আফ্রিকান নেশনস কাপে সংশয়ের মেঘ

আজ থেকে অ্যাঙ্গোলায় শুরু হওয়ার কথা আফ্রিকান নেশনস কাপের ২৭তম আসর। কিন্তু ১৬ দলের আফ্রিকার শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াই মাঠে গড়ানোর আগেই ঢাকা পড়ল সংশয়ের কালো মেঘে। পরশু গ্রুপ পর্বে নিজেদের ম্যাচ খেলতে কাবিন্দা প্রদেশে যাওয়ার পথে টোগোর টিমবাসে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। মেশিনগানের গুলিতে গুরুতর জখম হওয়ার পর দলের যোগাযোগ কর্মকর্তা স্তানিসলাস ওকলু এবং সহকারী কোচ আবালো আমনালেটে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দলের ৯ জন সদস্য।
আহত তালিকায় কজন ফুটবলার আছেন, তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি। তবে তাঁদের মধ্যে টোগোর দুজন ফুটবলার এবং দলের গোলকিপিং কোচ ও চিকিত্সকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফুটবলার দুজন হলেন দলের গোলকিপার কোদজোভি ওবিলালে ও ডিফেন্ডার সার্গে আকাকপো। টোগো দলের অধিনায়ক ম্যানচেস্টার সিটির তারকা স্ট্রাইকার ইমানুয়েল আদেবায়োর অবশ্য সুস্থ আছেন। এর আগে বাসচালক নিহত হয়েছেন বলে যে খবর এসেছিল, সেটি সঠিক নয় বলেও জানানো হয়েছে।
হামলার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্বাগতিক অ্যাঙ্গোলা। তার পরও আশ্বস্ত হতে পারছেন না টোগোর খেলোয়াড়েরা। এমন একটা ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হওয়ার পর তাঁরা আর এই টুর্নামেন্টে খেলতে চান না। নাইজেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দলও উদ্বেগ জানিয়েছে। যদিও কাবিন্দায় খেলা নেই যেসব দলের—তারা টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। আয়োজকেরাও টুর্নামেন্ট চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তেই অনড়।
টোগো সরকার এরই মধ্যে একটি বিশেষ প্রতিনিধিদলকে দলের সাহায্যের জন্য অ্যাঙ্গোলায় পাঠিয়েছে। কিন্তু অধিনায়ক আদেবায়োর বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হয়, দলের অনেক খেলোয়াড়ই চলে যেতে চাইছে। তারা তাদেরই এক সতীর্থের শরীরে বুলেট বিদ্ধ হতে দেখেছে চোখের সামনে। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল তারা। পরে দলের সবার সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। আমাদের ক্যারিয়ার, আমাদের জীবন আর পরিবারের জন্য যেটি ভালো হয়, সেই সিদ্ধান্তটাই নেব।’ এএফপি, ওয়েবসাইট।
হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছে কাবিন্দার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব দ্য এনক্লেভ অব কাবিন্দা (এফএলইসি)। কাবিন্দা প্রদেশটি অ্যাঙ্গোলার মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা। মাঝখানে আছে কঙ্গোর সীমানা। ৩ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট এই প্রদেশটি তেলসম্পদে সমৃদ্ধ। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এফএলইসি সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
আগামীকাল কাবিন্দাতে ঘানার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম গ্রুপ পর্বের ম্যাচ টোগোর। ওই ম্যাচ খেলতেই বাসে করে কঙ্গো থেকে তারা রওনা দিয়েছিল। কাবিন্দাতে ঢোকার মুখেই টোগো দলের বহরকে লক্ষ্য করে স্থানীয় সময় বেলা তিনটার দিকে ভারী মেশিনগানের গুলি ছোড়া হয়। এ সময় খেলোয়াড়েরা সবাই বাসের সিটের নিচে লুকিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন টমাস ডসেভি, ‘ওরা আমাদের দিকে কুকুরের মতো গুলি ছুড়ছিল। হামলাকারীদের মুখোশ পরা ছিল। সবার হাতেই ছিল ভয়ঙ্কর অস্ত্র। সিটের নিচে আমরা ২০ মিনিটের মতো পড়ে ছিলাম। এটা ছিল ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা।’
হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে এ ধরনের আরও হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে এফএলইসি। আয়োজকদের একজন অবশ্য জানিয়েছেন, বাসে করে ওই অঞ্চল পার হওয়া বিপজ্জনক। কারণ সেখানে এফএলইসির তত্পরতা ব্যাপক। তার পরও টোগো দল আয়োজকদের না জানিয়েই বাসে করে কাবিন্দায় এসেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিফাও।

No comments

Powered by Blogger.