বিদেশিদের টাকা নিয়ে কত কাণ্ডই না হয়েছে। তাই এরা খেপ খেলে বেড়ায়। পাশাপাশি তৈরি করে অনেক সামাজিক সমস্যা।
এই খেলোয়াড়দের নিয়েই ‘বসবাস’ করা ছাড়া উপায় দেখছেন না চট্টগ্রাম মোহামেডানের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইউসুফ। কাল কক্সবাজার থেকে ফোনে বললেন, ‘কম টাকায় নিম্নমানের বিদেশি না এনে উপায় নেই। অন্যরা আনে তাই আমরাও আনি। অন্য দলের শরীরনির্ভর বিদেশির সঙ্গে আমাদের স্থানীয়রা তো পারবে না। এদের মধ্যে ফুটবলের “ফ”-ও নেই।’
ঢাকায় খেলা বিদেশিদের অন্যতম কাজ নিজের ভালো একটা গোলের বা ম্যাচের ভিডিও জোগাড় করা, যাতে সেটি দেখিয়ে অন্য কোনো দেশে সুযোগ পাওয়া যায়। ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান এ দিকটি উল্লেখ করে সমস্যার গভীরে যেতে চাইলেন, ‘ভালো খেলোয়াড় আনতে হলে এখানে আর্থিক সংকট কাটাতে হবে। খেলার ধারাবাহিকতা রাখা চাই। সেটা তো নেই।’
তাহলে কি এভাবেই চলবে? আবাহনীর অন্যতম পরিচালক কাজী নাবিল আহমেদের উত্তর, ‘আমরা চেষ্টা করি ভালো খেলোয়াড় আনতে। আরও ভালো খেলোয়াড় আনা দরকার।’ বিদেশি খেলোয়াড়ের ব্যাপারে একটা মানদণ্ড কি করা উচিত নয়? বাফুফের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ লিগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নাবিল আহমেদ বলছেন, ‘অবশ্যই উচিত। আগামী মৌসুমে একটা মানদণ্ড করা যেতে পারে।’
এখন বিদেশিদের ব্যাপারে বাফুফে একটা ফিটনেস টেস্ট নেয়। একটা মানদণ্ড কি ঠিক করবে?
দলের ঐতিহাসিক এই ফাইনালের আগের দিনও একজন বিদেশি খেলোয়াড়কে ফোন করে অনুশীলনে আনতে হয়! এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। বাংলাদেশে এখন খেলতে আসা বিদেশি ফুটবলারদের বেশির ভাগই বিচিত্র সব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। অনেকে চলেন খেয়াল-খুশিমতো। ঠিকমতো অনুশীলন করেন না। এ ক্ষেত্রে অনেক ফুটবলারের বক্তব্য, ‘টাকা-পয়সা ঠিকভাবে না পেলে খেলায় মনোযোগ দিই কীভাবে?’
যুক্তিসিদ্ধ প্রশ্ন, তবে এই ফুটবলারদের নিয়ে আবাহনীর ইরানি কোচ আলী আকবর পোরমুসলিমি গুরুতর অভিযোগই তুলছেন, ‘দু-একজন বাদে যেসব আফ্রিকান খেলোয়াড় খেলছে এ দেশে, তাদের কোনো স্কিল নেই। শারীরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে মাঠে যা খুশি করে। আমি বলব, ওরা (রেফারি এবং বিদেশি ফুটবলাররা) এ দেশের ফুটবলকে হত্যা করছে।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রায় সবাই। চলমান বাংলাদেশ লিগের শীর্ষ দল মুক্তিযোদ্ধার কোচ মারুফুল হক যেমন বলছেন, ‘আবাহনী কোচের বক্তব্যের সঙ্গে আমি অনেকাংশেই একমত। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এখন আসা আফ্রিকান ফুটবলারদের শরীর ছাড়া আসলে আর কিছুই নেই।’
সমস্যাটা হচ্ছে, এদের সংখ্যাটা বাড়ছেই। শেখ জামাল জাতীয় দলের সব খেলোয়াড় নিয়ে গেছে, তাই বিদেশি কোটা বাড়াও—ক্লাবগুলোর এই আবদার মিটিয়ে এবার গোলরক্ষকসহ বিদেশি কোটা করা হয়েছে পাঁচজন! মজার ব্যাপার, সেই শেখ জামালও পাঁচজন বিদেশি নিয়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় অনেক প্রথম সারির খেলোয়াড়কে বেঞ্চে ঠেলে এবার ১২ দলে ৫৫ জন বিদেশি নিবন্ধিত!
