হাজারাদের কল্যাণে এক ফরাসি দম্পতি

আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু এক সম্প্রদায়ের নাম হাজারা। নিজেদের চেঙ্গিস খানের বংশধর ভাবে তারা। দীর্ঘদিন ধরে চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার এই শিয়া মুসলিমরা। তাদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে এক ফরাসি দম্পতি।
হাজারা সম্প্রদায়ের শিশু থেকে শুরু করে নারীদের ফরাসি বেকারিপণ্য বানানো শেখাচ্ছে তারা। শেখাচ্ছে লেখাপড়া। উদ্দেশ্য, ভালো চাকরি পেতে হাজারাদের যোগ্য করে তোলা। এ জন্য ওই দম্পতি গড়ে তুলেছে একটি শিশুসেবা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং একটি ক্যাফে।
ফরাসি ওই দম্পতির নাম জ্যাক (৬১) ও অ্যারিয়েন হিরিয়াঁ। পেশায় জ্যাক ছিলেন একজন প্রকৌশলী। ১২ বছরের চাকরি শেষে ১৯৮৬ সালে অবসর নেন তিনি। এরপর শেখেন ফরাসি বেকারিপণ্য বানানোর কাজ। একসময় মধ্য এশিয়া ঘুরে বেড়ানো বুজকাশি খেলার ওপর লেখা ফরাসি লেখক জোসেফ কেসেলের অন দ্য হর্সম্যানস স্টেপস বইটি পড়েন তাঁরা। অনুপ্রাণিত হন আফগানিস্তানে যাওয়ার।
২০০০ সালে ওই দম্পতি আফগানিস্তানের কাবুলে একটি সুইস বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তখন ক্ষমতায় ছিল তালেবান সরকার। পরের বছর ৯/১১-তে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালায় আল-কায়েদা। এর দুই দিনের মধ্যে কাবুল ত্যাগ করেন তাঁরা। এক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর কিছুদিন পর আবার কাবুল ফেরেন তাঁরা। অ্যারিয়েন বলেন, ‘কাবুলে গিয়ে আমরা ভাবলাম, সত্যিকার অর্থে আমাদের কী করা উচিত।’
এক বছরের মধ্যে ওই দম্পতির ১০ বছরের একমাত্র সন্তান মারা যায়। এরপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পিছিয়ে পড়া হাজারাদের জীবনযাত্রা পাল্টাতে কাজ করবেন। সেই চিন্তা থেকেই ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি উপশহরে ল্যঁ পেলিকা নাম দিয়ে একটি ক্যাফে খোলেন। এরপর গড়ে তোলেন শিশুসেবা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রে হাজারা সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ শিশু ও নারী পড়াশোনার পাশাপাশি ফরাসি পেস্ট্রি, রুটিসহ বেকারি পণ্য বানানোর কাজ শিখছে।
অ্যারিয়েন জানান, শিশুকেন্দ্রের অনেক শিশু ভবিষ্যতের দরজায় কড়া নাড়ছে। তাঁর কেন্দ্রে সবচেয়ে ছোট প্রশিক্ষণার্থীর বয়স ছয়। সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণার্থীর বয়স ৩২ বছর।
জ্যাক বলেন, বেশির ভাগ প্রশিক্ষণার্থীর বয়স খুব কম। তারা যাতে আফগানিস্তানের পর্যটনশিল্পে কাজের জন্য দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য তাদের কাজ শেখানো হচ্ছে। যদিও ভালো চাকরি পাওয়াটা তাদের জন্য কঠিনই হবে। তাই প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রাম করে টিকে থাকার মন্ত্র শেখানো হচ্ছে তাদের।

No comments

Powered by Blogger.