৯০ শতাংশই আফ্রিকান। তুলনামূলক গড়পড়তা মানে আবাহনী একটু ‘ভালো’ খেলোয়াড় আনছে। অন্য বড় দলগুলোতেও ব্রাজিলিয়ানসহ আরও দু-তিনজন তুলনামূলক ভালো ফুটবলারের দেখা মিলছে। তাঁদের কয়েকজনকে ৫ নম্বর দিলে বাকিরা পাবেন ২ নম্বর। অতিনিম্নমানের গা-জোয়ারি ফুটবল খেলছেন তাঁরাই।
কেন এই ‘নিম্নমানের’ বিদেশি? দীর্ঘ অভিজ্ঞতার শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘ভালো মানের বিদেশি স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে খেলতে আগ্রহী হবে না। তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিকও দিতে সক্ষম নই আমরা। তবে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যমানের ফুটবলার এনেই যেহেতু আমাদের ক্লাবগুলো ফল পায়, তাই তাদেরই আনে।’ যোগ করলেন আরও, ‘আবাহনী কোচের সঙ্গে আমি খানিক দ্বিমত করব। ভুলে গেলে চলবে না, এখনকার ফুটবল শরীরনির্ভরই হয়ে পড়েছে।’
যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক, অবস্থা এমন, পায়ের কারুকাজসম্পন্ন ফুটবলাররা বাংলাদেশে এসে খাপ খাওয়াতে পারেন না। সদ্য বাংলাদেশে আসা আবাহনীর ইরানি মিডফিল্ডার সেজাদির অভিজ্ঞতা শুরুতে খুবই খারাপ, ‘এ দেশে ফাউল ছাড়া আর কিছু নেই। প্রথম ম্যাচটায় চট্টগ্রাম মোহামেডানের বিদেশিরা আমার হাত-পা ভেঙে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। আমাকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে!’
অনেক দলে বিদেশিদের শৃঙ্খলার বালাই নেই। বিদেশিরা টাকা পায় না ঠিকমতো। মোহামেডানের মতো ক্লাবে বিদেশিদের টাকা নিয়ে কত কাণ্ডই না হয়েছে। তাই এরা খেপ খেলে বেড়ায়। পাশাপাশি তৈরি করে অনেক সামাজিক সমস্যা।
এই খেলোয়াড়দের নিয়েই ‘বসবাস’ করা ছাড়া উপায় দেখছেন না চট্টগ্রাম মোহামেডানের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইউসুফ। কাল কক্সবাজার থেকে ফোনে বললেন, ‘কম টাকায় নিম্নমানের বিদেশি না এনে উপায় নেই। অন্যরা আনে তাই আমরাও আনি। অন্য দলের শরীরনির্ভর বিদেশির সঙ্গে আমাদের স্থানীয়রা তো পারবে না। এদের মধ্যে ফুটবলের “ফ”-ও নেই।’
ঢাকায় খেলা বিদেশিদের অন্যতম কাজ নিজের ভালো একটা গোলের বা ম্যাচের ভিডিও জোগাড় করা, যাতে সেটি দেখিয়ে অন্য কোনো দেশে সুযোগ পাওয়া যায়। ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান এ দিকটি উল্লেখ করে সমস্যার গভীরে যেতে চাইলেন, ‘ভালো খেলোয়াড় আনতে হলে এখানে আর্থিক সংকট কাটাতে হবে। খেলার ধারাবাহিকতা রাখা চাই। সেটা তো নেই।’
তাহলে কি এভাবেই চলবে? আবাহনীর অন্যতম পরিচালক কাজী নাবিল আহমেদের উত্তর, ‘আমরা চেষ্টা করি ভালো খেলোয়াড় আনতে। আরও ভালো খেলোয়াড় আনা দরকার।’ বিদেশি খেলোয়াড়ের ব্যাপারে একটা মানদণ্ড কি করা উচিত নয়? বাফুফের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ লিগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নাবিল আহমেদ বলছেন, ‘অবশ্যই উচিত। আগামী মৌসুমে একটা মানদণ্ড করা যেতে পারে।’
এখন বিদেশিদের ব্যাপারে বাফুফে একটা ফিটনেস টেস্ট নেয়। একটা মানদণ্ড কি ঠিক করবে?
No comments